সুজনের বিরুদ্ধে ‘দুর্নীতির’ অভিযোগ তদন্তে মন্ত্রণালয়ের তিন সদস্যের কমিটি

অভিযোগ সম্পর্কে যা বললেন সুজন

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ২৭ মে, ২০২২ at ৪:৪৯ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) প্রশাসক পদে দায়িত্ব পালনকালে খোরশেদ আলম সুজনের ‘১৩টি সুনির্দিষ্ট দুর্নীতির’ অভিযোগ তদন্ত করবে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। এ লক্ষে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (নগর উন্নয়ন) মুস্তাকিম বিল্লাহ ফারুকীকে আহ্বায়ক এবং একই বিভাগের উপ-সচিব (সিটি কর্পোরেশন-২) মোহাম্মদ জহিরুল ইসলামকে সদস্য সচিব করা হয়। কমিটির অন্য সদস্য হচ্ছেন স্থানীয় সরকার বিভাগের যুগ্ম সচিব (পলিসি সাপোর্ট অধিশাখা নুমেরী জামান।

এ বিষয়ে গত ২৪ মে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত পত্রে কমিটি কর্মপরিধি তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাবেক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন, তার ১৮০ দিনের দায়িত্ব পালনকালে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) প্রেরিত ১৩টি সুনির্দিষ্ট অভিযোগের তদন্তের অভিযোগ তদন্তপূর্বক একটি প্রতিবেদন দাখিল করবেন। গঠিত তদন্ত কমিটির একটি অনুলিপি প্রেরণ করা হয় চসিকের প্রধান নির্বাহী বরাবর। এ বিষয়ে জানতে চাইলে গতকাল সন্ধ্যায় চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শহীদুল আলম মোবাইল ফোনে দৈনিক আজাদীকে বলেন, এই মাত্র দেশের বাইরে থেকে আসলাম। এখনো ঢাকায়। গত ১৫ দিন দেশে ছিলাম না। তাই বিষয়টি আমার জানা নাই।

জানতে চাইলে চসিকের সাবেক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন দৈনিক আজাদীকে বলেন, আমার ১৮০ দিনের কর্মকাণ্ডে নগরবাসী সন্তুষ্ট হয়েছেন। কিন্তু কিছু মানুষ তাদের স্বার্থের কারণে খুশি হননি তারা মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ দেয়। সেজন্য মন্ত্রণালয় তদন্ত করতে বলেছে। সেটাকে আমি অভিনন্দন জানাই।

তিনি বলেন, ১৮০ দিনে শহরের অনেক দুর্ভোগ লাঘব করেছি। পিসি রোড, স্ট্রান্ড রোডসহ অনেকগুলো ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের সংস্কার করেছি। রাস্তাঘাট পাকাপোক্তভাবে ঠিক করেছি। ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কারে গতি এনেছি। কর্পোরেশনের অনেক বকেয়া পরিশোধ করেছি। অথচ আগে মানুষ পাওনার জন্য কেঁদেছে। কর্পোরেশনকে নিয়ম-নীতির ভেতর পরিচালনা করেছি। পরামর্শক সভা করেছি। সবকিছু মিলিয়ে অনেকে হয়তো নাখোশ হয়েছেন। এসব কর্মকাণ্ড যদি অপরাধ হয় তাহলে আমি অপরাধী। যাদের নিজেদের ব্যর্থতার জন্য চট্টগ্রামবাসীর সেবা করতে পারছে না তাদের হিংসার কারণেই এ মিথ্যা অভিযোগ। তিনি বলেন, এতোদিন তো অভিযোগ উঠেনি। এখন কেন? সামনে নগর আওয়ামী লীগের কাউন্সিল। ইলেকশন। এসবকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের অনেকে চক্রান্ত করে মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ করেছে। এটাকে স্বাগত জানাই। আমি যদি কোনো দোষ করে থাকি তাহলে যে কোনো শাস্তি মাথা পেতে নিব।

চসিক সূত্রে জানা গেছে, ১৮০ দিনের জন্য ২০২০ সালের ৬ আগস্ট প্রশাসকের দায়িত্ব নেন খোরশেদ আলম সুজন। ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি মেয়াদ পূর্ণ হয় তার। দায়িত্ব পালনকালে কর্পোরেশনের বিভিন্ন পরিমাপের ১১টি জায়গা লিজ দেন তিনি। অভিযোগ আছে লিজ গ্রহীতারা তার ঘনিষ্ট। এ লিজ প্রক্রিয়ায় কোনো অনিয়ম হয়েছে কিনা তা তদন্তে চসিক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন গত বছরের ২১ মে। তবে তদন্ত কমিটির রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়নি।

এদিকে খোরশেদ আলম সুজনের বিরুদ্ধে যে ১৩টি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আনা হয় তাতে জায়গা বরাদ্দের বিষয়টিও রয়েছে। মন্ত্রণালয়ে দায়ের করা অভিযোগগুলোর মধ্যে রয়েছে- কর্পোরেশনের নিজস্ব পাম্পের পরিবর্তে ব্যবসায়িক পার্টনার থেকে তেল কেনা, দায়িত্ব নেওয়ার প্রথম দিনে তেল চুরির দায়ে একজনকে বরখাস্ত করে আবার ১২৬ দিনের মাথায় পুনরায় তাকে নিয়োগ দেয়া। ২৯ বছর ধরে কর্মরতসহ তিনজন সিনিয়র থাকার পরও ১০ বছরের অভিজ্ঞ একজনকে উপ-সহকারী থেকে সহকারী প্রকৌশলী করা। এবং তা করা হয়েছে মেয়াদ শেষ হওয়ার একদিন আগে। একইভাবে প্রভিশন পিরিয়ড শেষ হওয়ার ৬ মাসের মধ্যে আশিকুল ইসলাম নামে এক প্রকৌশলীকে পদোন্নতি দেয়া হয়। যার সিনিয়র ছিল ছয়জন। এসব পদোন্নতি প্রশাসকের নির্দেশে দেয়া হয় বলে অভিযোগ করা হয়। প্রধান হিসাব রক্ষক করার ক্ষেত্রেও অনিয়মে অভিযোগ আনা হয়। চসিক থেকে অবসর নেয়া এক কর্মকর্তাকেও নিয়মবর্হিভূতভাবে নিয়োগ দেয়ার অভিযোগ করা হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকৌতুক কণিকা
পরবর্তী নিবন্ধপাওনা টাকা চাওয়ায় তিনজনকে কুপিয়ে জখম