সীতাকুণ্ডে চার পাটকল ঘিরে নেই কোলাহল

জাতীয় পাট দিবস আজ

সীতাকুণ্ড প্রতিনিধি | রবিবার , ৬ মার্চ, ২০২২ at ৭:৪২ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী কিছু মিল ৪০-৫০ বছর ধরে সীতাকুণ্ডকে দেশে-বিদেশে শিল্পনগরীর পরিচিতি এনে দিয়েছিল। এখন সেই পরিচিতি মুছে যেতে বসেছে। কলকারখানাগুলো একে একে বন্ধ করে দেওয়ায় প্রাণহীন শিল্পনগরীতে পরিণত হয়েছে। এখন আর আগের মতো শ্রমিক-কর্মচারীদের কোলাহল নেই।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সোনাইছড়ি, কুমিরা, বাড়বকুণ্ড ও বাঁশবাড়িয়া এলাকায় স্থাপিত ৪টি পাটকলগুলো এই ঐতিহ্যের স্বাক্ষর বহন করছে। এ মিলগুলোতে এখন আগের মতো হুইসেল বাজে না। একসময় মিল এলাকাকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা হাজারো মুদি দোকান, রেস্তোরাঁ, হোটেল, চায়ের স্টল, সেলুনসহ ছোট-বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। চারদিকে সুনসান নীরবতা। রাস্তাঘাট শ্রীহীন। শিল্পাঞ্চল এখন মৃতপ্রায়।
২০২০ সালের জুলাই মাসে বাংলাদেশ পাটকল কর্পোরেশনের (বিজেএমসি) ২৫টি পাটকল বন্ধ করে দেয় সরকার। তার মধ্যে সীতাকুণ্ডে ৪টি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলও বন্ধ হয়ে যায়। ওই সময় সরকারি এই সিদ্ধান্তের পর পাটকল শ্রমিক-কর্মচারীদের মধ্যে দেখা দেয় অসন্তোষ। মহামারীর কারণে দুর্ভোগ, আরেক দিকে মিল বন্ধের ফলে বেকার হয়ে পড়েন ৪ জুট মিলের কয়েক হাজার শ্রমিক-কর্মচারী। জানা যায়, বন্ধ হওয়ার আগে সীতাকুণ্ডের ৪টি রাষ্ট্রায়ত্ত কারখানার মধ্যে গুল আহম্মদ জুট মিলে কর্মকর্তা-শ্রমিক-কর্মচারী ১৪৯৮ জন, হাফিজ জুট মিলে কর্মকর্তা-কর্মচারী-শ্রমিক ২৫০৩ জন, এমএম জুট মিলে কর্মকর্তা-কর্মচারী-শ্রমিক ৫৯৯ জন ও আরআর জুট মিলে ৭২৯ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী-শ্রমিক কাজ করতেন। মিলগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে শ্রমিকরা দুর্ভোগে পড়েন।
বারআউলিয়া এলাকায় হাফিজ জুট মিলের পাশে শ্রমিক কলোনি। চাকরির কারণে তারা পরিবার নিয়ে ৪০/৪৫ বছর ধরে এখানে বসবাস করছেন। শ্রমিক কলোনি ঘিরে গড়ে উঠেছে কাঁচাবাজারসহ অসংখ্য দোকানপাট। জুট মিলটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সেখানে এখন কোনো কোলাহল নেই। অনেক শ্রমিক দেশের বাড়ি চলে যাওয়ায় দোকানপাট বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে অনেকে বেকার হয়ে গেছেন।
হাফিজ জুট মিলস শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক দিদারুল আলম চৌধুরী বলেন, পাটকল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় হাজার হাজার মানুষ বেকার হয়ে পড়ে। সরকার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিতে বলেছিল, প্রত্যেক ঘরে একজন করে চাকরি দেবে। অথচ আজ তার উল্টো করছে। জুটমিলগুলো বন্ধ না করে কীভাবে চালালে লাভ হবে সেই চেষ্টা করা উচিত ছিল সরকারের।
শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক রবিউল হক বলেন, মিল বন্ধের ফলে অনেক মানুষ বেকার হয়ে পড়েছে।
সীতাকুণ্ড শ্রমিক লীগের সভাপতি ও হাফিজ জুট মিলের সিবিএ সভাপতি মাহবুবুল আলম জানান, লোকসানের অজুহাতে বিজেএমসি কর্তৃপক্ষ ২০২০ সালের জুলাই মাসে সীতাকুণ্ডের ৪টিসহ দেশের ২৫টি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল বন্ধ ঘোষণা করে। ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি, প্রভিডেন্ট ফান্ড ও গ্র্যাচুইটির টাকা পরিশোধ শুরু করে। ইতিমধ্যে ৬০ শতাংশ শ্রমিকের বকেয়া পরিশোধ করা হয়েছে। তবে হঠাৎ করে পাটকলগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় হাজার হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছে।
জাতীয় পাট দিবস আজ : আজ রোববার জাতীয় পাট দিবস। নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিবসটি পালন করা হবে। ‘সোনালি আঁশের সোনার দেশ, পরিবেশবান্ধব বাংলাদেশ’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে এবার দিবসটি পালিত হবে। এ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণী প্রদান করেছেন। জাতীয় পাট দিবসে পাট ও পাটজাত পণ্যের উৎপাদন ও রপ্তানি বৃদ্ধিতে বিশেষ অবদানের জন্য ১১টি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে সম্মাননা দেবে সরকার।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ১০৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ
পরবর্তী নিবন্ধলোহাগাড়ায় পিকনিক বাসের সাথে ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষ