চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) ভূ-সম্পত্তি বিভাগের কর্মকাণ্ডে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। চসিকের বেহাত হওয়া সম্পত্তির ব্যাপারে বার বার তাগাদা দেয়ার পরও কোনো পদক্ষেপ না নেয়ায় এ অসন্তুষ্টির কারণ। তাই জরুরি ভিত্তিতে একজন ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা নিয়োগসহ পুরো শাখাকে ঢেলে সাজানোর নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি। এ বিষয়ে মেয়র বলেন, কর্পোরেশনের অনেক সম্পত্তি এখানো বেহাত আছে। বারবার তাগাদা দেয়ার পরও ভূ-সম্পত্তি শাখা এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছে। চসিকের বর্তমান পর্ষদের ১৪ তম সাধারণ সভায় এসব কথা বলেন মেয়র। গতকাল সোমবার দুপুরে আন্দরকিল্লাস্থ নগর ভবনে কে বি আবদুচ সাত্তার মিলনায়তনে এ সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় এলইডি বাতির অনিয়ম তদন্তে গঠিত কমিটির রিপোর্ট প্রকাশে দেরি হওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেন এক কাউন্সিলর। এছাড়া পরিচ্ছন্ন বিভাগে মালামাল সংকট এবং কাটা সড়ক দ্রুত প্যাচওয়ার্কের মাধ্যমে সংস্কার ও আলোকায়নসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এছাড়া চসিকের কর-কর্মকর্তা, উপ-কর কর্মকর্তা ও কর-আদায়কারীদের কর আদায়ে নানা অসংগতি ও অদক্ষতা দূরীকরণে তাদের দৈনন্দিন কর্মকাণ্ড সম্পর্কে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে একটি প্রতিবেদন তৈরির সিদ্ধান্ত দেন মেয়র। সভায় এক কাউন্সিলর বলেন, ১৩ সাধারণ সভায় এলইডি বাতির পুল অনিয়ম নিয়ে আলোচনার পর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। কিন্তু দীর্ঘদিন অতিবাহিত হলেও তদন্ত কমিটি রির্পোট উপস্থাপন করেনি। শহরের অনেক রাস্তায় এখনো সড়ক বাতি জ্বলে না।
কাউন্সিলর মোবারক আলী বলেন, পরিচ্ছন্ন বিভাগের কিছু মালামাল দরকার। একাধিকবার বলার পরও পাইনি। বেলচা, হুইল বেরু, ক্যারেট ও পাঞ্জা (রোড সুইপিং এর পর বালি উত্তোলন কাজে ব্যবহৃত) এর সংকট আছে। আমাদের অবস্থা ‘অস্ত্রবিহীন যোদ্ধা’র মত।
কাউন্সিলর হাসান মুরাদ বিপ্লব বলেন, ওয়াসা অনেক জায়গায় খোঁড়াখুঁড়ি করেছে। সামনে বর্ষা আসছে। আবার রমজান মাসও শুরু হতে যাচ্ছে। দ্রুত প্যাঁচওয়ার্ক এর মাধ্যমে কাটা সড়ক মেরামত করা না হলে মানুষের দুর্ভোগ বাড়বে।
মেয়র যা বললেন :
সভায় মেয়র আগামী রমজান মাসকে সামনে রেখে নগরীকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা, তারাবি নামাজের আগে প্রতিটি মসজিদে ফগার মেশিনের মাধ্যমে মশক নিধনের ওষুধ স্প্রে করা, ওয়াসা কর্তৃক কর্তনকৃত রাস্তা দ্রুত প্যাঁচওয়ার্কের মাধ্যমে মেরামত ও নতুনভাবে কোন রাস্তা কর্তন না করা, নগরীতে নিরবচ্ছিন্ন আলোকায়ন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা এবং নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে বাজার মনিটরিং করতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান।
মেয়র বলেন, নগরবাসীর মন জয় করতে না পারলে চসিকের এ পরিষদের সকল কর্মকাণ্ড ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে। সেজন্য প্রত্যেক কাউন্সিলরদের নিজেদের ওয়ার্ডের জনগণকে সন্তুষ্ট রাখতে যা যা প্রয়োজন সেসব সেবামূলক কাজগুলো সঠিকভাবে সম্পন্ন করে নিজেদের সুনাম অর্জনের পদক্ষেপ নিতে হবে। তিনি সিটি কর্পোরেশনকে একটি সুশৃঙ্খল প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরে প্রত্যেকের স্বীয় অবস্থানে থেকে কর্তব্য সঠিকভাবে পালনের জন্য নির্দেশ দেন।
মেয়র পরিচ্ছন্ন বিভাগের জনবলের ছবি সম্বলিত তালিকা প্রণয়ন ও ডিজিটাল হাজিরা নিশ্চিত করার নির্দেশনা দেন। এছাড়া ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের পরিচ্ছন্ন, মশক নিধন, আলোকায়নের সার্বিক তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব ওয়ার্ড ভিত্তিক স্ব স্ব কাউন্সিলরদের গ্রহণ করে নিরবচ্ছিন্নভাবে সেবা কার্যক্রম পরিচালনা করতে দায়িত্ব প্রদান করেন।
তিনি বলেন, বর্ষা শুরুর আগে নগরের সব খাল থেকে মাটি উত্তোলন করে জলজটের সমূহ সম্ভাবনা দূরীকরণে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। জলাবদ্ধতা নিরসনে মেগা প্রকল্পের যে কাজ চলছে এ কাজ বাস্তবায়নকারী সংস্থাকে দায়িত্ব নিয়ে আগামী বর্ষায় যাতে কোনো ধরনের জলজট না হয় সেজন্য এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে। এছাড়া প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে নিরপত্তা বেষ্টনি না থাকার ফলে জানমালের যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা যাতে পুনরাবৃত্তি না হয় সেদিকে বাস্তবায়নকারী সংস্থাকে সর্তক দৃষ্টি রেখে কাজ করতে হবে। মেয়র মেগা প্রকল্পের আওতার বাইরে যে ২১টি খাল রয়েছে সে খালগুলোর সঠিক অবস্থান নির্ণয় ও সম্ভাব্যতা যাচাই করে প্রকল্পের ডিপিপি তৈরির নির্দেশনা প্রদান করেন।
মেয়র আরো বলেন, চসিকের আয়ের উৎস হচ্ছে শুধুমাত্র গৃহকর ও ট্রেড লাইসেন্স। কিন্তু এমন অনেক খাত আছে যেখান থেকে কর আদায় করা যায়। সে খাতগুলো কার্যকর করে করের আওতা বৃদ্ধির জন্য রাজস্ব কর্মকর্তাকে নির্দেশনা প্রদান করেন।
মেয়র বিদ্যুৎ বিভাগের নানা অনিয়ম অসংগতি দূর করার জন্য কাউন্সিলরদের সাথে সমন্বয় করে এখন থেকে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করে নগরীতে পরিপূর্ণ আলোকায়নের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে কঠোর নির্দেশনা দেন।
