সাইবার অপরাধীদের ঠেকাতে আরও অগ্রসর হতে হবে

| শুক্রবার , ২ জুলাই, ২০২১ at ৭:০০ পূর্বাহ্ণ

সাইবার নিরাপত্তা সূচকে বাংলাদেশের অসামান্য অগ্রগতি হয়েছে। আজাদীতে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, ‘আন্তর্জাতিক টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়নের (আইটিউ) আন্তর্জাতিক সাইবার নিরাপত্তা সূচকে ২৫ ধাপ উন্নতি হয়েছে বাংলাদেশের। বিশ্বের ১৯৪টি দেশের সাইবার নিরাপত্তায় গৃহীত আইনি ব্যবস্থা, প্রযুক্তিগত দক্ষতা, সাংগঠনিক ব্যবস্থা, সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং পারস্পরিক সহযোগিতা পরিস্থিতির বিবেচনা করে গত মঙ্গলবার গ্লোবাল সাইবার সিকিউরিটি ইনডেক্স-২০২০ প্রকাশ করা হয়েছে। তাতে বাংলাদেশ ৮১.২৭ স্কোর পেয়ে ৫৩তম স্থানে উঠে এসেছে। আগের বছর এ সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৭৮তম’।
করোনাকালে অনেক চ্যালেঞ্জের মুখেও প্রায় স্বাভাবিক জীবনযাপনে সবচেয়ে বেশি সহায়তা করেছে প্রযুক্তি। আবার এটাও বলা হচ্ছে, করোনা-পরবর্তীকালেও মানুষের ব্যক্তি ও পেশাজীবনকে নতুনভাবে প্রভাবিত করবে প্রযুক্তি। তবে প্রযুক্তির ব্যবহার যত বাড়ছে এবং বাড়বে, ততই হুমকিতে পড়ছে এবং পড়বে সাইবার নিরাপত্তা। অনলাইনে নানা রকম ফাঁদ পেতে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার প্রবণতা বেড়েছে বিশ্বজুড়েই। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের মতো উন্নত দেশেও এ ধরনের প্রতারণার ঘটনা ঘটছে অহরহ।
গত ৩০ জুন প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ, বেনিন, রুয়ান্ডা এবং তানজানিয়ার মতো বেশ কয়েকটি দেশ এগিয়ে এসেছে, যারা শক্তিশালী সাইবার নিরাপত্তায় প্রতিশ্রুতিশীল অবস্থান দেখাতে পেরেছে। আইটিউ বলছে, এই দেশগুলো জাতীয় পর্যায়ে সাইবার নিরাপত্তা ইন্ডাস্ট্রি গড়ে তুলেছে, যা সক্ষমতা উন্নয়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ। আইটিউর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সর্বশেষ সূচকে ১০০ স্কোর নিয়ে সবচেয়ে ভালো অবস্থায় আছে যুক্তরাষ্ট্র। এরপর ৯৯ দশমিক ৫৪ স্কোর নিয়ে যথাক্রমে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে যুক্তরাজ্য ও সৌদি আরব। ৯৯ দশমিক ৪৮ নম্বর নিয়ে তৃতীয় স্থানে আছে এস্তোনিয়া। এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে বাংলাদেশের অবস্থান ১১তম। ৯৮.৫২ স্কোর নিয়ে এই অঞ্চলে প্রথম অবস্থানে আছে দক্ষিণ কোরিয়া। ভারত আছে ৪ নম্বর অবস্থানে। চীনের অবস্থান ৮ নম্বরে এবং পাকিস্তানের অবস্থান ১৪ নম্বরে।
জানা গেছে, দেশের সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮-এর বিধান অনুযায়ী বাংলাদেশ কম্পিউটার ইনসিডেন্ট রেসপন্স টিম (বিজিডি ই-গভ সার্ট) গঠন করা হয়েছে। সরকারের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামোগুলোতে তথ্যনিরাপত্তা নিশ্চিতের লক্ষ্যে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে বিজিডি ই-গভ সার্ট। সব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি ও সাইবার নিরাপত্তার ধারণা দেয়ার জন্য আগামী ২৩-২৪ আগস্ট দুই দিনব্যাপী একটি সাইবার ড্রিল আয়োজন করা হবে। আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সাইবার ইনসিডেন্ট হ্যান্ডলিং দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য আগামী ২৩ অক্টোবর দিনব্যাপী সাইবার ড্রিল ২০২১ আয়োজনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এছাড়া ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবস’ উপলক্ষে আগামী ১২ ডিসেম্বর জাতীয় পর্যায়ে ন্যাশনাল সাইবার ড্রিল ২০২১ আয়োজনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। সাইবার ড্রিলে অংশগ্রহণের বিস্তারিত তথ্য বিজিডি ই-গভ সার্ট-এর ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।
সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মাঠ পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তাদের ভূমিকা রাখতে হবে বলে বিশেষজ্ঞরা মত প্রকাশ করেছেন। তাঁরা বলেন, প্রযুক্তিগত সক্ষমতা তৈরি, আইনের কঠোর প্রয়োগ ও সচেতনতা তৈরিতেও মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের যথাযথ ভূমিকা পালন করা দরকার। তাঁরা বলেন, পর্যাপ্ত সচেতনতা, শিক্ষা না থাকলে মিথ্যা তথ্যে মানুষ আকর্ষিত হয়। এসব বিষয়ে মিথ্যা খবর পরিবেশনকারীরা সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মগুলো ব্যবহার করছে। প্রযুক্তিগত সক্ষমতা অর্জনের মাধ্যমে সেগুলো চিহ্নিত করে তাদের বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। মিথ্যা তথ্য ও গুজব চিহ্নিত করতে ডিজিটাল সিকিউরিটি এজেন্সি থেকে বিভিন্ন কর্মসূচি নেওয়া দরকার। আগামী প্রজন্মকে সাইবার হুমকি থেকে রক্ষা করা জরুরি।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, সাইবার অপরাধকে এখন বড় ধরনের অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের নিরাপত্তাপ্রযুক্তি নিয়ে গুণগান গায়। তবে তাদের সমস্যা হলো হ্যাকিং রিপোর্ট বা প্রতারণার বিষয়টি সামনে আনে না। হ্যাকাররা তথ্য হাতিয়ে নিলে তারা নিজেরাও ক্ষতির মুখে পড়ে। অন্যদিকে, কোনো সাধারণ মানুষ সাইবার হামলার শিকার হলে খুব কম ক্ষেত্রেই পুলিশের কাছে যান। এ ধরনের ক্ষতি পরোক্ষভাবে নিজেই বহন করেন। ব্যাংক ও বীমা আবার প্রায়ই ক্ষতিপূরণ দেয়। তাই সাইবার অপরাধীরা এ ক্ষেত্রে দিন দিন উৎসাহী হচ্ছে। বিভিন্ন দেশের সরকার এখন সাইবার অপরাধ দমনকে অনেক গুরুত্ব দিতে শুরু করেছে। আমাদের দেশেও সেভাবে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। তবে এক্ষেত্রে আরো অগ্রসর হতে হবে। সাইবার অপরাধীদের ঠেকাতে আরও দূর যেতে হবে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে