স্যানিটেশন ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণের জন্য সুয়্যারেজ প্রকল্প বাস্তবায়ন জরুরি

| রবিবার , ১২ মার্চ, ২০২৩ at ৬:০৫ পূর্বাহ্ণ

অবশেষে সুয়্যারেজ সিস্টেমের বিষয়ে চট্টগ্রামবাসীর দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা পূরণ হতে চলেছে। দৈনিক আজাদীতে গত ১৪ মার্চ প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা যায়, প্রায় চার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রাম মহানগরীকে পরিকল্পিত স্যুয়ারেজ সিস্টেমের আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে। শুরু হয়েছে প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ। পুরো নগরীকে ছয়ভাগে ভাগ করে প্রথম পর্যায়ে অন্তত বিশ লাখ মানুষকে স্যুয়ারেজ সিস্টেমের আওতায় আনার লক্ষ্যে কাজ শুরু করেছে চট্টগ্রাম ওয়াসা। হালিশহরের ১৬৩ একর ভূমির উপর দুইটি সর্বাধুনিক ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট স্থাপন এবং প্রায় ২০০ কিলোমিটার পাইপ নেটওয়ার্কের মাধ্যমে স্যুয়েরেজ সিস্টেম গড়ে তোলা হচ্ছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়নে নগরবাসীর সম্পৃক্ততা খুবই ঘনিষ্ঠ হওয়ায় জনসচেতনতা বাড়ানোর উপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।

ওয়াসার এক সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, বর্তমানে নগরীতে প্রতিদিন প্রায় ২৮৮ মিলিয়ন লিটার বর্জ্য পানি নিঃসৃত হয়ে নদীতে পড়ছে। ২০৩০ সালে এর পরিমাণ প্রতিদিন ৫১৫ মিলিয়ন লিটার হবে। এছাড়া নগরীতে প্রতিদিন প্রায় ৫৩৯ ঘনমিটার ফিক্যাল স্ল্যাজ সেপটিক ট্যাংকে জমা হচ্ছে যা আগামী ২০৩০ সাল নাগাদ প্রতিদিন প্রায় ৭১৫ ঘনমিটার হবে। ফলে নদীর পানি প্রতিনিয়ত দূষিত হচ্ছে যা সার্বিক ভাবে চট্টগ্রামের পরিবেশ দূষণ করছে এবং ভবিষ্যতে চট্টগ্রাম মহানগরীতে সুপেয় পানি সরবরাহে সংকট সৃষ্টির শংকা রয়েছে। পরিকল্পিত কোনো স্যুয়েরেজ সিস্টেম গড়ে না ওঠায় বছরের পর বছর ধরে টয়লেটের বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় চট্টগ্রাম মহানগরী শূন্যের কোটায় রয়েছে। যা ঘুরে ফিরে উন্মুক্ত মলমূত্র ত্যাগের মতো অবস্থা সৃষ্টি করছে বলেও বিশেষজ্ঞ সূত্রগুলো জানিয়েছে।

পত্রিকান্তরে প্রকাশিত তথ্যে বলা হয়, ‘সুয়্যারেজে ঢাকা থেকে ১০৩ বছর পিছিয়ে চট্টগ্রাম। ঢাকা ওয়াসা ১৯৬৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হলেও ঢাকায় সুয়্যারেজ সিস্টেম চালু হয় ১৯২৩ সালে। ৫০ কিলোমিটার পাইপলাইনের মাধ্যমে তারা এই সুয়্যারেজ প্রকল্প চালু করেছিল। পরবর্তীতে ১৯৭৭ সালে ব্যাপকহারে সুয়্যারেজ সিস্টেম চালু করে ঢাকা ওয়াসা। এখন পর্যন্ত ঢাকার ২০ শতাংশ এলাকা সুয়্যারেজের আওতায় এসেছে। কিন্তু দেশের দ্বিতীয় প্রধান নগরী চট্টগ্রামে ১৯৬৩ সালে ওয়াসা প্রতিষ্ঠিত হলেও দীর্ঘ ৫৯ বছর সুয়্যারেজ নিয়ে অন্ধকারেই ছিল চট্টগ্রাম।’

বিশেষজ্ঞদের মতে, আমাদের সুয়্যারেজ ব্যবস্থা না থাকাতে নদী ও খাল দূষিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। কিছু ক্ষেত্রে সুয়্যারেজের লাইনের সাথে পানির লাইন এক হয়ে দূষণ ছড়াচ্ছে। বস্তি ও প্রান্তিক বহু এলাকায় সুয়্যারেজ এর চরম ঘাটতি ও পানির অপ্রাপ্যতার সমস্যা বিদ্যমান। দেশের সকল জনগোষ্ঠীর জন্য স্বাস্থ্যসম্মত পয়ঃনিষ্কাশন ও নিরাপদ পানি নিশ্চিত করতে হবে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য। পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী বিশেষত দুর্গম উপকূলীয় অঞ্চল, চর, হাওর, পাহাড়ি এলাকা, শহরের বস্তিবাসী, দরিদ্র জনগোষ্ঠীসহ নিম্ন আয়ের সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীদের প্রতি বিশেষ প্রাধান্য দিয়ে চাহিদা অনুযায়ী দ্রুতগতিতে সবাইকে নিরাপদ পানি ও পয়ঃনিষ্কাশনের আওতায় আনতে হবে। ২০৩০ এর মধ্যে এসডিজি অর্জনের কঠিন পথ পাড়ি দিতে নিরাপদ পানি ও পয়ঃনিষ্কাশনের গুণ ও পরিমাণগত মান নিয়ে কাজ করা প্রয়োজন। ওয়াসার পানির গুণগত মান নিশ্চিতকরণ ও পাইপ নেটওয়ার্কও খতিয়ে দেখা জরুরি। সিটি করপোরেশনের এলাকার বিশাল জনগোষ্ঠীকে পানি সরবরাহ, পয়ঃনিষ্কাশন এবং ড্রেনেজ সেবা প্রদানে ওয়াসা’র সীমিত সম্পদ ও প্রযুক্তি সত্ত্বেও অদম্য প্রচেষ্টা চলমান। তবুও আরো মনিটরিং পূর্বক সকলের জন্য নিরাপদ পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন নিশ্চিতে ওয়াসাকে প্রাগ্রসর ভূমিকা রাখতে হবে। নিরাপদ পানি, পয়ঃনিষ্কাশন খাতে অর্থায়ন ঘাটতি কমিয়ে আনাও জরুরি। সর্বোপরি পরিবেশবান্ধব, টেকসই পানি ব্যবস্থাপনা ও স্বাস্থ্যসম্মত পয়ঃনিষ্কাশনের জন্য সরকারিবেসরকারি বিনিয়োগ অপরিহার্য।

প্রকল্প পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার আরিফুল ইসলামের বক্তব্য প্রকাশিত হয়েছে প্রতিবেদনে। তিনি জানান, পানি সরবরাহ নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার চেয়ে স্যুয়েরেজ নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা অনেক কঠিন। চট্টগ্রামে স্যুয়েরেজ সিস্টেমের প্রকল্প বাস্তবায়ন চট্টগ্রাম ওয়াসার জন্য একটি অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। পানির পাইপ যেখানে রাস্তা আছে সেখানে ১ দশমিক ২ মিটার বা ৪ ফুট গভীরে স্থাপন করলে হয়ে যায়। কিন্তু স্যুয়েরেজের পাইপ বসাতে হবে সর্বোচ্চ ১২ মিটার বা চল্লিশ ফুটেরও বেশি নিচে। পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় পাইপের স্তর ঠিক রাখতে নগরীর কোনও কোনও এলাকায় চল্লিশ ফুট মাটি খুঁড়েই পাইপ স্থাপন করতে হবে। এটা না করলে বর্জ্য পাইপের পরিবর্তে ম্যানহোল দিয়ে উপরে উঠে আসবে।

একটি আধুনিক ও হেলদি সিটির জন্য সুপেয় পানি ও আধুনিক স্যানিটেশন ব্যবস্থা অপরিহার্য। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম চট্টগ্রাম নগরীর জন্য সুপেয় পানি নিশ্চিতে চট্টগ্রাম ওয়াসা অগ্রগামী হলেও স্যানিটেশনে পিছিয়ে। সেই স্যানিটেশন ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণের জন্য সুয়্যারেজ প্রকল্প বাস্তবায়ন অত্যাবশ্যক।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে