সুখের সব আয়োজন তবুও চাপাকষ্ট বৃদ্ধাশ্রমে

বিশ্ব প্রবীণ দিবস আজ

রাউজান প্রতিনিধি | শনিবার , ১ অক্টোবর, ২০২২ at ১১:০৭ পূর্বাহ্ণ

১ অক্টোবর বিশ্ব প্রবীণ দিবস আজ। বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও এই দিবসটি বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে পালন করা হচ্ছে। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে- ‘পরিবর্তিত বিশ্বে প্রবীণ ব্যক্তির সহনশীলতা’। প্রবীণদের সুরক্ষা এবং অধিকার নিশ্চিতের পাশাপাশি বার্ধক্যের বিষয়ে বিশ্বব্যাপী গণসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে ১৯৯১ সাল থেকে এ দিবসটি পালন করা শুরু হয়। ১৯৯০ সালের ১৪ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ১ অক্টোবরকে আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবস ঘোষণা করে। সারাজীবন স্ত্রী-সন্তানের জন্য জীবন-যৌবন সবকিছু উজাড় করে দিয়ে জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে এসে আজ যাদের নিজের ঘরে স্বজনদের সঙ্গে থাকার কথা, সেই প্রবীণদের মধ্যে ভাগ্যাহত অনেকই জীবনের শেষ সময়টুকু কাটাচ্ছেন বৃদ্ধাশ্রমে। সুন্দর পরিবেশে থেকে নাওয়া-খাওয়া সবকিছু চললেও এখানে আশ্রিত কারো মনে শান্তি নেই। বৃদ্ধাশ্রমে তারা দিনাতিপাত করছেন মনের মধ্যে এক বুক চাপা যন্ত্রণা নিয়ে।
স্ত্রী, সন্তান, নাতি-নাতনির ভালোবাসার পরশবঞ্চিত এরকম ৩০ প্রবীণ নারী পুরুষের আবাসস্থল এখন রাউজানের নোয়াপাড়া আমেনা বশর প্রবীণ নিবাস। প্রতিষ্ঠার ৭ বছরে এই নিবাসে জীবনের শেষ সময় পার করেছেন ৬০ থেকে ৮০ বছর বয়সী ১৬ পুরুষ ও ১৪ নারী। এখানে আশ্রিতদের সাথে কথা বলতে গেলে কেউ নিজেদের পরিচয় জানাতে চাননি। তবে আলাপচারিতায় মনে হয়েছে তাদের বুকে রয়েছে পাহাড়সম চাপা কষ্ট। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, এখানে যারা প্রবীণ নিবাসে এসেছেন তাদের মধ্যে কেউ কেউ আছেন স্ত্রী, সন্তানদের অবহেলার শিকার হয়ে, আবার কেউ এসেছেন স্ত্রী সন্তানের চাপে বাধ্য হয়ে।
গতকাল নোয়াপাড়া আমেনা বশর প্রবীণ নিবাসে গিয়ে কথা হয় মোহাম্মদ মুবিন নামের এক প্রবীণের সাথে। কথা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তার বাড়ি কুমিল্লা। নিজের চার সন্তান চাকরিজীবী। আছে সবার ঘরে নাতি-নাতনি। মাঝে মধ্যে ছেলেরা এসে দেখা করে গেলেও কেউ ঘরে নিয়ে যেতে চায় না।
প্রবীণ নিবাসের সীমানার ভেতর দেখা গেছে কয়েকজন বৃদ্ধকে পুকুর ঘাটে বসে অলস সময় কাটাচ্ছেন। নারীদের মধ্যে কেউ মেঝেতে বসে, কেউ চৌকিতে বসে প্রকৃতির দিকে চোখ বুলাচ্ছেন। পুকুরের পানির দিকে তাকিয়ে নির্বাক সময় কাটাচ্ছেন আবার কেউ কেউ। প্রথম আলাপে প্রায় সকলেই বলেছেন, এই প্রবীণ নিবাসে যারা আছেন তাদের দেয়া হয় ভাল খাবার, শারীরিক অসুস্থতার জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধ। আশ্রিত প্রবীণদের পরিবার-পরিজন কাছে না থাকলেও এখানে কোনো অযত্ন হয় না।
নিবাসের কেয়ারটেকার মো. ফারুক বলেছেন, নোয়াপাড়ার বিশিষ্ট শিল্পপতি শামশুল আলম ২০১৪ সালে নিজের অর্থে বিশাল এই প্রবীণ নিবাসটি প্রতিষ্ঠা করেছেন। মনোরম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মাঝে বিশাল এলাকায় প্রতিষ্ঠিত তিন তলা এই ভবনে প্রবীণদের জন্য রয়েছে প্রায় দুইশ আসনের ব্যবস্থা। সাজিয়ে রাখা আছে ৬০টি আসন। রাখা হয়েছে প্রতি ধর্মাবলম্বীদের জন্য পৃথক প্রার্থনা কক্ষ, ওয়াক ওয়েসহ নানা সুবিধা। অসুস্থদের দেয়া হয় চিকিৎসা সেবা। তাদের সেবাদানে রয়েছে পাঁচজন কর্মচারী। বর্তমানে এই প্রবীণ নিবাসে সব ধর্মের লোকই আছেন। রয়েছেন ১১ জন পুরুষ ও ৮ জন নারী। নারী-পুরুষদের জন্য রয়েছে সম্পূর্ণ আলাদা থাকার ব্যবস্থা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকক্সবাজারে আরও এক পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ
পরবর্তী নিবন্ধতত্ত্বাবধায়ক ছাড়া নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না : মির্জা ফখরুল