স্ত্রীর সাথে ঝগড়া করে ২৭ বছর আগে বাড়ি ছেড়েছিলেন বাঁশখালীর হাসান

২৭ বছর পরিবারের পক্ষ থেকে দেওয়া হয় ফাতেহাও

বাঁশখালী প্রতিনিধি | শনিবার , ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ at ৬:৪৪ অপরাহ্ণ

চট্টগ্রামের বাঁশখালীর কাথরিয়া বরইতলী এলাকার মোঃ হাসান (৬৬) স্ত্রীর সাথে ঝগড়া করে ২৭ বছর আগে সংসার ছেড়েছিলেন। কিন্তু ঘরে ফিরেই স্ত্রী-সন্তানের জায়গা জমির চাহিদা মিটাতে ৮ টুকরো হয়ে প্রাণ দিতে হলো হাসানকে।

চট্টগ্রাম নগরীর পতেঙ্গা থানা এলাকায় ১২নং ঘাটে লাগেজে খণ্ডি মরদেহ পাওয়া ব্যক্তির পরিচয় শনাক্ত হওয়া হাসানের ভাগ্যে বুঝি এই পরিণতিই লেখা ছিল। পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) কর্মকর্তারা আজ শনিবার সকালে আকমলী আলী সড়কের পকেট গেইটের একটি খাল থেকে হাসানের শরীরের অন্যান্য অংশও উদ্ধার করেছে।

চট্টগ্রামের পতেঙ্গা এলাকায় ঝোপের আড়াল থেকে মরদেহের পাওয়া গেছে ট্রলিতে পাওয়া খণ্ডাংশগুলো। শনিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) সকালে পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রোর পরিদর্শক ইলিয়াস খান বলেন, গত ২১ সেপ্টেম্বর পতেঙ্গা থানার ১২ নম্বর ঘাট এলাকায় সড়কের পাশে পড়ে থাকা একটি লাগেজ থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল মানুষের শরীরের ৮টি খণ্ড।

তিনি আরও বলেন, চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি তদন্তের মাধ্যমে খুন হওয়া ব্যক্তির পরিচয় শনাক্ত করা হয়েছে এবং ভুক্তভোগীর শরীরের অবশিষ্ট অংশও পাওয়া গেছে। এর আগে বৃহস্পতিবার পতেঙ্গা থানার ১২ নম্বর ঘাট এলাকায় সড়কের পাশে একটি লাগেজ পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয়রা পুলিশে খবর দেয়।

পরে পুলিশ এসে লাগেজ থেকে মানুষের শরীরের ৮টি খণ্ড উদ্ধার করে। এর মধ্যে রয়েছে ২ হাত, ২ পা, কনুই থেকে কাঁধ এবং হাঁটু থেকে উরু পর্যন্ত অংশ। প্রত্যেকটি টেপ দিয়ে মোড়ানো ছিল। তবে ওই লাগেজে ভুক্তভোগীর মাথা না থাকায় তাৎক্ষণিক পরিচয় শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ।

ঘটনার পর থেকে হাসানের স্ত্রী ছেনোয়ারা বেগম ও বড় ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান পিবিআইয়ের হেফাজতে থাকলেও হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছোট ছেলে সফিকুর রহমান প্রকাশ জাহাঙ্গীর ও তার স্ত্রী আনারকলি পলাতক বলে পিবিআই জানিয়েছে।

এদিকে শনিবার সকালে বাঁশখালী হাসানের বাড়ি গেলে তালাবদ্ধ বাড়ি পাহারা দিতে দেখা যায় মেয়ে রাজিয়া বেগমের দুই পুত্র আরাফাত ও জাবেদ কে। নিহত হাসানের বড় ভাই মাহাবু আলী বলেন, আমার ভাইয়ের সাথে বউয়ের মিল ছিল না। তাই নানা সময়ে ঝগড়া বিবাদ হতো। বউয়ের সাথে ঝগড়া করে বাড়ি ছেলে রামগড় চলে গিয়েছিল সে।

সেখানে ভারতীয় পুলিশের হাতে আটক হয়ে ২৭ বছর বাহিরে ছিল। একবছর আগে দেশে ফিরলেও তাদের পরিবারের সদস্যরা মেনে নিতে পারেনি। বাহিরে বিয়ে করেছে এমন অভিযোগে বাড়িতে থাকতে না দেওয়ায় মানুষের বাড়ি এবং মসজিদে থাকত অনেক সময়। ভিটার জায়গা জমি স্ত্রী ও ছেলে মেয়েদের নামে লিখে দিতে চাপ দিয়ে দিলেছিল বলে জানায় সে।

কাথরিয়া ইউনিয়নের ইউপি সদস্য ছৈয়দ আহমদ বলেন, তাদের পরিবারে জায়গা-জমি নিয়ে বিরোধ দেখা দিলে তা আমি এক মাস পূর্বে ঠিক করে দিয়েছিলাম। দীর্ঘদিন বাইরে থাকার পর হাসান আসাতে ছেলে-মেয়েরা তাকে বিশ্বাস করত না। হয়তো সে বাইরে বিয়ে করেছে আবারো জায়গা জমি বিক্রি করে চলে যাবে এমন সন্দেহ করতো। বাড়ি থেকে চলে যাওয়ার পর ২৭ বছর যাবত দেশে না আসায় তার নামে পরিবারের পক্ষ থেকে ফাতেহাও দেওয়া হয় বলে জানান তিনি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধটাইগারদের লক্ষ্য ২৫৫
পরবর্তী নিবন্ধরাঙ্গুনিয়ায় পুকুরে ডুবে স্কুল ছাত্রীর মৃত্যু