সাবেক সিভিল সার্জনসহ সাত জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট

যন্ত্রপাতি ক্রয়ে দুর্নীতির সত্যতা মিলেছে তদন্তে

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ২৯ মার্চ, ২০২২ at ৫:৩২ পূর্বাহ্ণ

বাজার মূল্যের অধিক টাকায় এমআরআই মেশিন ক্রয়ে ‘অর্থ আত্মসাৎ’ করেছেন তিন ঠিকাদার। তাদের ‘সহযোগিতা’ করেছেন চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের সাবেক তত্ত্বাবধায়ক ও অবসরপ্রাপ্ত সাবেক সিভিল সার্জন ডা. সরফরাজ খান চৌধুরীসহ চার চিকিৎসক। চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের যন্ত্রপাতি ক্রয়ে দায়ের হওয়া দুর্নীতির মামলায় এসব উল্লেখ করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেছে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও দুদক প্রধান কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. সিরাজুল হক। এজহারভুক্ত সাত জনের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের মহানগর দায়রা জজ আদালতে সম্প্রতি তিনি এ চার্জশিট দাখিল করেন।
চার্জশিটভুক্ত অন্য আসামিরা হলেন, জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট (মেডিসিন) ডা. মো. আবদুর রব, জুনিয়র কনসালটেন্ট (অর্থো-সার্জারি) ডা. মো. মইন উদ্দিন মজুমদার, সিনিয়র কনসালটেন্ট (সার্জারি) ডা. বিজন কুমার নাথ, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ঢাকার বেঙ্গল সাইন্টেফিক অ্যান্ড সার্জিকেল কোং এর স্বত্বাধিকারী মো. জাহের উদ্দিন সরকার, মেসার্স আহমদ এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মুন্সী ফারুক হোসেন এবং এএসএলএর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আফতাব আহমেদ। বিষয়টি গতকাল সোমবার দুদক পিপি কাজী ছানোয়ার আহমেদ লাভলু আজাদীকে নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, মামলার পর জেনারেল হাসপাতালের যন্ত্রপাতি ক্রয়ে দুর্নীতির বিষয়টি দু’বছরের বেশি তদন্ত করেছে তদন্ত কর্মকর্তা। দীর্ঘ এ তদন্তে এজহারভুক্তদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের সত্যতাও পেয়েছেন তিনি। এরই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি তিনি চার্জশিট দাখিল করেছেন। আগামী ১০ মে চার্জশিট গ্রহণ বিষয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। এদিকে চার্জশিটে ত্রুটি রয়েছে উল্লেখ করে মহানগর পিপি ফখরুদ্দিন চৌধুরী আজাদীকে বলেন, চার্জশিটে থাকা ‘ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের তিনজন অর্থ আত্মসাৎ করেছেন এবং সরফরাজসহ চার চিকিৎসক সহযোগিতা করেছেন’ সংক্রান্ত বাক্যের জন্য চার্জশিট হালকা হয়ে গেছে। এখন শুধু সহযোগিতার জন্য দণ্ডবিধির ৪০৯ ধারায় শাস্তি পাবেন এ চারজন। আত্মসাৎ বিষয়ে পার পেয়ে যাবেন।
একটি এমআরআই মেশিনের বাজারমূল্য প্রায় দুই কোটি টাকা হলেও চট্টগ্রাম জেনালের হাসপাতাল সেটি কিনে ৬ কোটি ১৫ লাখ ৩০ হাজার ৪২৫ টাকায়। একইভাবে চারটি কালার ড্রপলার কেনা হয় ২ কোটি ৬০ লাখ টাকায়। যদিও এই মেশিনের দাম মাত্র ৯৮ লাখ টাকা। এভাবে বাজার মূল্যের চেয়ে দুই-তিনগুণ বেশি দাম দেখিয়ে মোট ৯ কোটি ১৫ লাখ ৩০ হাজার ৪২৫ টাকা সরকারি অর্থ আত্মসাত করেন ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের সাবেক তত্ত্বাবধায়ক ও অবসরপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা. সরফরাজ খান চৌধুরীসহ ৪ চিকিৎসক। এ কাজে তাদের সহযোগিতা করেছেন তিনটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। দুদকের দীর্ঘ অনুসন্ধানে এ সংক্রান্ত প্রমাণ মিললে ২০১৯ সালের ২৫ নভেম্বর তাদের বিরুদ্ধে দুদক, চট্টগ্রাম-১ এ মামলাটি করেন দুদক প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম।
মামলার এজহারে বলা হয়, ২০১৪ সালের ২৯ মে থেকে ২০১৬ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত তিনটি আলাদা কার্যাদেশের মাধ্যমে হাসপাতালের ভারী যন্ত্রপাতি ক্রয়ে অধিক মূল্য দেখিয়ে পরস্পর যোগসাজশে বার্ষিক ক্রয় পরিকল্পনা ছাড়াই জালিয়াতির মাধ্যমে বিভিন্ন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের ভুয়া প্যাড, সিল-স্বাক্ষর ব্যবহারের মাধ্যমে উক্ত ৯ কোটি ১৫ লাখ ৩০ হাজার ৪২৫ টাকা আত্মসাৎ করা হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধরমজান ঘিরে সক্রিয় চক্র বানানো হচ্ছে জাল টাকা
পরবর্তী নিবন্ধভূ-সম্পত্তি বিভাগের কর্মকাণ্ডে অসন্তুষ্ট মেয়র