সহিংসতা মানব উন্নয়নের প্রতিবন্ধকতাস্বরূপ

| মঙ্গলবার , ১০ মে, ২০২২ at ৫:৩৭ পূর্বাহ্ণ

দিন দিন পারিবারিক সহিংসতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রতিনিয়ত সংবাদপত্রে ঘটনাগুলো বড় হেডলাইনে প্রকাশিত হচ্ছে। গত ৮ মে দৈনিক আজাদীতে পারিবারিক সহিংসতার ঘটনার কয়েকটি খবর প্রকাশিত হয়েছে। একটি খবর হচ্ছে : ‘পুত্রকে জবাই করে হত্যার চেষ্টা, পিতা আটক’। অন্য একটি খবর হচ্ছে : ‘চারতলা থেকে পড়ে এক ব্যক্তির মৃত্যু, পরিবার বলছে দুর্ঘটনা, স্থানীয়দের দাবি হত্যা।’ প্রথম খবরে বলা হয়েছে, রাউজানের পশ্চিম গুজরা ইউনিয়নের মগদাইর গ্রামের মাইজপাড়ায় জাফর আলম (৬০) নামের এক ব্যক্তি নিজ পুত্রকে জবাই করে হত্যার চেষ্টা করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আহত পুত্রের নাম মো. রাশেদ (৩০)। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করে গলায় সেলাই দেয়া হয়েছে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ঘরের মধ্যে তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে রাশেদকে মারতে শুরু করে ক্ষিপ্ত পিতা জাফর। এক পর্যায়ে ঘর থেকে বের হয়ে পালানোর চেষ্টা করলে জাফর ছুরি হাতে ধাওয়া করে। রাশেদ, হোঁচট খেয়ে মাটিতে পড়ে গেলে জাফর তাকে চেপে ধরে গলায় ছুরি চালানোর চেষ্টা করে। রাশেদের চিৎকারে পরিবারের সদস্যরা ছুটে এসে জাফরের কাছ থেকে ছুরি কেড়ে নেয়। পরে ছুরির আঘাতে আহত রাশেদকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে চিকিৎসা দেয়া হয়।

দ্বিতীয় সংবাদের বিস্তারিত ঘটনায় বলা হয়, নগরীর ডবলমুরিং থানাধীন লেকভিউ আবাসিক এলাকায় চার তলা একটি ভবন থেকে পড়ে কামাল উদ্দিন (৪৫) নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। ঘটনার পর থেকে এ মৃত্যু নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। এলাকাবাসীর দাবি, পরিবারের সদস্যরা তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছে। এটি পরিকল্পিত হত্যা। অন্যদিকে পরিবারের সদস্যরা পুলিশকে জানিয়েছে, তিনি বারান্দা থেকে পিছলে পড়ে গেছেন।

ঘটনা দু’টির সত্যতা যাচাই করা না হলেও, কিংবা প্রমাণিত সত্য না হলেও অস্বীকার করার উপায় নেই যে, বর্তমানে পারিবারিক সহিংসতার ঘটনা বাড়ছে। সকল সামাজিক-অর্থনৈতিক এবং সব শ্রেণিতেই বিশ্বব্যাপী প্রতিনিয়ত ঘটছে সহিংস ঘটনা। বিশেষজ্ঞদের মতে, গৃহস্থালি হেনস্থা থেকে শুরু করে ধর্ষণ, বাল্যবিবাহসহ নানা মাত্রায়-নানা ধরনের সহিংসতা ঘটে। কোনো কোনো নারী জন্ম থেকেই সহিংসতার শিকারে পরিণত হয়, যখন তার পরিবার তার জায়গায় একজন ছেলে শিশু আকাঙ্ক্ষা করছিল তখন থেকেই। তাই সংঘটিত হয় মেয়ে শিশুর ভ্রুণ হত্যার মতো অমানবিক আচরণ।

সহিংসতার চর্চার জন্য পারিবারিক পরিবেশ যেন একটি নিরাপদ জায়গা। বিশেষ করে কিল-চড়-লাথি ইত্যাদি এবং অশ্লীল গালাগালির মতো সহিংস আচরণ পারিবারিক গণ্ডিতে সহনশীল আকারে অনবরত সংঘটিত হয়। নারীর প্রতি এই সহিংসতা অধিকাংশ ক্ষেত্রে পরিবারের সদস্যদের কাছে থেকে নীরব সমর্থন পায়। এমন আচরণ পুরুষ করবেই তার জন্য তৈরি থাকে অন্য সদস্যরা। শুধু যে নারীরা পারিবারিক সহিংসতার শিকার, তা নয়; ক্ষেত্র বিশেষে পরিবারের দুর্বল পুরুষরাও এই নির্যাতনের শিকার হচ্ছে অন্য পুরুষ দ্বারা। উচ্চবিত্ত থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যায়ের পরিবারের সদস্যদের এই আচরণ দেখে বিস্মিত হওয়া ছাড়া উপায় নেই।

মনোবিশ্লেষকদের মতে, পরিবার সহিংসতার চর্চা করে কখনো ক্ষমতার আধিপত্যের জায়গা থেকে সচেতনভাবে, কখনো কখনো সহিংসতার গুরুত্ব অনুভব করতে না পেরে অসচেতনভাবে। মৃদু আঘাত বড় ধরনের ক্ষতি হয় না-এটা করায় অন্যায় নেই। এভাবেই পরিবারে তৈরি হয় সহিংসতার সংস্কৃতি। তাই পারিবারিক নির্যাতন প্রতিরোধের জন্য জরুরি সহিংসতার প্রাথমিক ধাপ নির্মূল করা। আমাদের মনে রাখতে হবে যে, সহিংসতা মানব উনন্‌য়নের প্রতিবন্ধকতাস্বরূপ। সামাজিক সাংস্কৃতিকভাবে সহিংসতা যদিও মানব-আচরণের স্বাভাবিক প্রবৃত্তি বলে অনেক ক্ষেত্রে মনে করা হয়। কিন্তু এই সহিংসতার কারণেই সমাজের অগ্রগতি থমকে যায়। আশানুরূপ উন্নয়ন প্রত্যক্ষ হয় না। ফলে নারী-পুরুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টাকেই সহিংসতা প্রতিরোধের অন্যতম পন্থা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে