হল্যান্ড থেকে

বিকাশ চৌধুরী বড়ুয়া | শনিবার , ৫ মার্চ, ২০২২ at ৮:১৬ পূর্বাহ্ণ

ডেভিড বনাম গোলায়েৎ-এর একটি কল্প-কাহিনী আছে বাইবেলে। নয় ফুট উঁচু বিশালাকার গোলায়েৎ গর্ব করে বলতেন তাকে ইসরায়েলীয় সেনাবাহিনীর কোন সৈনিক পরাজিত করতে পারবে না। কেউ তার মুখোমুখি হতে সাহস করেনি, একমাত্র ডেভিড ছাড়া। ডেভিড ছিলেন সাধারণ এক মেষপালক-বালক, ঈশ্বরে যার ছিল দৃঢ় বিশ্বাস। তিনি বললেন, ‘যে প্রভু আমাকে সিংহ এবং ভাল্লুকের থাবা থেকে উদ্ধার করেছেন, তিনি আমাকে এই দানবের হাত থেকে উদ্ধার করবেন।’ রাজা শৌল ডেভিডকে তলোয়ার এবং বর্ম দিয়ে সজ্জিত করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ডেভিড রাজার এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে বলেন, ‘তার শক্তি ঈশ্বরের কাছ থেকে এসেছে, অস্ত্র থেকে নয়।’ যুদ্ধক্ষেত্রে তিনি যা নিয়ে এসেছিলেন তা ছিল একটি গুলতি এবং একটি পাথর। ডেভিডের নিপুণভাবে ছুঁড়ে মারা পাথর মাথায় লাগলে বিশালদেহী গোলায়েতের মৃত্যু হয়।
প্রবল পরাক্রমশালী রাষ্ট্র রাশিয়ার আগ্রাসন এবং সামরিক শক্তিতে তুলনামূলকভাবে দুর্বল কিন্তু মনোবলে ডেভিডের মত দৃঢ় ইউক্রেনের প্রতিরোধ ও পাল্টা আক্রমণ ‘ডেভিড বনাম গোলায়েতের’ লড়াইয়ের কথা মনে করিয়ে দেয়। কোথায় রাশিয়া আর কোথায় ইউক্রেন! অনেকের মতো রাশিয়াও ধরে নিয়েছিল বড় জোর ২৪ থেকে ৪৮ ঘন্টা। তেমন কোন প্রতিরোধ ছাড়াই রুশ সামরিক ট্যাংকের বহর ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে প্রবেশ করতে সক্ষম হবে, পতন হবে ইউক্রেনের। কিন্তু তেমনটি ঘটেনি। ইতিমধ্যে এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেছে। ইউক্রেন অবাক করা মনোবল আর সাহস নিয়ে বিশাল রাশিয়াকে এখনো মোকাবেলা করে চলেছে। যদিওবা কতদিন তারা রুশ সেনাবাহিনীকে ঠেকিয়ে রাখতে পারবে সেটি নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়ে গেছে। তবে যে বিষয়টি আবারো স্পষ্ট হয়ে দেখা দিলো তা হলো, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বিশ্বের কাছে আবারো প্রমান করলেন যে তিনি গণতন্ত্রের খুব একটা পরোয়া করেন না, আন্তর্জাতিক নীতিমালার প্রতি তার বিন্দুমাত্র শ্রদ্ধাবোধ নেই। কথাটা এই কারণে বলা, রাশিয়ার রাজনীতিতে তিনি কোন প্রতিদ্বন্দ্বীকে দাঁড়াতে দেননি। হয় তাদের মিথ্যে, সাজানো মামলা দিয়ে জেলে ভরেছেন, নয়তো গুম বা হত্যা করেছেন। আমরা দেখেছি কীভাবে পুতিন বিরোধী নেতা আলেঙাই নাভালিনকে বিষ খাইয়ে মারতে চেয়েছিলেন এবং চিকিৎসা শেষে তিনি (নাভালনি) যখন জার্মানি থেকে দেশে ফিরেন পুতিন তাকে অন্যায়ভাবে জেলে ভরেন। মোটকথা তার সমালোচনায় যারা সোচ্চার হয়েছে তাদের কণ্ঠরোধ করেছেন রুশ গোয়েন্দা বাহিনী কেজিবির এক সময়কার এজেন্ট আজকের প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
ইউক্রেন আক্রমণ করবেন সে পুতিনের অনেক দিনের পরিকপ্লনা, তা ইউক্রেনের উপদ্বীপ ক্রিমিয়া দখলের নেবার পর থেকে। এতদিন ক্ষেত্র তৈরি করেছেন। একথা-ওকথা বলে নিজ দেশের জনগণসহ বিশ্ব জনগোষ্ঠীকে বোকা বানাতে চেয়েছেন। ‘ইউক্রেন আক্রমণ করার আমাদের কোন পরিকল্পনা নেই’ বারবার তার এমন আশ্বাসবাণীতে কারো আস্থা ছিল না। এবং দেখা গেল এই আশ্বাসবাণী উচ্চারণের দিন কয়েকের মাথায় তার নিরাপত্তা পরিষদের ‘মিডিয়া শো মিটিং’ করে তিনি ইউক্রেন আক্রমণ করে বসলেন। ইউক্রেন আক্রমন করার পর বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ধিক্কার উঠে এবং পুতিনের এই আগ্রাসন বন্ধ করার লক্ষ্যে, রাশিয়ার অর্থনৈতিক মেরুদণ্ড ভেঙে দেবার জন্যে তাবৎ বিধিনিষেধ ইতিমধ্যে আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ন্যাটোসহ পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলি। এমন কী নিরপেক্ষ দেশ হিসাবে পরিচিত সুইজারল্যান্ডও তার নিরপেক্ষ-চরিত্র থেকে সরে এসে রাশিয়ার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করে। যে জার্মানি কয়লা, গ্যাস ও তেলের জন্যে রাশিয়ার উপর নির্ভর, সেই দেশও সমস্যা হবে মাথায় রেখে ঘোষণা দিল রাশিয়ার সাথে সমস্ত চুক্তি বাতিল করার। আন্তর্জাতিক খেলাধুলার অঙ্গনেও একঘরে করা হলো রাশিয়াকে। ফিফা সহ সমস্ত আন্তর্জাতিক সংগঠন খেলাধুলা থেকে রুশ টিমকে বাদ দিলো। পুতিন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী সহ তার নিকট বিক্তবান বন্ধুদের পশ্চিমে অবাঞ্চিত ঘোষণা করা হলো। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের আকাশে রুশ বিমান চলাচল নিষিদ্ধ করা হলো। অবস্থা বর্তমানে এখন দাঁড়ালো, একমাত্র প্রতিবেশী রাষ্ট্র বেলেরুশ ছাড়া রাশিয়ার পাশে আর কেউ রইলো না। এবং সে দেশেও রয়েছে আর এক ‘ডিক্টেটর’ আলেক্সজান্ডার লুকাশেঙ্কো। গোটা বিশ্ব পুতিনের সমালোচনা ও নিন্দা করলেও ব্যতিক্রম রইলো চীন। চীন সরাসরি সমর্থন না জানালেও রাশিয়ার এই আগ্রাসনের প্রতিবাদ বা নিন্দা করলো না। উল্টো বললো, অর্থনৈতিক অবরোধ দিয়ে সমস্যা সমাধান না হয়ে সংকট আরো ঘনীভূত হতে পারে। চীনের এমন অবস্থানে অবশ্য কেউ অবাক হয়নি। কেননা চীন ঘাপটি মেরে পর্যবেক্ষণ করছে ঘটনার মোড় কোনদিকে গড়ায় তা দেখার জন্যে। রাশিয়া যদি আমেরিকা ও পশ্চিমা শক্তির বিরুদ্ধে গিয়ে ইউক্রেন নিজ দখলে নিতে পারে, তাহলে চীনকে যে তাইওয়ানের ক্ষেত্রে একই পদ্দক্ষেপ নিতে উৎসাহিত করবে তাতে কোন সন্দেহ নেই।
আমরা যারা এশিয়া অঞ্চলে রয়েছি অনেকের কৌতূহল ইউক্রেন পরিস্থিতিকে ঘিরে রাশিয়ার অত্যন্ত বন্ধু ও বিশ্বস্তভাজন রাষ্ট্র ভারতের অবস্থান কি তা জানার জন্যে। ইউক্রেনকে ঘিরে এমন উদ্ভুত পরিস্থিতিতে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ভারত যে খুব একটা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছে না তা সহজে অনুমেয়। দু-দেশের সম্পর্ক এত দীর্ঘ দিনের ও এত গভীর যে হুট্‌ করে নয়া দিল্লি তার অবস্থান পরিবর্তন করবে তেমনটি আশা করা যায় না। ফলে যাতে ‘সাপও মরে, লাঠিও না ভাঙে’ এই কৌশল অবলম্বন করে নয়া দিল্লী সংকট সমাধানের জন্যে সংলাপের প্রস্তাব করে। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ভারত আঞ্চলিক অখন্ডতা সম্পর্কে বক্তব্য রেখে পরোক্ষভাবে ইউক্রেনের দুর্দশার কথা তুলে ধরে এবং রাশিয়ার আগ্রাসনের প্রস্তাবের বিরুদ্ধে জাতিসংঘের গৃহীত ভোটে অংশগ্রহণ না করে ভোটদানে বিরত থাকে। ভারসাম্য বজায় রাখার জন্যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির পাশাপাশি, রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের সাথে ইতিমধ্যে কথা বলেছেন। কথা বলেছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্কর যুক্তরাষ্ট্রে মার্কিন কর্মকর্তাদের সাথেও। একই অবস্থান পাকিস্তানেরও। দীর্ঘদিনের বিশ্বস্ত বন্ধু যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ‘ব্ল্যাংক চেক’ না পাওয়ায় অভিমান ও গোস্‌সা হয়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে কিছুটা সরে গিয়ে পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বেশ কিছু সময় ধরে রাশিয়ার ‘গুড বুকে’ থাকার যে চেষ্টা করছেন সে সবার জানা এবং যেদিন রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করে খুব সম্ভবত সেদিন তিনি (খান) রাশিয়া সফর করেন। সঙ্গত কারণেই পাকিস্তান রাশিয়ার সমালোচনা করতে পারে না এবং করেনি। অন্যদিকে পাকিস্তান ইউক্রেনকেও ছাড়তে পারে না। কেননা কাশ্মীর ইস্যু সহ নানা সময় ইউক্রেন পাকিস্তানের পক্ষ নিয়েছে এবং ইউক্রেন ৬৫০ মিলিয়ন ডলারের টি-৮০ ট্যাংক পাকিস্তানের কাছে বিক্রি করেছে। বাংলাদেশকে ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক হামলার প্রতিবাদে ও নিন্দায় জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ডাকা জরুরি বৈঠকে নিরপেক্ষ অবস্থান নিতে দেখা গেছে। বাংলাদেশ জাতিসংঘ মহাসচিবের নেতৃত্বে সংলাপের মাধ্যমে সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধানের ওপর জোর দেয়। পাশাপাশি জাতিসংঘ সনদে বর্ণিত সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় অখণ্ডতার নীতির প্রতি সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করে বাংলাদেশ। তবে ইউক্রেন ইস্যুতে কে কী করলো, কে কার পক্ষ নিলো তা আমলে না নিয়ে ন্যাটোভুক্ত ইউরোপীয় দেশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং যুক্তরাষ্ট্র এককাট্টা হয়ে রাশিয়াকে অর্থনৈতিকভাবে কাবু করার লক্ষ্যে নানা অর্থনৈতিক অবরোধের ঘোষণা দেয়। তার নেতিবাচক প্রভাব হয়তো এখনই পাওয়া যাবে না, তবে কিছুদিনের মধ্যে যে দেখা যাবে তা অনেকটা নিশ্চিত।
প্রশ্ন- রাশিয়া এমন কর্মটি করলো কেন? রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, প্রেসিডেন্ট পুতিন তার হিসাবে ভুল করেছিলেন। তিনি ইউক্রেনের সামরিক শক্তি ও ইউক্রেনবাসীর মনোবলকে ‘আন্ডার এস্টিমেইট’ করেছিলেন। তিনি ধরে নিয়েছিলেন বছর কয়েক আগে ইউক্রেনের উপদ্বীপ ক্রিমিয়া যত সহজে নিজ দখলে নিয়েছিলেন তেমনিভাবে ইউক্রেনকেও নিজ আয়ত্বে নিতে পারবেন। কেবল তিনিই যে এমন হিসাব করেছিলেন তা নয়। দিন কয়েক আগে রুশ-সরকার নিয়ন্ত্রিত বার্তা সংস্থা এই মর্মে আগাম সংবাদ প্রকাশ করে যে, ‘ইউক্রেন রাশিয়ার কাছে ফিরে এসেছে।’ ওই আর্টিকেল আরো লিখেছে, ‘রাশিয়ার জনগণের বিভক্তির সময় শেষ হতে চলেছে। ইউরোপীয় রাজধানী প্যারিস এবং বার্লিনের কেউ কি বিশ্বাস করেছিল যে মস্কো কিয়েভকে ছেড়ে দেবে? যে রাশিয়ানরা চিরতরে বিভক্ত জাতি হিসাবে থাকবে?’ বাস্তব চিত্র যখন দেখা গেল ভিন্ন, তখন ওই নিবন্ধ তড়িঘড়ি করে ওয়েবসাইট থেকে সরিয়ে ফেলা হয়। যে কথা বলছিলাম, রাশিয়া কেন ইউক্রেন আক্রমন করলো? রাশিয়া শুরু থেকে বলে আসছে ইউক্রেন দখলে নেয়ার তাদের কোন পরিকল্পনা নেই। কথাটি সত্যি। কেননা তাদের লক্ষ্য পশ্চিমা-মুখী ইউক্রেন সরকারকে ক্ষমতা থেকে হটিয়ে প্রো-রাশিয়া কোন একজনকে ক্ষমতায় বসানো, অর্থাৎ একটি ‘পুতুল সরকার’ প্রতিস্থাপন। যে পুতুল সরকার তাদের জন্যে কোন হুমকি হয়ে দাঁড়াবে না, যে সরকার তাদের পরামর্শে ও তাদের আদর্শে চলবে। একটু পিছু ফিরে তাকালে আমরা রাশিয়ার উদ্বেগ ও শঙ্কার কারণটা উপলদ্ধি করতে পারি। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর এর অধীনে থাকা এক একটি অঞ্চল স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে আত্মপ্রকাশ করতে শুরু করে। তখন পুতিন ক্রেমলিনের ক্ষমতার সামনের সারিতে আসেননি। শুরুতে কমুনিস্ট রাষ্ট্র পোল্যান্ড, হাঙ্গেরি, চেক রিপাবলিক, বুলগেরিয়া, রুমানিয়া যুক্তরাষ্ট্র ও পচিম ইউরোপের সামরিক শক্তি ‘ন্যাটোর’ সদস্যপদ লাভ করে। এরপর ধীরে ধীরে রাশিয়াকে ঘিরে থাকা ছোট ছোট দেশগুলিও ‘ন্যাটোর’ সদস্যপদ লাভ করে। দেশগুলির মধ্যে রয়েছে এস্তোনিয়া, লাটভিয়া, লিথুনিয়া, স্লোভাকিয়া, কোরেশিয়া ও স্লোভেনিয়া। সব মিলিয়ে ৩০টি স্বাধীন রাষ্ট্র নিয়ে পূর্ব ইউরোপেও ন্যাটো বড় শক্তি হিসাবে আত্মপ্রকাশ লাভ করে। ন্যাটোর নীতিমালায় উল্লেখ রয়েছে যে, কোন বহিঃশত্রু দেশ যদি ন্যাটো-ভুক্ত কোন দেশ আক্রমন করে তাহলে তা ন্যাটোভুক্ত দেশগুলির উপর আক্রমণ হিসাবে বিবেচিত হবে এবং সে ক্ষেত্রে ন্যাটো-ভুক্ত এলাকাকে রক্ষার জন্যে ন্যাটো সব ধরণের পদক্ষেপ নেবে। ওই অঞ্চলে কেবল বেলেরুশ রইলো রাশিয়ার বন্ধু হিসাবে। বাকি রইলো রাশিয়া লাগোয়া বিশাল দেশ ইউক্রেন, যা এক সময় সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত ছিল। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর ১৯৯১ সালে ইউক্রেন রাশিয়া থেকে বেরিয়ে এসে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে এবং দেশটি পশ্চিম ইউরোপের সাথে সু-সম্পর্ক গড়ে তোলে, যা ভাবিয়ে তোলে পুতিনকে। রাশিয়া শুরু থেকে দাবি করে আসছিল ইউক্রেনকে কিছুতেই ন্যাটোর সদস্য হতে দেয়া যাবে না। রাশিয়ার ভয়, ঘরের পাশেই যদি এই বিশাল দেশটিও রাশিয়ার দিকে মিসাইল তাক করে রাখে, তাহলে সেটি হবে তার নিরাপত্তার জন্যে হুমকি এবং সে হুমকি মোকাবেলা করা কঠিন হয়ে পড়বে। সে সুযোগ যাতে না পায় সে কারণে আগ বাড়িয়ে রাশিয়া অন্যায়ভাবে এগিয়ে গেলো ইউক্রেন আক্রমণে।
ইউক্রেন দখলের আর একটি যুক্তি দেখিয়েছেন প্রেসিডেন্ট পুতিন, যা নিতান্তই হাস্যকর। তিনি দাবী করেন, ইউক্রেনের আজকের যে উন্নয়ন তার পেছনে ছিল রাশিয়ার অবদান। হয়তো সত্যি। কিন্তু তিনি যখন বলেন, ‘যেহেতু ইউক্রেন এক সময় আমাদের (রাশিয়া) ছিল, সেই কারণে তা ফিরে নেবার অধিকার আমাদের আছে’ সেটি কি হাসির উদ্রেক করে না? তেমন যদি হয় তাহলে বৃটেন দাবি করতে পারে, ভারত এক সময় আমাদের ছিল, ফিরিয়ে নেব, কিংবা পাকিস্তান দাবি করতে পারে, বাংলাদেশ আমাদের ছিল একাত্তরের আগ পর্যন্ত, ফিরিয়ে নেব। হল্যান্ড দাবি করতে পারে ইন্দোনেশিয়া আমাদের অধীনে ছিল অতএব। এমন আরো অনেক উদাহরণ রয়েছে। শেষ কথা, যুদ্ধ অসম হলেও এখনো চলছে। ফলাফল, নিরীহ ইউক্রেনবাসীর মৃত্যু (এই লেখা পর্যন্ত দুই হাজারের বেশি ইউক্রেন নাগরিকের প্রাণহানি হয়েছে), ধ্বংস হচ্ছে ঘর-বাড়ি, সরকারি ভবন, সড়ক, ব্রিজ, ইউনিভার্সিটি ভবন, জীবনের ভয়ে নারী-পুরুষ-শিশু-বয়স্কের কাফেলা পার্শ্ববর্তী দেশগুলিতে, শরণার্থী হয়ে। রাশিয়া ফেলছে বোমা, ছুঁড়ছে মিসাইল, ক্লাস্টার বোমা, অন্যদিকে আমেরিকা সহ পশ্চিমা-ইউরোপীয় দেশগুলি আরোপ করছে একটি পর একটি অর্থনৈতিক অবরোধ। ভয় হয় দু-পক্ষের এই আক্রমন ও অবরোধ, মাঝে ইউক্রেন, না জানি শেষ মেষ তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দিকে মোড় নেয়। এই স্নায়ুরোপ ইতিমধ্যে দেখেছে দুটি বিশ্বযুদ্ধে। শুরুতে উল্লেখ করেছিলাম ‘ডেভিড বনাম গোলিয়াতের’ অসম লড়াইয়ের কথা। তাতে দুর্বল ডেভিডের জয় হয়েছিল, দানব গোলিয়াতের হয়েছিল পরাজয়। ইউক্রেন-রাশিয়ার এই অসম যুদ্ধে মানবরূপী দানব পুতিনের পরাজয় হয়তো হবে না, যদি তা না হয় তাহলে পরাজয় হবে গণতন্ত্র ও মানবতার।
লেখক : প্রাবন্ধিক, কলামিস্ট

পূর্ববর্তী নিবন্ধসুরসম্রাজ্ঞী-মর্মস্পর্শী গানের শিল্পী গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাখ্যায়
পরবর্তী নিবন্ধমুক্তিযুদ্ধে শিল্পী সমাজ