সমুদ্র সৈকতে বৃহদাকার দৈত্য! পরিবেশ সচেতনতার ডাক

কক্সবাজার প্রতিনিধি | বৃহস্পতিবার , ৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ at ৪:৩৬ পূর্বাহ্ণ

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের জনকোহালপূর্ণ সুগন্ধা পয়েন্ট। এখানের বালিয়াড়িতে দাঁড়িয়ে আছে এক বৃহদাকার দৈত্য। আকস্মিক দেখায় অনেকের বিভ্রম হতে পারেএটা আসল নাকি নকল দৈত্য। পরিবেশ দূষণকারী প্লাস্টিক বর্জ্য দিয়ে দিয়ে তৈরি করা হয়েছে কৃত্রিম এই দৈত্যটি। এ দৈত্য নজর কেড়েছে পর্যটকদের। মূলত পরিবেশে প্লাস্টিক বর্জ্যেরে দূষণ সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করতে প্রতীকী হিসেবে এই প্লাস্টিক দৈত্যটি তৈরি করা হয়েছে।

গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় পর্যটকসহ জনসাধারণকে প্রদর্শনের জন্য এই কৃত্রিম দৈত্যটি আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক মো. . মান্নান এটির উন্মেচন করেন। এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ শহীদুল আলম, বিচ ম্যাজিস্ট্রেট আজিম উদ্দিন, বিদ্যানন্দের গভর্নিং বডির সদস্য জামাল উদ্দিন প্রমুখ।

জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন প্লাস্টিক বর্জ্য দিয়ে এই দৈত্যটি তৈরি করেছে। কয়েক বছর ধরে পর্যটন মৌসুমে এই প্লাস্টিক দাবনটি তৈরি করেছে সংস্থাটি।

বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন সূত্র জানায়, সমুদ্রে প্লাস্টিক দূষণের ভয়াবহতা সম্বন্ধে মানুষকে সচেতন করতে সমুদ্র সৈকতে তৈরি করা হয়েছে প্লাস্টিকের দৈত্যটি। যে দানবটি রক্তমাংসহীন প্রতীকী হলেও যার হিংস্র থাবায় প্রতিনিয়ত ক্ষতবিক্ষত মানবদেহ, প্রকৃতি ও প্রাণবৈচিত্র। এই দানব প্লাস্টিক দূষণে প্রাণপ্রকৃতির বিরূপতার সাক্ষ্য দিচ্ছে। প্লাস্টিক দূষণে প্রাণপ্রকৃতির ক্ষতির মাত্রা দেখানো এবং পরিবেশে ক্ষতির এই বোধটি মানুষের মনে জাগাতে এই উদ্যোগ। এটি প্রদর্শনের সাথে আগামী তিন মাসব্যাপী একটা চিত্র প্রদর্শনীও থাকবে। দৈত্যটির অবয়বে দেখা গেছে, একটা অতি বিশাল দৈত্য পৃথিবীকে দুইভাগ করে ফেলেছে। পৃথিবীর বুক চিরে প্লাস্টিক বের হয়ে যাচ্ছে।

আয়োজক সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিন ও কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের অপার সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিদিনই সমাগম ঘটে লাখো পর্যটকের। যারা সৈকতের বালিয়াড়ি ও সাগরের পানিতে ফেলছে প্লাস্টিক পণ্য সামগ্রীর বর্জ্য। এতে উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে দূষণ এবং হুমকির মুখে পড়ছে সামুদ্রিক জীব ও মানবজীবন। আর প্রাণপ্রকৃতির দূষণ রোধে এবং সচেতনতা সৃষ্টিতে কঙবাজার জেলা প্রশাসন ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন নিয়েছে প্লাস্টিক বর্জ্যে তৈরি দানব ভাস্কর্যের প্রদর্শনীর মত ভিন্নধর্মী এ উদ্যোগ।

বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের স্বেচ্ছাসেবক মুহাম্মদ মুবারক জানান, প্রায় চার মাস ধরে কঙবাজার, ইনানী ও টেকনাফের সমুদ্র সৈকত থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে অন্তত ৮০ মেট্রিক টন প্লাস্টিক বর্জ্য। এসব বর্জ্যের একটা অংশ দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিল্পী এই ভাস্কর্যটি তৈরি করেন। আর এটি পুরো পর্যটন মৌসুম সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। এটাকে কেন্দ্র করে এখানে প্লাস্টিক দূষণবিরোধী সচেতনতামূলক পথনাটক ও সংগীতানুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে।

বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের গভর্নিং বডির সদস্য জামাল উদ্দিন বলেন, সরকারের পরিবেশ মন্ত্রণালয় প্লাস্টিক দূষণের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিয়েছে। সরকারের পলিসির সাথে সমন্বয় করে আমরা সারাদেশ থেকে স্বেচ্ছাশ্রমে ৫০০ মেট্রিক টন পরিত্যক্ত প্লাস্টিক রিসাইকেল করেছি। এতে করে প্লাস্টিক বর্জ্য ম্যানেজমেন্টে সরকারি খরচ যেমন কমবে তেমনি মানুষও জানতে পারবে কীভাবে রিসাইকেলের মাধ্যমে বর্জ্যকে সম্পদে রূপান্তর করা যায়। দেশব্যাপী এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে কঙবাজারে আমরা জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় ছয় মাসব্যাপী প্লাস্টিক দূষণ প্রতিরোধে কাজ করে যাব। প্লাস্টিক বর্জ্য রিসাইকেলের পাশাপাশি এখানে সচেতনতামূলক ভাস্কর্য প্রদর্শনীর আয়োজনও করছি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের ভাস্কর ও শিল্পী আবীর কর্মকার জানান, বিদ্যানন্দের ভিন্নধর্মী উদ্যোগ প্লাস্টিক দানবটি তৈরি করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের একদল শিল্পী। এতে তারা প্লাস্টিক বর্জ্যের পাশাপাশি ব্যবহার করেছেন কাঠ, পেরেক ও আঁটা (গাম) সহ আরও কয়েকটি উপকরণ। শিল্পীদের দাবি, এটি ওসান প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি বিশ্বের সর্ব বৃহৎ ‘প্লাস্টিক দৈত্য’। এটি বানাতে প্রায় ৬ মেট্রিক টন প্লাস্টিক ব্যবহৃত হয়েছে।

উন্মোচনকালে জেলা প্রশাসক মো. . মান্নান বলেন, সমুদ্র সৈকতকে প্লাস্টিক দূষণের হাত থেকে বাঁচাতে এই উদ্যোগ খুবই কাযকর ও টেকসই। সমুদ্র বিচরণ করা পর্যটককে সচেতন করতে ভাস্কর্য ও চিত্র প্রদর্শনী অবদান রাখবে। তাতেই উদ্যোগের সফলতা আসবে।

প্লাস্টিক বর্জ্যে নির্মিত এই দানবটি দেখতে ভিড় করেছেন সৈকতে ঘুরতে আসা পর্যটকরা। তারা বলছেন, এটি দেখতে এসে মানুষ দৈত্যদানবের ভয়ংকর রূপের মত প্লাস্টিক বর্জ্যের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে সচেতন হবেন। পাশাপাশি নিজেরাও প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহারে সজাগ থাকবেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসরকারকে না জানিয়ে ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানো হয়েছে : বশিরউদ্দীন
পরবর্তী নিবন্ধ৮ কুকুরছানা হত্যা : ঈশ্বরদীর সরকারি কর্মকর্তার স্ত্রী গ্রেপ্তার