হকারদের দখলে ফুটপাত, ঈদের কেনাকাটায় দুর্ভোগ

প্রতি বছর একই সমস্যার পুনরাবৃত্তি, শুধুমাত্র উচ্ছেদ অভিযান নয়, হকারদের পুনর্বাসনের উদ্যোগই স্বস্তি দিতে পারে নগরবাসীকে

হাসান আকবর | শুক্রবার , ১৪ মার্চ, ২০২৫ at ৫:৪৪ পূর্বাহ্ণ

ঈদের কেনাকাটা জমজমাট হয়ে উঠার পাশাপাশি নগরীর ফুটপাতগুলোর বেহাল দশায় বাড়ছে নাগরিক দুর্ভোগ। শহরের প্রধান ফুটপাতগুলো পুরোপুরি চলে যাচ্ছে হকারদের দখলে। বিপণি বিতানগুলোতে ঈদের কেনাকাটায় ক্রেতাদের ভিড় বাড়লেও অবৈধ দখলের কারণে ফুটপাত দিয়ে হাঁটতে গিয়ে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। বিশেষ করে রেয়াজুদ্দিনবাজার, টেরিবাজার, চকবাজার, বহদ্দারহাট, জুবলী রোড, আগ্রাবাদ ও ইপিজেড এলাকার ফুটপাতে অবৈধভাবে বসানো দোকানপাট এবং হকারদের দখলে পথচারীরা স্বাভাবিকভাবে চলাচল করতে পারছেন না।

ফুটপাত অবৈধ দখলে চলে যাওয়ায় যানজটও ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। ফুটপাতে জায়গা না পেয়ে ঈদের কেনাকাটায় পথে নামা মানুষ রাস্তায় নেমে হাঁটতে বাধ্য হচ্ছেন। নগরবাসীর অভিযোগ, প্রতি বছর ঈদের আগে এমন অবস্থা তৈরি হয়, কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয় না।

ফুটপাত দখলকারীদের মধ্যে অনেকেই ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, যারা ঈদ মৌসুমে সাময়িক দোকান বসিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। তাদের দাবি, তারা নিরুপায় হয়ে ফুটপাতে ব্যবসা করছেন, কারণ ভাড়া দোকানে বসলে খরচ বেশি পড়ে। অন্যদিকে, ক্রেতা ও পথচারীরা বলছেন, ফুটপাতে হাঁটার জায়গা না থাকায় প্রতিনিয়ত ধাক্কাধাক্কির শিকার হতে হচ্ছে। চকবাজারে কেনাকাটা করতে আসা এক ক্রেতা বলেন, ফুটপাত দিয়ে হাঁটা তো দূরের কথা, ঠিকমতো দাঁড়ানোও যাচ্ছে না। রাস্তায় নামলে গাড়ির ধাক্কার ভয়, আর ফুটপাতে উঠলে হকারদের ঠেলাঠেলি। ঈদের কেনাকাটা করতে এসে এখন জীবন নিয়ে টেনশন করতে হচ্ছে। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, ঈদের সময় যাতে ফুটপাত চলাচলের উপযোগী থাকে, সে জন্য অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবে এসব অভিযানের স্থায়ী কোনো প্রভাব পড়ছে না।

চসিকের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমরা নিয়মিত হকার উচ্ছেদ অভিযান চালাই, কিন্তু কিছুক্ষণ পরই তারা আবার এসে বসে। ফুটপাতে বসা হকারদের কাছ থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায় করে প্রভাবশালী মহল তাদের সুরক্ষা দিচ্ছে। নগরীর বিভিন্ন এলাকার ফুটপাত থেকে প্রতিদিনই মোটা অংকের চাঁদা তোলা হচ্ছে। বিভিন্ন মহলের নামে তোলা হয় চাঁদা। চাঁদা দিয়ে ফুটপাত দখলকারীরা পথচারী এবং ক্রেতাদের সাথে বেপরোয়া আচরণ করে। নগরীর বিভিন্ন এলাকায় পথচারীদের সাথে দখলদারদের বিচ্ছিন্ন বিক্ষিপ্ত অপ্রীতিকর ঘটনা অনেকটা প্রাত্যহিক হয়ে উঠেছে। ভুক্তভোগীদের দাবি, শুধু উচ্ছেদ অভিযানই যথেষ্ট নয়, বরং হকারদের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে তারা ফুটপাত ছেড়ে নির্দিষ্ট মার্কেট বা নির্ধারিত জায়গায় ব্যবসা করতে পারেন।

প্রতি বছর একই সমস্যার পুনরাবৃত্তি হলেও এখনো কার্যকর ও দীর্ঘমেয়াদি সমাধান হয়নি। নগর পরিকল্পনাবিদদের মতে, শুধুমাত্র উচ্ছেদ অভিযান নয়, বরং হকারদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ নিলে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব। অন্যথায়, বছরজুড়ে চলে আসা অনিয়ম ঈদের মৌসুমে জনদুর্ভোগের অন্যতম প্রধান কারণ হয়ে উঠা ঠেকানো যাবে না। তারা, প্রশাসনের সমন্বিত উদ্যোগই কেবল এই দুর্ভোগ থেকে নগরবাসীকে নিস্তার দিতে পারে বলেও মন্তব্য করেছেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ২৬ মার্চ চীন যাচ্ছেন ইউনূস, শির সঙ্গে বৈঠক ২৮ মার্চ
পরবর্তী নিবন্ধ৭৮৬