স্বল্প খরচ ও টেকসই নির্মাণে ফখরিসের কনক্রিট ব্লক

বাড়ছে পরিবেশবান্ধব ইটের ব্যবহার

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ at ৭:৪৬ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়েছে। সেসাথে হয়ে উঠেছে পরিবেশ সচেতন। সবকিছুতে চায় পরিবেশবান্ধব। ক্রমবর্ধমান চাহিদার কারণে দেশীয় নির্মাণসামগ্রীর ওপর নির্ভরশীলতা বাড়ছে। আর সেই তালিকায় নতুন সংযোজন কনক্রিট ইট। আমাদের সনাতনী ইট নির্মাণ হয় জমির উপরিভাগের মাটি দিয়ে, যেই মাটি ফসলের জন্য উর্বর। তা নির্মাণে পোড়ানো হয় কাঠ। ফলে একদিকে অক্সিজেন উৎপাদক গাছ কমে যাচ্ছে, অন্যদিকে ইটের ভাটা থেকে বিষাক্ত কার্বন গ্যাস ছড়িয়ে পড়ছে বাতাসে।
পরিবেশ ও জলবায়ুর কথা বিবেচনা করে বাংলাদেশ সরকার ও পরিবেশ অধিদপ্তর ইটের বিকল্প হিসেবে কনক্রিট ব্লক ব্যবহারে উৎসাহিত করছেন। আর পরিবেশবাদীরা সনাতনী সব ইটভাটা বন্ধের দাবি তুলেছে। তাহলে ঘর-বাড়ি নির্মাণের উপায় কি? অন্যতম উপায় কনক্রিট ব্লক দিয়ে স্থাপনা নির্মাণ। ফখরিস গ্রিন বিল্ডিং রিসোর্সেস লিমিটেড নিয়ে এল অত্যাধুনিক কনক্রিট ব্লক। ফখরিসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হোসাইনী তাহের ফখরী দৈনিক আজাদীকে জানান, ‘কনক্রিট ব্লক অধিক পরিবেশবান্ধব। পোড়া ইটের বিকল্প হিসেবে কনক্রিট ব্লক অনেক বেশি কার্যকর, সাশ্রয়ী, টেকসইও। নানা ধরনের ব্লক আমরা তৈরি করছি। তম্মধ্যে-কনক্রিট হলো ব্লক, পেভার ব্লক অন্যতম। পরিবেশ সুরক্ষা, টেকসই উন্নয়ন এবং খরচ সাশ্রয় করতে হলে গুণগত মানের হলো ব্লক বা কনক্রিট ব্লকের বিকল্প নেই। পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি নিয়ে মানুষের আগ্রহ বাড়ছে। আমরাও এ জন্য এ খাতে বিনিয়োগ করেছি। উৎপাদনের শুরু থেকেই আমরা বিভিন্ন কারখানা ও সরকারি উন্নয়ন প্রকল্প থেকে সাড়া পাচ্ছি।’ পরিবেশের ওপর ইটভাটার বিরূপ প্রভাবের কথা বিবেচনা করে এবং পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও উন্নয়নের স্বার্থে নানা প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ সাধিত হয়েছে। এখন প্রধানত দুই পদ্ধতিতে ইট উৎপাদন করা হয়ে থাকে। একটি পুড়িয়ে, অন্যটি না পুড়িয়ে। এ ছাড়া উভয় পদ্ধতিতে কম কাঁচামাল ব্যবহার করে ফাঁপা ইট প্রস্তুত করা সম্ভব। না পোড়ানো ইটের ক্ষেত্রে বালু, সিমেন্ট, ফ্লাই অ্যাশ, জিপসাম ইত্যাদির মিশ্রণে ফোমিং এজেন্টের সাহায্যে জমাট বাঁধিয়ে ইট প্রস্তুত করা হয়। না পোড়ানো ইটের প্রধান সুফলগুলো হলো, এ ক্ষেত্রে মাটি ব্যবহার করা হয় না, দূষণকারী কয়লা বা অন্য কোনো জ্বালানি পোড়ানো হয় না এবং এতে পানির ব্যবহারও পোড়ানো ইটের তুলনায় অনেক কম।
বাংলাদেশে ইট প্রস্তুতের উন্নততর প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে বাধাগুলো হচ্ছে আধুনিক প্রযুক্তি সম্পর্কে সচেতনতা ও গ্রহণযোগ্যতার অভাব, ফাঁপা ও না পোড়ানো ইটের সীমিত চাহিদা, দেশীয় প্রয়োজনে ভাটার ডিজাইন ও অভিযোজনের আবশ্যকতা, ইটভাটার শ্রমিকদের প্রশিক্ষণের অভাব, উচ্চমাত্রার আর্থিক বিনিয়োগ, নীতিগত, আর্থিক এবং শুল্ক ও করবিষয়ক প্রণোদনার অভাব। এর ফলে আইনগত বিধিবিধান থাকা সত্ত্বেও পরিবেশদূষণকারী ইটভাটাগুলোর আধুনিকায়ন সম্ভব হয়নি। এখন ভবন ও সীমানাদেয়াল নির্মাণে পোড়ামাটির ইটের পরিবর্তে কনক্রিট ইট বা কনক্রিট হলো ব্লকের ব্যবহার জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। দেরিতে হলেও চট্টগ্রামে এই খাতে বিনিয়োগ বাড়ছে। সাধারণ পোড়ামাটির ইটের পরিবর্তে কনক্রিট ইট পরিবেশবান্ধব, নোনারোধী ও খরচসাশ্রয়ী হওয়ায় এই নির্মাণের এই উপকরণ নিয়ে আশাবাদী উদ্যোক্তারা।
২০২০ সালে চট্টগ্রামের ফৌজদারহাটে পরিবেশবান্ধব নির্মাণের প্রত্যয় নিয়ে যাত্রা শুরু করে ফখরিস গ্রিন বিল্ডিং রিসোর্স লিমিটেড। কনক্রিট ব্লক, কনক্রিট ব্রিকসের মাধ্যমে চট্টগ্রামে নির্মাণে নতুন সংযোজন নিয়ে আসে বাঁশখালী পাওয়ার প্ল্যান্ট, মহেশখালী পাওয়ার প্ল্যান্ট, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পে ও স্থানীয় আবাসন প্রকল্পে।
সেই ১৯৪৮ সাল থেকে অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য ও সুপরিচিত প্রতিষ্ঠান ফখরিস। আধুনিক বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে পরিবেশবান্ধব, দৃষ্টিনন্দন, স্বল্পখরচ ও টেকসই কাঠামো নির্মাণে ফখরিসই বাংলাদেশে সর্বপ্রথম। তারা এখন তৈরি করছে কনক্রিট ব্লক। যা অত্যাধুনিক জার্মান প্রযুক্তির অটোমেশিনে বিভিন্ন ডিজাইনের, রংয়ের কনক্রিট পেভার ব্ল্লক, ভাঙনরোধী ব্লক। বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের কনক্রিটের ব্লক ব্যবহার করা হয়ে থাকে, এগুলোর সাইজেও রয়েছে ভিন্নতা।
ইটভাটাগুলো আধুনিকায়ন করা হলে একটি দূষণমুক্ত পরিবেশ পাওয়া যাবে। এই পরিপ্রেক্ষিতে সনাতনী পন্থার পরিবর্তে আধুনিক বৈজ্ঞানিক ইট উৎপাদন পদ্ধতির প্রসারের লক্ষ্যে অর্থমন্ত্রীর ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেটে ১০০ কোটি টাকার থোক বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব নিঃসন্দেহে একটি সময়োচিত পদক্ষেপ।
কনক্রিট ব্লক বা কনক্রিট ব্রিকস ব্যবহারের জন্য সংশ্লিষ্ট প্রস্তুতকারক ও নির্মাণশ্রমিকদের কারিগরি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। কনক্রিট ব্লক বা কনক্রিট ব্রিকস বাড়াতে বিল্ডিং কোড, গণপূর্ত বিভাগ, স্থানীয় সরকারের প্রকৌশল বিভাগ, রাজউক, সিডিএ, কউক, ফ্যাসিলিটিজ ডিপার্টমেন্ট প্রভৃতির দর তালিকায় কনক্রিট ব্লক বা কনক্রিট ব্রিকস আকার-আকৃতি, গুণগত মান ও মূল্য সন্নিবেশ করতে পারে, কনক্রিট ব্লক বা কনক্রিট ব্রিকস এবং এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ, এক স্থানে সব সেবা (ওয়ান-স্টপ সার্ভিস) এবং ইটবিষয়ক নতুন গবেষণার জন্য একটি উপযুক্ত সরকারি সংস্থা ব্রিকস সেন্টার প্রতিষ্ঠা করা। কনক্রিট ব্লক বা কনক্রিট ব্রিকসের ওপর আরোপিত ভ্যাটের বৈষম্য দূর করতে হবে। কনক্রিট ব্লক বা কনক্রিট ব্রিকস প্রস্তুত করার ক্ষেত্রে স্বল্প সুদে ঋণসুবিধা চালু করা যেতে পারে। স্বল্প বিনিয়োগ, শ্রমঘন ও কম দূষণকারী হওয়ার কারণে আধুনিক প্রযুক্তি এ ক্ষেত্রে বিশেষ বিবেচনার দাবি রাখে। দূষণ হ্রাসকারী প্রযুক্তি স্থাপন করে একে আরও কার্যকর করা যেতে পারে। উদ্যোক্তারা সরকার থেকে পর্যাপ্ত সুবিধা পেলে এর দাম কমানো সম্ভব বলে জানান। সরকারি উন্নয়ন প্রকল্পে পরিবেশবান্ধব উপকরণ ব্যবহার নিশ্চিত করা গেলে দূষণ সৃষ্টিকারী ক্ষতিকর নির্মাণপণ্যের ব্যবহার হ্রাস পাবে। ‘বর্তমান সরকারের রূপকল্পে সহায়ক হতে পারে কনক্রিট ব্লক। সরকারের বেশকিছু মেগা প্রজেক্ট বাস্তবায়নাধীন। আরো অনেক প্রজেক্ট সরকারের হাতে রয়েছে। মীরসরাইয়ে বাস্তবায়নাধীন বঙ্গবন্ধু শিল্প জোনসহ অন্যান্য প্রজেক্টে কনক্রিট ব্লকের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করলে এই খাতে বিনিয়োগ আরো বাড়বে। ডিজিটাল বাংলাদেশে নির্মাণশৈলীও হতে হবে প্রযুক্তিনির্ভর’ -এমনটি মনে করেন ফখরিসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হোসাইনী তাহের ফখরী। এজন্য প্রয়োজন কার্যকর পদক্ষেপ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবাঘমারা বাজারে আগুনে পুড়েছে ১৫ দোকান
পরবর্তী নিবন্ধ‘মাদার অব ডেমোক্রেসি’ সম্মাননা পেয়েছেন খালেদা