স্বপ্ন দেখায়, পথ দেখায়

লায়ন্স স্কলারশিপ ট্রাস্ট বৃত্তি

| রবিবার , ১৩ মার্চ, ২০২২ at ১০:৪২ পূর্বাহ্ণ

পকেটের শেষ কড়ি খরচ করে ডাল-ভাজি দিয়ে দুপুরের খাবার খেয়ে তৃপ্তির ঢেঁকুর তোলার পরিবর্তে চোখে-মুখে অন্ধকার দেখছিল হাসিবুল হোসাইন। পরদিনই ফরম ফিলাপের ডেট দেয়া হয়েছে। অথচ হাতে একটি কানাকড়িও নেই। টাকা দেয়ারও কেউ নেই। চারপাশ অন্ধকার ঠেকছিল তার কাছে। ঠিক এমনই সময় মোবাইলে ম্যাসেজ আসে ব্যাংক থেকে। হাসিবুলের একাউন্টে টাকা জমা হয়েছে। লায়ন্স স্কলারশিপ ট্রাস্টের টাকা। যেই টাকা দিয়ে পরদিন অনায়াসেই হাসিবুল ফরম ফিলাপ করে নেয়।
অপর গল্পটি অন্যরকম। জন্মের মাত্র তিন মাস পর অন্য নারীর প্রেমে মাতোয়ারা হয়ে পিতা চলে যান। মঞ্জুরুল হাসানের বেঁচে থাকাটাই অনিশ্চিত হয়ে উঠেছিল। তিন মাসের মঞ্জুরুলসহ দুই পুত্র এবং এক কন্যাকে রেখে অন্য নারীর হাত ধরে চলে যাওয়া পিতা জীবনে আর কোনদিন স্ত্রী সন্তানের খবর নেয়নি। অসহায় মা তিন সন্তানকে বুকে আগলে খেয়ে না খেয়ে লেখাপড়া করানোর যুদ্ধ করছেন। কখনো টাকা দিতে পারছেন, কখনো পারছেন না। ভয়াবহ রকমের এক যুদ্ধের মাঝে লায়ন্স স্কলারশিপ ট্রাস্টের বৃত্তি চট্টগ্রাম ভেটেরেনারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মঞ্জুরুল হাসানের লেখাপড়ার পথ অনেক সুগম করেছে।
এই ধরনের অসংখ্য গল্প। গল্পগুলো মন ভিজিয়ে দিচ্ছিল অনেকের। এদের কারো বাবা নেই। কারো মা নেই। কারো বাবা রিঙা চালায়, ভ্যান চালায়, কৃষি কাজ করে। আবার কারো মা পরের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে। শুধু কি তাই? এদের কয়েকজন জন্মান্ধ। চোখের দৃষ্টি নেই। পেটে ভাত নেই। অথচ মন পড়ে থাকে বইয়ের পাতায়। তারা পড়তে চায়। মানুষ হতে চায়। মন প্রাণ উজাড় করে সব মেধা দিয়ে হতে চায় মেধাবী মানুষ। মানবিক মানুষ। কিন্তু তাদের সামনে পাহাড়ের চেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা দারিদ্রতা। যুদ্ধক্ষেত্রের নিরস্ত্র সৈনিক যেমন অসহায় ঠিক তেমনি অসহায় হয়ে সমাজের দিকে তাকিয়ে থাকা মেধাবী এই বাচ্চাগুলো একেকজন পড়ছে দেশের সব শীর্ষ স্থানীয় মেডিকেল ও বিশ্ববিদ্যালয়ে।
গতকাল জাকির হোসেন রোডে অবস্থিত লায়ন্স ফাউন্ডেশনের হালিমা রোকেয়া হলে বৃত্তিপ্রদান অনুষ্ঠানে জীবনের নানান গল্প বলছিল মেধাবী এসব শিক্ষার্থীরা। নিজেদের অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে তারা শোনাচ্ছিল পাজরভাঙ্গা নানা শব্দমালা। গতকাল ৫৫ জন মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের বৃত্তি দেওয়া হয়।
লায়ন্স স্কলারশিপ ট্রাস্টের যাত্রা শুরু হয় ২০১৫-২০১৬ সালে। লায়ন্স ডিস্ট্রিক্ট গভর্ণর হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর লায়ন মোস্তাক হোসাইন প্রতিষ্ঠিত করেন ‘এডুকেশন ফর এঙিলেন্স’। কিছুদিনের মধ্যে তিনি লায়ন্স ক্লাব ইন্টারন্যাশনালের ডিস্ট্রিক ৩১৫বি৪ এর একটি স্থায়ী প্রকল্প গ্রহণ করেন। লায়ন সদস্যদের কাছ থেকে সংগৃহীত ৪৩ লাখ টাকা ব্যাংকে এফডিআর করে রেখে তিনি লায়ন স্কলারশিপ ট্রাস্ট গঠন করেন। বর্তমানে এই ফান্ডে ৯২ লাখ ৬১ হাজার টাকা এফডিআর করা হয়েছে। এই এফডিআর থেকে প্রাপ্ত টাকার পাশাপাশি বিভিন্ন লায়ন্স ক্লাবের পক্ষ থেকেও ছাত্রছাত্রীদের স্পন্সর করা হচ্ছে। এ বছর সর্বমোট ৫৫ জন ছাত্রছাত্রীকে মাসিক ২ হাজার টাকা করে বৃত্তি প্রদান করা হয়।
গতকাল বৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠান লায়ন মোস্তাক হোসাইনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন লায়ন্সের ডিস্ট্রিক্ট গভর্ণর আল সাদাত দোভাষ। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে সাবেক গভর্নর লায়ন রূপম কিশোর বড়ুয়া, পিডিজি লায়ন এস এম সামশুদ্দীন আহমেদ, লায়ন সিরাজুল হক আনসারি, সিএলএফ চেয়ারম্যান লায়ন মোহাম্মদ নাসিরউদ্দিন চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।
লায়ন্স স্কলারশিপ ট্রাস্টের সেক্রেটারি লায়ন এ এইচ এম কফিল উদ্দীনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানে লায়ন কোহিনুর কামাল, লায়ন ইঞ্জিনিয়ার মুজিবুর রহমান, লায়ন মোহাম্মদ হাসান, লায়ন হাসান আকবর প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধলিটল স্টার মডেল স্কুলের যুগপূর্তিতে অনুষ্ঠান
পরবর্তী নিবন্ধরেমিটেন্স যোদ্ধাদের যথাযথ সামাজিক মর্যাদা দিতে হবে