সময় অনেক বেড়েছে, সাথে ব্যয়ও

চট্টগ্রামে স্টিল সাইলো নির্মাণ

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ at ৫:৫০ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামে সর্বাধুনিক স্টিল সাইলো নির্মাণ কাজে গতি নেই। প্রায় সাড়ে ৫শ কোটি টাকা ব্যয়ে সাইলোটি নির্মাণের কার্যক্রম শুরু হলেও কবে শেষ হবে তা নিয়ে সংশয় ব্যক্ত করা হয়েছে। রাসায়নিক ও কীটনাশক ব্যবহার ছাড়া এই সাইলোতে টানা তিন বছর খাদ্যশস্য সংরক্ষণ করা যাবে।

সূত্রে জানা যায়, পতেঙ্গা সাইলোর ভেতরে প্রায় ছয় একর ভূমির ওপর স্টিলের সাইলো নির্মাণের কার্যক্রম শুরু হয় গত বছর। ৫৩৭ দশমিক ৫৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ১ লাখ ১৪ হাজার ৩শ টন ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন স্টিল সাইলোটি দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার অংশ হিসেবে নির্মিত হচ্ছে। বিশ্বে খাদ্যশস্য সংরক্ষণের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি হচ্ছে স্টিল সাইলো। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে দেশে প্রথমবারের মতো এই ধরনের সর্বাধুনিক সাইলো নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার। মডার্ন ফুড স্টোরেজ ফ্যাসিলিটিজ নামের এ প্রকল্পে ৫ লাখ ৩৫ হাজার ৫০০ টন ধারণ ক্ষমতার মোট আটটি স্টিল সাইলো নির্মিত হচ্ছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় পতেঙ্গা সাইলোর ধারণক্ষমতা হবে প্রায় ১ লাখ ১৫ হাজার টন। ২০১৩ সালের শেষ দিকে ১ হাজার ৯১৯ কোটি ৯৭ লাখ টাকা ব্যয়ে গৃহীত প্রকল্পটি ২০১৪ সালের ১১ মার্চ একনেক সভায় অনুমোদন পায়। কথা ছিল ২০২০ সালের জুনে প্রকল্পটি সম্পন্ন হবে। কিন্তু প্রকল্পের ওই মেয়াদের মধ্যে সাইলোর নির্মাণ কাজই শুরু করা সম্ভব হয়নি। এতে করে সময় বেড়েছে অনেক, একই সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে খরচও। চট্টগ্রামের সাইলোর অবকাঠামোগত নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০২২ সালে। এই একটি সাইলো নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে প্রায় সাড়ে ৫শ কোটি টাকা।

জানা যায়, নির্মাণাধীন পতেঙ্গার স্টিল সাইলোতে ৯টি স্টিল সংরক্ষণাগার (বিন) থাকবে। প্রতিটি বিনের ধারণ ক্ষমতা ১২ হাজার ৭০০ টন। একটি বিনের সাথে অপর বিনের অভ্যন্তরীণ নেটওয়ার্ক থাকবে। এতে করে নয়টি বিনই পরস্পরের সাথে সংযুক্ত থাকবে। এই ধরনের সাইলোর সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে কোনো পণ্য একবার রাখলে তার মান তিন বছর পর্যন্ত অক্ষুণ্ন থাকবে। এই তিন বছরে পণ্যের গুণগত মান, স্বাদ বা গন্ধে কোনো পরিবর্তন আসবে না। কোনো পোকার আক্রমণ হবে না। এজন্য পণ্যের মধ্যে কোনো কেমিক্যাল ব্যবহার করতে হবে না। খাদ্যশস্যে ভিটামিন মেশানো থেকে শুরু করে সব কার্যক্রমই স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরিচালিত হবে। একই সাথে সাইলোতে কত টন পণ্য রাখা হলো বা কত টন পণ্য সরবরাহ দেয়া হলো তার সবই স্বয়ংক্রিয়ভাবে রেকর্ড হবে। বিদ্যমান সাইলো থেকে খাদ্যশস্য চুরি হয়। স্টিল সাইলোতে তা পুরোপুরি ঠেকানো যাবে। এতে দেশের খাদ্যশস্য মজুদ, সংরক্ষণ ও বণ্টনের ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন আসবে।

চট্টগ্রামের স্টিল সাইলো নির্মাণে বর্তমানে মাঠ পর্যায়ে কাজ চলছে। তবে কাজের গতি মন্থর বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, গুরুত্বপূর্ণ এই প্রকল্পটির কাজে আরও গতি আনা জরুরি।

বর্তমানে চট্টগ্রামে ৬ লাখ টন খাদ্য মজুতের ব্যবস্থা রয়েছে জানিয়ে সংশ্লিষ্টরা জানান, স্টিল সাইলো নির্মিত হলে চট্টগ্রামে খাদ্যশস্য মজুতের সক্ষমতা ৭ লাখ টন ছাড়িয়ে যাবে; যা দেশের খাদ্যশস্য মজুদের সার্বিক ব্যবস্থায় প্রভাব ফেলবে।

এ বিষয়ে খাদ্য অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা গতকাল বলেন, সাইলোর নির্মাণ কাজ চলছে। নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ হয়নি। হবেও না। আগামী বছর দুয়েকের মধ্যে কাজ শেষ হবে বলে জানান তিনি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকাপ্তাই হ্রদের চরে আটকে পড়া চট্টগ্রাম কলেজের ১৭৫ শিক্ষার্থীকে উদ্ধার
পরবর্তী নিবন্ধবিএনপি কর্মীদের দুই দফা হাতাহাতি