স্যানডর ডায়ালাইসিস কর্তৃপক্ষসহ ১২ জনের প্রতি হাইকোর্টের রুল

অবহেলায় রোগী মৃত্যুর অভিযোগ

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ৩ এপ্রিল, ২০২৩ at ৪:৫৭ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিচতলায় অবস্থিত স্যানডর ডায়ালাইসিস সার্ভিসেস বাংলাদেশ প্রাইভেট লিমিটেডে গত বছরের ৫ জুন সাফিয়া খানম (৬০) নামে একজন কিডনী রোগীর মৃত্যু হয়। পরিবারের অভিযোগ ওই প্রতিষ্ঠানের ডাক্তার রেহনুমার চিকিৎসাজনিত অবহেলা, স্বেচ্ছাচারিতা এবং মেডিকেল শিক্ষার চরম পরিপন্থী আচরণের কারণে মৃত্যুর ঘটনাটি ঘটে। এ অভিযোগের বিষয়ে হাইকোর্ট বেঞ্চ স্যানডর ডায়ালাইসিস কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট ১২ জনের প্রতি রুল জারি করেছেন।

রোগীর স্বামী এম.. মাসুদ অভিযোগ করেন যে, তাঁর স্ত্রী সাফিয়া খানমকে স্যানডর ডায়ালাইসিস সেন্টারে সেদিন ডায়ালাইসিস করাতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেখানে তাঁর শ্বাসকষ্টজনিত অস্বস্তি দেখা দিলে উক্ত ডায়ালাইসিস সেন্টারের ডাক্তার রেহনুমা রোগীর অক্সিজেন মাস্ক খুলে ফেলেন এবং রোগীর শয্যা পাশে উপস্থিত স্বজনদেরকে রোগীকে অন্য কোনও হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেন। স্বজনদের তীব্র প্রতিবাদ সত্ত্বেও তীব্র শ্বাসকষ্টে ভোগা একজন রোগীর অক্সিজেন মাস্ক খুলে চরম অমানবিক ও পৈশাচিকভাবে রোগীকে জোরপূর্বক হুইল চেয়ারে বসিয়ে ডায়ালাইসিস সেন্টার থেকে বের করে দেন ডাক্তার রেহনুমা ও ওই প্রতিষ্ঠানের কয়েকজন স্টাফ। রোগীকে ডায়ালাইসিস সেন্টারের বাইরে বের করে দেওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি হুইল চেয়ারেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। এই বিষয়ে তদন্তের জন্য স্বাস্থ্য উপপরিচালক, চট্টগ্রাম বিভাগ এবং বিভাগীয় প্রধান, নেফ্রোলজি বিভাগ, চমেক হাসপাতালকে সভাপতি করে দুইটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয় এবং তদন্ত হয়। কিন্তু এই

দুই তদন্ত কমিটির রিপোর্ট আলোর মুখ দেখেনি। সর্বশেষ গত বছর ২১ আগস্ট স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালককে সভাপতি, চমেক হাসপাতালের উপপরিচালক ও নেফ্রোলজি বিভাগের প্রধানকে সদস্য করে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয় এবং কমিটিকে সাতদিনের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়। তদন্ত কমিটি সাত দিনের স্থলে পাঁচ মাসে তদন্ত সম্পন্ন করে গত ১ জানুয়ারি তদন্ত রিপোর্ট, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবরে পাঠায়। নিহতের স্বামী এম.. মাসুদ তথ্য অধিকার আইনের ৩ ধারা মোতাবেক এই তদন্তের একটি কপি পাওয়ার জন্য তথ্য কমিশনের নির্ধারিত ফরমে তদন্ত কমিটির সভাপতির কাছে

আবেদন করলে তিনি তা দিতে অস্বীকৃতি জানান।

রিট আবেদনকারীর পক্ষে এডভোকেট সাজ্জাদুর রহমান জানান, নিহতের স্বামী বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট ডিভিশনে একটি রিট আবেদন দাখিল করেন। গত ২১ মার্চ হাইকোর্ট ডিভিশনের বিচারপতি কে.এম. কামরুল কাদের এবং বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ রিট আবেদনের শুনানি করেন এবং স্বাস্থ্য সচিব, মহাপরিচালক, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, ঢাকা, পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, ঢাকা), চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক, সিভিল সার্জন, চট্টগ্রাম, পরিচালকচট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, প্রিন্সিপালচট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ, চমেক হাসপাতালের নেফ্রোলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান, স্যানডর ডায়ালাইসিস কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং ডা. রেহনুমা বরাবরে রুলনিশি জারি করেন।

আদালত স্যানডরের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ডা. রেহনুমার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে ১০ জন বিবাদীর নিষ্ক্রিয়তা ও ব্যর্থতা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না এবং ১২ জন বিবাদীর সকলকে কেন কারণ দর্শানের নির্দেশ দেওয়া হবে না এই মর্মে মাননীয় আদালতের নির্দেশ পাওয়ার ৪ সপ্তাহের মধ্যে কারণ দর্শাতে বিবাদীদের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন। আদালত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে গঠিত তদন্ত কমিটির তদন্ত রিপোর্ট আদেশ প্রাপ্তির ৬০ দিনের মধ্যে আদালতে দাখিল করার জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককেও নির্দেশনা দিয়েছেন।

রিট আবেদনকারীর পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন এডভোকেট সাজ্জাদুর রহমান এবং বিবাদীদের পক্ষে ছিলেন ডেপুটি এটর্নি জেনারেল এবিএম আবদুল্লাহ আল মাহমুদ, সহকারী এটর্নি জেনারেল আশিক রুবায়েত, আওলাদ হোসেন, আশিকুল হক, মেহেদী হাসান ও জুলফিকার আখতার।

পূর্ববর্তী নিবন্ধনয়টি খালে পড়ছে চসিকের ১৪ ডাস্টবিনের আবর্জনা
পরবর্তী নিবন্ধচান্দগাঁও কাপ্তাই সড়ক থেকে পাঁচ শতাধিক ভাসমান দোকান উচ্ছেদ