স্বপ্নের বাড়ি পেল সুবর্ণচরের ১১ পরিবার

| মঙ্গলবার , ৪ এপ্রিল, ২০২৩ at ৫:৩৭ পূর্বাহ্ণ

স্বামী পরিত্যাক্ত আলেয়া বেগম (৫০) গত ২২ বছর ধরে সংসার বাঁচাতে যুদ্ধ করেছেন ঝড়বৃষ্টি ও পরিবেশের সাথে। এরমধ্যে একমাত্র মেয়ে জেসমিন আক্তারকে বিয়েও দেন তিনি। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস তার স্বামী মারা যান। অসহায় হয়ে পড়েন আলেয়া। দুই চোখে ঘিরে আসে অন্ধকার। উপায় না দেখে গ্রামের অনেকের কাছে থেকে ঋণও নেন তিনি। ঋণের টাকায় মা মেয়ের হাত কাজ করে সামান্য আয় করলেও সে আয়ের টাকায় কিস্তি পরিশোধ তো দূরের কথা দুই বেলা দুমুঠো ভাতই জুটে না তাদের। এরমধ্যে নুয়ে পড়া কঙ্কালসার ঘরটি মেরামত করার শক্তিটুকু তাদের ছিল না।

দুই মাস আগে হঠাৎ একদিন তাদের কঙ্কালসার ঘর দেখতে আসেন পিএইচপি ফ্যামিলি ও পসকো ইন্টারন্যাশনালের লোকজন। তারা আশ্বাস দিলেন পাকা বাড়ি করে দেওয়ার। প্রথমে আলেয়া বেগম বিশ্বাস হয়নি। পরে যখন তার বন্দোবস্ত পাওয়া ২ গণ্ডা জমিতে ঘর তৈরির কাজ শুরু হয় তখন বিশ্বাস করেন তিনি পাকা বাড়ি পাবেন। কথাগুলো বলছিলেন নোয়াখালীর সুবর্ণচরের ৪নং চর ওয়াপদা ইউনিয়নের বাসিন্দা আলেয়া বেগম।

গতকাল সোমবার দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিষ্ঠান পসকো ইন্টারন্যাশনাল ও পিএইচপি ফ্যামিলির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ ইকবাল হোসেনের প্রচেষ্টায় নোয়াখালীর সুবর্ণচরের ৪ নং চরওয়াপদা ইউনিয়নের ১১ পাকা ঘর তৈরি করে হতদরিদ্র পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

উল্লেখ্য, পসকোপিএইচপি ফ্যমিলি হতদরিদ্রদের জন্য লোহা, কংক্রিট ও রঙিন ঢেউটিনের তৈরি ৬০০ বর্গফুটের ঘর তৈরি করে দিচ্ছে। তিন কক্ষের প্রতিটি ঘরে দুটি শোবার কক্ষ, মাঝখানে একটি বসার কক্ষ, সামনে একটি বারান্দা এবং একটি বাথরুম রাখা হয়েছে। এই কাঠামোর বাইরে আছে একটি রান্নাঘর। নিজের জমি আছে কিন্তু দরিদ্র আর বাড়ি নির্মাণের সামর্থ্য নেই এমন পরিবারকে বেছে বেছে বাড়ি নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি ঘর নির্মাণ করতে খরচ পড়েছে চার লাখ ৭০ হাজার টাকা। ঘর নির্মাণে পিএইচপি ফ্যামিলির তৈরি হওয়া রঙিন ঢেউটিন ব্যবহার করা হয়েছে, যাতে গুণগত মান ও স্থায়ীত্ব অক্ষুণ্ন থাকে। এর আগে গত ডিসেম্বরে একই এলাকায় ৫টি ঘর তৈরি করে হস্তান্তর করা হয়েছিল।

পিএইচপি ফ্যামিলির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন বলেন, পসকো’র ভাইস প্রেসিডেন্ট ও আমি যৌথভাবে এলাকাটি পরিদর্শন করি ও সেখানকার মানুষের দুরবস্থা দেখে আমরা হতাশ হই এবং মানবিক বিবেচনায় চরের বাসিন্দাদের ক্রমানয়ে ঘর তৈরি করার মনস্থির করি। এখন পসকো’র সহযোগিতায় ১১ পাকা ঘর তৈরি করে বাসিন্দাদের বুঝিয়ে দিয়েছি। আমি ও আমার পিএইচপি ফ্যামিলি সৌভাগ্যবান ও আনন্দিত, চরের অসহায় মানুষের জন্য কিছু করার সুযোগ পেয়েছি তার জন্য। ইকবাল হোসেন বলেন, সরকারের একার পক্ষে সারা দেশে দরিদ্র জনগণের আবাসন নিশ্চিত করা সত্যিই একটি চ্যালেঞ্জ। তাই আমরা সরকারকে সহায়তা করতে এ উদ্যোগ নিয়েছি। পিএইচপি ফ্যামিলির চেয়ারম্যান সুফি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান সমাজের অসহায় মানুষকে সেবা করতে ভালোবাসেন। তারই ধারাবাহিকতায় সুবর্ণচরে হতদরিদ্রের জন্য ঘর তৈরি করে হস্তান্তর করেছি।

কোরিয়ার পসকো ইন্টারন্যাশনাল সদর দপ্তর থেকে বার্তায় মি. ড্যানিয়েল বলেন, আমরা আমাদের মূল্যবান এবং কৌশলগত অংশীদার পিএইচপি ফ্যামিলির সাথে এই কার্যক্রমটি চালিয়ে যেতে চাই। পাকা বাড়ি হস্তান্তর অনুষ্ঠানে ফাঁকে উপস্থিত ছিলেন পিএইচপি ফ্যামিলির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন, দক্ষিণ পসকো ইন্টারন্যাশনালের এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট সন চুং কিং, পসকোবাংলাদেশের হেড অফ কমার্সিয়াল আহাসানুল আলম, পসকো ইন্টারন্যাশনাল কোরিয়ার এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট সাংচুল কিম, সিনিয়র ম্যানেজার ডেনিয়াল লি, কান্ট্রি ম্যানেজার এস জে কং, নোয়াখালী রুরাল ডেভেলপমেন্ট সোসাইটির (এনআরডিএস) এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর আব্দুল আউয়াল, সুবর্ণচরের ৪ নং চর ওয়াপদা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান ভুইয়াসহ হতদরিদ্র পরিবারের সদস্যরা। প্রেস বিজ্ঞপ্তি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধশিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের নতুন প্রেসিডিয়াম গঠন
পরবর্তী নিবন্ধচিত্রশিল্পী কনক চাঁপা চাকমাকে সংবর্ধনা ও আর্ট ক্যাম্প