হাছন রাজা : গীতিকার ও মরমী কবি

| মঙ্গলবার , ৬ ডিসেম্বর, ২০২২ at ৬:৩০ পূর্বাহ্ণ

‘লোকে বলে বলেরে, ঘর বাড়ি ভালা নায় আমার/ কি ঘর বানাইমু আমি, শূন্যের-ই মাঝার’ এই গান শোনেনি, এমন মানুষের সংখ্যা বাংলায় অনেক কম। গানের রচয়িতা হাছন রাজা। হাছন রাজা একজন মরমী কবি এবং বাউল। তিনি ১৮৫৪ সালের ২১ ডিসেম্বর সুনামগঞ্জের লক্ষণশ্রী পরগণার তেঘরিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা দেওয়ান আলী রাজা চৌধুরী এবং মাতা মোসাম্মৎ হুরমত জান বিবি। তাঁর আসল নাম ছিলো অহিদুর রেজা ওরফে দেওয়ান হাছন রেজা।

হাছনের পূর্বপুরুষের অধিবাস ছিল ভারতের উত্তর প্রদেশের অযোধ্যায়। হাছনের দাদার মৃত্যুর পর তাঁর বাবা মাতৃ এবং পিতৃবংশীয় সকল সম্পদের মালিক হন। ১৮৬৯ সালে তার পিতা আলি রেজার মৃত্যুর পর মাত্র ১৫ বছর বয়সে হাছন জমিদারীতে অভিষিক্ত হন। হাছন যৌবনে ছিলেন ভোগবিলাসী এবং সৌখিন। এই ভোগবিলাসের মাঝেও হাছন প্রচুর গান রচনা করেছেন। বাইজী দিয়ে নৃত্য এবং বাদ্যযন্ত্রসহ এসব গান গাওয়া হত। সিলেটে তখন আরবী-ফার্সির চর্চা খুব প্রবল ছিল। বহু দলিল দস্তাবেজে হাছন রাজা আরবি অক্ষরে নাম দস্তখত করেছেন- হাছন রাজা।

অধিকাংশ বিশেষজ্ঞের মতে তিনি কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা লাভ করেননি। তবে তিনি ছিলেন স্বশিক্ষিত। তিনি সহজ-সরল সুরে আঞ্চলিক ভাষায় প্রায় সহস্রাধিক গান রচনা করেন। হাছন রাজা দাপটের সঙ্গে জমিদারী চালাতে লাগলেন। কিন্তু এক আধ্যাত্নিক স্বপ্ন-দর্শন হাছন রাজার জীবন দর্শন আমূল পরিবর্তন করে দিল। হাছন রাজার মনের দুয়ার খুলে যেতে লাগলো। জমকালো পোশাক পড়া ছেড়ে দিলেন। শুধু বহির্জগত নয়, তার অন্তর্জগতেও এলো বিরাট পরিবর্তন। বিষয়-আশয়ের প্রতি তিনি নিরাসক্ত হয়ে উঠলেন। তার মনের মধ্যে এলো এক ধরনের উদাসীনতা। এক ধরনের বৈরাগ্য। সাধারণ মানুষের খোঁজ-খবর নেয়া হয়ে উঠলো তার প্রতিদিনের কাজ। আর সকল কাজের উপর ছিল গান রচনা। তিনি আল্লাহ্‌র প্রেমে মগ্ন হলেন। তিনি কত গান রচনা করেছেন তার সঠিক হিসাব পাওয়া যায়নি।

‘হাছন উদাস’ গ্রন্থে তার ২০৬ টি গান সংকলিত হয়েছে। এর বাইরে আর কিছু গান ‘হাছন রাজার তিনপুরুষ’ এবং ‘আল ইসলাহ্‌’ সহ বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। শোনা যায়, হাছন রাজার উত্তরপুরুষের কাছে তার গানের পাণ্ডুলিপি আছে। অনুমান করা চলে, তার অনেক গান এখনো সিলেট-সুনামগঞ্জের লোকের মুখে মুখে আছে, কালের নিয়মে বেশ কিছু গান বিলুপ্ত হয়ে গেছে। পদ্যছন্দে রচিত হাছনের অপর গ্রন্থ ‘শৌখিন বাহার’। ‘হাছন বাহার’ নামে তার আর একটি গ্রন্থ কিছুকাল পূর্বে আবিষ্কৃত হয়েছে। হাছন রাজার আর কিছু হিন্দী গানেরও সন্ধান পাওয়া যায়। হাছন রাজা ১৯২২ সালের ৬ ডিসেম্বর মৃত্যুবরণ করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধতৃতীয় বিভাগ ফুটবল লিগ আজ শুরু
পরবর্তী নিবন্ধকল্লোল সংঘের ট্রাউজার উন্মোচন অনুষ্ঠান