কক্সবাজারের চকরিয়ায় অপহরণের নাটক সাজিয়ে নিজেই আত্মগোপনে চলে যাওয়ার ২৬ ঘণ্টার মধ্যেই প্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে কথিত অপহৃত সবজি বিক্রেতা আহমুদুল্লাহকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। গত শনিবার দিবাগত রাত বারোটার দিকে কক্সবাজার শহরের লিঙ্ক রোডের একটি বিকাশের দোকানের সামনে থেকে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে। এ সময় প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশের কাছে কথিত অপহৃত আহমুদুল্লাহ স্বীকার করেন প্রতিপক্ষ মো. কালুকে ফাঁসাতে এবং নিজের স্ত্রী খালেদা বেগমের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিতে আহমুদুল্লাহ নিজেই অপহরণের নাটক সাজান এবং কক্সবাজার শহরের লিঙ্ক রোডের একটি বিকাশ এজেন্ট নম্বর দিয়ে স্ত্রীকে জানান কালুর নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা তাকে অপহরণ করেছে এবং মুক্তিপণ হিসেবে নগদ ৪০ হাজার টাকা পাঠাতে হবে।
চকরিয়া থানার পুলিশ জানায়, গত শুক্রবার সকাল ১০ টার দিকে আহমুদুল্লাহকে চকরিয়া পৌরশহরের বাস টার্মিনাল সবজির আড়তের সামনে থেকে মাইক্রোবাসে তুলে অপহরণ করা হয়েছে মর্মে থানায় মামলা করেন স্ত্রী খালেদা বেগম। এর পর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ওমর ফারুক একদল পুলিশ নিয়ে সন্দেহভাজন আসামি চকরিয়া পৌরসভার দুই নম্বর ওয়ার্ডের জালিয়াপাড়ার আবদুচ সালামের ছেলে মো. কালুর বাড়িতে অভিযানে যান। এসময় কালুর স্বজনরা পুলিশকে জানায় ঘটনাটি একেবারেই সাজানো। তখন কথিত অপহৃত আহমুদুল্লাহর স্ত্রীর খালেদা বেগম উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা চালান সেখানে। পরে পুলিশ সেখান থেকে ফিরে আসে।
তদন্ত কর্মকর্তা ওমর ফারুক জানান, সর্বশেষ স্ত্রী খালেদার সঙ্গে যে মোবাইল নম্বর থেকে আহমুদুল্লাহ ফোনে কথা বলেছেন সেই ফোনের সূত্র ধরে এবং প্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে কথিত অপহৃতকে উদ্ধারে পুলিশ অভিযান শুরু করে। সেই অভিযানের সফলতাও আসে শনিবার দিবাগত রাত বারোটার দিকে। ওইসময় কক্সবাজার শহরের লিঙ্ক রোডের বিকাশের দোকানের সামনে থেকে পুলিশ আহমুদুল্লাহকে একেবারে স্বাভাবিক চলাফেরা করার সময় উদ্ধার করে।
তদন্ত কর্মকর্তা আরো জানান, কথিত অপহৃত আহমুদুল্লাহ রামুর কচ্ছপিয়া ইউনিয়নের হাইস্কুল পাড়ার আবদুর রহিমের ছেলে। রামু থেকে সবজি এনে চকরিয়ায় পাইকারি আড়তে বিক্রি করেন। সেই সুবাদে পৌরসভার জালিয়াপাড়ায় ভাড়া বাসায় থাকেন এবং স্থানীয় কালুর সাথে তার বিরোধ দেখা দেয় তুচ্ছ বিষয় নিয়ে।
এ ব্যাপারে চকরিয়া থানার ওসি শাকের মোহাম্মদ যুবায়ের দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘সবজি বিক্রেতা আহমুদুল্লাহকে কেউ অপহরণ করেনি। মূলত নিজেই অপহরণ নাটক সাজিয়ে একদিকে স্ত্রীর কাছ থেকে মোটা টাকা হাতিয়ে নিতে এবং বিরোধ থাকা কালুকে ফাঁসানোর চেষ্টা করেছেন। সেই বিষয়টি পুলিশের কাছে প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেছেন তিনি। এর আগে প্রযুক্তির সহায়তায় কক্সবাজার শহরের লিঙ্ক রোডের একটি বিকাশের দোকানের সামনে থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়।’
ওসি আরো বলেন, ‘কথিত অপহৃত ভিকটিম কী উদ্দেশ্যে অপহরণ নাটক সাজিয়েছে, তা আদালতের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেবেন। গতকাল আদালত তাকে জেল হাজতে প্রেরণ করেছে।’