স্যানডর ডায়ালাইসিসের অবহেলায় বৃদ্ধার মৃত্যুর অভিযোগ স্বজনদের

সংবাদ সম্মেলনে দাবি

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ১৬ জুন, ২০২২ at ৮:৩৪ পূর্বাহ্ণ

নগরীর ‘স্যানডর ডায়ালাইসিস সার্ভিসেস বাংলাদেশ’ প্রাইভেট লিমিটেডের অবহেলা এবং মেডিকেল শিক্ষার চরম পরিপন্থী আচরণের কারণে সাফিয়া খানম (৬০) নামে এক বৃদ্ধার মৃত্যুর অভিযোগ তুলেছেন ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা। তাদের দাবি টেকনিশিয়ান কর্তৃক ডায়ালাইসিস করানো এবং ডায়ালাইসিস শেষে ডা. রেহনুমা রোগীর মুখ থেকে অঙিজেন মাস্ক খুলে ফেলার কারণে সাফিয়া খানমের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল বুধবার দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের এস রহমান হলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ করেন তারা। তাদের দাবি, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ভবনের নীচ তলায় প্রধান প্রবেশ পথের এই ডায়ালাইসিস কেন্দ্রে ভুল চিকিৎসায় সাফিয়া খানমের মৃত্যু হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে নিহতের স্বামী এম. এ মাসুদ ও ছেলে তানভীর আহমেদ জানান, গত ৫ জুন রাতে ডায়ালাইসিসের জন্য সাফিয়া খানমকে নিয়ে ডায়ালাইসিস কেন্দ্রে উপস্থিত হওয়ার পর স্যানডর কর্তৃপক্ষের ডাক্তার রেহনুমা, নার্স-টেকনিশিয়ানরা রোগী এবং রোগীর সাথে থাকা আত্মীয়দের সাথে দুর্ব্যবহার করে এবং রোগীকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়।
নিহতের স্বামী এম এ মাসুদ বলেন, গত ৫ জুন রাত আনুমানিক নয়টার দিকে আমার ছেলে তার মাকে নিয়ে সেখানে যায়। রাত ১০টা বিশ মিনিটে তাকে ডায়ালাইসিসের বেডে শোয়ানো হয়। এর আগে যতবার ডায়ালাইসিস করানো হয়েছিল ততবার মহিলা নার্স দিয়ে ডায়ালাইসিস করানো হতো। কিন্তু সেদিন জয় নামের এক পুরুষ টেকনিশিয়ান দিয়ে ডায়ালাইসিস শুরু করা হয়। আমার স্ত্রী ও ছেলে সেদিন মহিলা নার্সের মাধ্যমে ডায়ালাইসিস করানোর জন্য বারবার অনুরোধ করলেও তাতে কর্ণপাত না করে উল্টো দায়িত্বরত নার্স, টেকনিশিয়ানরা রূঢ় আচরণ করে তাদের সাথে। ১৫ থেকে ২০ মিনিট পর আমার স্ত্রীর প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। এ অবস্থায় আমার ছেলে তানভীর আহমেদ তার মায়ের শ্বাসকষ্টের কথা অবহিত করলে ডাক্তার রেহনুমা ধমক দিয়ে বলেন, রোগীকে যে রক্ত দিতে হবে তা আপনারা জানেন না? যান রক্ত জোগাড় করে আনুন। সেদিন সীতাকুণ্ডে কন্টেনার ডিপোতে অগ্নি দুর্ঘটনায় আহতদের জন্য রক্ত দিতে আসা গাউছিয়া কমিটির লোকজন তাদের সংগৃহিত রক্ত থেকে এক ব্যাগ রক্ত আমার স্ত্রীর জন্য দেন। তারা রক্ত নিয়ে ১০/১৫ মিনিটের মধ্যে ডায়ালাইসিস সেন্টারে এসে ডাক্তার রেহনুমাকে রক্ত জোগাড় হওয়ার কথা অবহিত করলে ডাক্তার রেহনুমা বলেন, ‘রোগীকে এখানে ডায়ালাইসিস দেওয়া সম্ভব নয়, উনাকে অন্য কোনো হাসপাতালে নিয়ে যান। উনার অঙিজেন স্যাচুরেশন ৭২, আমি রিস্ক নিতে পারবো না। ডা. রেহনুমার এই হঠকারী সিদ্ধান্তে জোরালো সমর্থন দেন উপস্থিত নার্স ও টেকনিশিয়ানগণ।
তিনি বলেন, শুধু তাই নয় ডায়ালাইসিস শেষে রোগীর মুখ থেকে অঙিজেন মাস্ক খুলে নেওয়া হয়। এমনকি হুইল চেয়ারে বসিয়ে বাইরে নিয়ে যেতে উপস্থিত নার্সদের নির্দেশ দেন। শ্বাসকষ্টজনিত রোগে ভুগছেন এমন একজন রোগীকে কিভাবে অঙিজেন মাস্ক ছাড়া নিয়ে যেতে বলছেন, জানতে চাইলে ডা. রেহনুমা খুব রেগে যান। পরে অঙিজেনের অভাবে হুইল চেয়ারেই তার মৃত্যু হয়। রোগীর এই মৃত্যুকে হত্যাকাণ্ড হিসেবে দাবি করে স্যানডর কর্তৃপক্ষ এবং ডাক্তার রেহনুমার বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানায় তার পরিবার। স্যানডর কর্তৃপক্ষের সাথে চমেক কর্তৃপক্ষের চুক্তি বাতিল করে এই ডায়ালাইসিস কেন্দ্রটি চমেকের কিডনি বিভাগের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার জন্য দাবি জানান প্রয়াত রোগীর স্বামী এম এ মাসুদ। স্যানডর কর্তৃপক্ষকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ মারফত ১০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ আদায়ের মাধ্যমে ওই টাকা কিডনি রোগীদের কল্যাণে ব্যয় করার জন্য আহ্বান জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনের এক পর্যায়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন নিহতের স্বজনরা। তারা প্রধানমন্ত্রী, স্বাস্থ্যমন্ত্রী, ডিজি হেলথ, পুলিশের মহাপরিদর্শক, বিএমএ, স্বাচিপ, চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জনসহ সকলের প্রতি এই ঘটনার বিষয়ে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান।

পূর্ববর্তী নিবন্ধজরিমানা ও বকেয়াসহ ২ লাখ ৩৬ হাজার টাকা আদায়
পরবর্তী নিবন্ধডিজিটাল জনশুমারির ফল জানা যাবে তিন মাসে