কক্সবাজারের চকরিয়ার মাতামুহুরী নদীর বাঘগুজারা পয়েন্টে নির্মিত দেশের বৃহত্তম রাবার ড্যামটি (ব্যারেজ) আবারো অকার্যকর হয়ে পড়েছে। ২৩৩ দশমিক ৫০ মিটার দীর্ঘ দেশের বৃহত্তম এই ড্যামটির চারটি স্প্যানের মধ্যে দ্বিতীয় স্প্যানের রাবারের জোড়া গতকাল সোমবার দুপুরের দিকে ছিঁড়ে যায়। এতে ওই স্প্যান দিয়ে ঢুকে পড়ছে সামুদ্রিক জোয়ারের লবণাক্ত পানি। সরজমিন দেখা গেছে, বাঘগুজারা রাবার ড্যামের ছিঁড়ে যাওয়া স্প্যান দিয়ে পূর্বপ্রান্তে ঢুকে পড়ছে জোয়ারের পানি। যেখানে ড্যামের রাবার ব্যাগের সহায়তায় পূর্বাংশে আটকানো রয়েছে পার্বত্য অববাহিকার উজান থেকে নেমে আসা মিঠা পানি। এই অবস্থায় নতুন করে অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলার অন্তত ৫০ হাজার একর জমির রোপিত রকমারি ফসল। কারণ ড্যামের সহায়তায় নদীর ধরে রাখা মিঠা পানি দিয়ে ওই জমিতে প্রতিবছর শুষ্ক মৌসুমে ইরি-বোরোসহ রবিশস্যের চাষাবাদ করে আসছিলেন দুই উপজেলার কৃষক। বর্তমানে আমন মৌসুমে দুই উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নের ওই পরিমাণ জমিতে চাষাবাদ হুমকির মুখে পড়ল। এই খবরে চকরিয়া ও পেকুয়ার কৃষকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
ড্যামের রাবার স্প্যান ছিঁড়ে যাওয়ার খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক পরিদর্শন করেছেন কঙবাজার-১ আসনের সংসদ সদস্য ও চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাফর আলম। তিনি দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘আমন চাষাবাদের মোক্ষম সময়ে বাঘগুজারা ড্যামের রাবার ছিঁড়ে যাওয়ার ঘটনা খুবই দুঃখজনক। ড্যামটি দ্রুত কার্যকর না করলে ৫০ হাজার একর জমির ফসল গোলায় তুলতে পারবেন না কৃষক। তাই পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের এই বিষয়ে জরুরি পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দিয়েছি।’
অবশ্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্ট শাখার উপ-সহকারী প্রকৌশলী জামিল মোর্শেদ দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘ড্যামটির বর্তমান অবস্থা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে চারটি স্প্যানে নতুন করে রাবার লাগানোর জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। এরপর দীর্ঘস্থায়ীভাবে যাতে এই ড্যাম সচল করা যায় সেজন্য যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। তবে ছিঁড়ে যাওয়ার রাবারের জোড়া লাগানোর কাজ প্রাথমিকভাবে শুরু করা হয়েছে। যাতে চলতি মাস পর্যন্ত ড্যামের রাবারের সহায়তায় নদীর পূর্বাংশে মিঠা পানি ধরে রাখা যায়।’
এই বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড কঙবাজারের পওর বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ডক্টর তানজির সাইফ আহমেদ দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘প্রতিবছর এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে ড্যামের রাবার ব্যাগ ডাউন করা হয়। কারণ এই সময় থেকে বৃষ্টিপাত শুরু হয়। তখন উজান থেকে নদীতে পানি নেমে আসা শুরু হওয়ার আগেই ড্যামের রাবার ব্যাগ ডাউন করে দেওয়া হয়। এবারও চলতি এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে রাবার ব্যাগ ডাউন করার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছিল। কিন্তু তার আগেই একটি স্প্যানের রাবার ছিঁড়ে যাওয়ায় কিছুদিনের জন্য সমস্যা দেখা দিয়েছে চাষাবাদে। তবে সেই সমস্যা কেটে যাবে রিপিয়ারিং করার মাধ্যমে।’
নির্বাহী প্রকৌশলী আরো বলেন, ‘দশ বছরের বেশি সময় পার করেছে ড্যামটি উদ্বোধনের পর। এই সময়ের মধ্যে ড্যামের রাবার ব্যাগ লবণাক্ত পানিতেই ডুবে ছিল। তাই ড্যামের স্প্যানগুলোর রাবারের মেয়াদও শেষ হয়েছে। আবারো যাতে দীর্ঘস্থায়ীভাবে এই সমস্যার সমাধান করা যায় সেজন্য ড্যামটির দুই পাশে নদীতে মাটি ফেলে অস্থায়ী ক্রঁসবাধ নির্মাণ করা হবে। এর পর ড্যামের চার স্প্যানের রাবার জোড়া লাগানো হবে নতুন করে। এজন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ চেয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পত্র দেওয়া হয়েছে।’