হঠাৎ মাঝামাঝি একটা বয়সে এসে মেয়েদের আবার মনটা কেমন চঞ্চল হয়ে ওঠে। বার বার পুরোনো দিনের কথা মনে পড়ে। কত কিছু হারিয়ে ফেলা নিয়ে বেশ আফসোস হয়। তখন সংসারে, সন্তানের দিকে মনোযোগ আর শতভাগ থাকে না।
মন কেমন আনচান করে একা থাকার জন্য, সকলকে ছেড়ে, নদী, সমুদ্রে, পাহাড়ে ঘুরতে ইচ্ছে করে। অথবা বেশ স্বাধীনতা পেতে মন ছটফট করে। স্বাধীনভাবে পোশাকে–আশাকে, চাল–চলনে, কেমন যেন কৈশোরের আনন্দ উচ্ছ্বল দিনে ফিরে যেতে ইচ্ছে করে।
আসলে বয়ঃসন্ধিকাল কি শুধু একবার আসে?
না। ত্রিশ থেকে পঁয়ত্রিশ বছরে আবার বয়ঃসন্ধিকালের আভাস দেখা দিতে থাকে। এই সময়ে কৈশোরের কাজগুলোই আবার করতে ইচ্ছে করে। অথচ এতদিন যে স্বামী সন্তান নিয়ে বেশ গুছিয়ে সংসার করছিলো সব কেমন যেন পানসে লাগতে শুরু করে। মনের ভেতরে হিসেবের খাতা খুলে তখন আগের ভুল করা কাজ, হিসেব নিকেশ, প্রিয় কিছু মুখ, সিন্ধান্ত নিতে না পারার জন্য নিজেকে তিরস্কার আর বারবার তখনের আনন্দগুলোর কথাই বারবার ভেসে ওঠে। কত প্রিয় মুখ চোখের সামনে ভেসে বেড়ায়। বিশেষ একজন থাকলে তার কথা আবার ভাবতে ইচ্ছে করে।
শাড়ি ছেড়ে, টপস বা জিন্স শার্ট পড়তে ইচ্ছে করে, ১৫ বছর বয়সীদের মতো এলো চুলে, রাস্তায় আইসক্রিম খেতে খেতে গল্প করে হেঁটে বা রিকশায় করে ঘুরে বেড়াতে ইচ্ছে করে। পূর্ণিমার রাতে জ্যোৎস্না দেখা, হৈ চৈ করতে করতে সকলের সাথে ফুচকা খাওয়া, কেমন যেন আবার দুরন্তপনায় ফিরে যাওয়ার জন্য মন ছটফট করতে থাকে।
আসলে এটা শুধু যে মেয়েদের বেলায় হয়, তা কিন্তু নয়, এটা ছেলেদেরও ৩৮–৪০ বছর এর পরে এরকম হয়।
মানুষ আসলে এক নিয়মে, একিই রকম করে বেশিদিন চলতে পারে না। সবারই কিছু পরিবর্তন প্রয়োজন। কিন্তু বেশিরভাগ মানুষ এসব স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে পারে না। এই সময়গুলোতে স্বামী স্ত্রী একজন আরেকজনের বন্ধু হয়ে আবার নতুন করে প্রেমে পড়া উচিত। বাইরের জগত থেকে নিজেকে ফিরিয়ে আনার ও ভালো থাকার একমাত্র পথ হলো দুজনের ভালো গুণগুলোর কথা ভাবা।
আসলে জীবনের মাঝে একঘেয়েমি আসে বার বার। আর সেটা আমরা নিজেরাই নিজেদের পছন্দ ও একটু পরিবর্তনের হাওয়া দিয়ে ময়লা ধুলো উড়িয়ে দেয়ার মতো করে উড়িয়ে দিয়ে সব আবার নতুনের মতো চকচকে করে নিতে পারি।
তাই বারবার আসুক বয়ঃসন্ধিকাল আমরা নবীন হতে চাই বারংবার। স্বপ্ন দেখতে চাই প্রিয়জনকে নিয়ে, প্রিয়জনের হাতে হাত রেখে। স্বপ্নে রঙিন হয়ে উঠুক জীবন।