সমুদ্রে অপরাধ-দুর্ঘটনায় শাস্তির বিধান

আইনের খসড়া মন্ত্রিসভায় অনুমোদন

| মঙ্গলবার , ৪ মে, ২০২১ at ১০:৪৯ পূর্বাহ্ণ

টেরিটোরিয়াল ওয়াটার্স এন্ড মেরিটাইম জোনস (সংশোধন) আইন, ২০২১ এর খসড়া মন্ত্রিসভায় চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়েছে। গতকাল অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভা বৈঠকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তুতকৃত এ আইনটির খসড়ায় অনুমোদন দেয়া হয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়েছে। খবর বাসসের।
এতদিন চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজে যেসব চুরি সংঘটিত হত তা প্যাইরেসির ঘটনা হিসেবে লিপিবদ্ধ হত। সংশোধিত খসড়া আইন, চুরি, জলদস্যুতা, সামুদ্রিক সহিংসতা বা সন্ত্রাসের সুস্পষ্ট সংজ্ঞা প্রদান করে এসব অপরাধ সংক্রান্ত বিধিবিধান সংযোজন করা হয়েছে। বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় জলসীমা দিয়ে অন্য দেশের জাহাজ ও ডুবোজাহাজের নির্দোষ অতিক্রমণ সংক্রান্ত বিস্তারিত ধারা যুক্ত করা হয়েছে। আইনে জলদস্যুতায় ব্যবহৃত জাহাজে পরিদর্শন, আরোহন, জব্দ, সম্পদ বাজেয়াপ্ত এবং গ্রেপ্তার সংক্রান্ত বিধিবিধান সংযুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া অভ্যন্তরীণ ও টেরটোরিয়াল সমুদ্রে পারমাণবিক অথবা ক্ষতিকর বর্জ্য নিক্ষেপ করার জন্য শান্তির বিধান রাখা হয়েছে।
খসড়া আইনে সমুদ্রে যেসব অপরাধ সংঘটিত হয় তা ভিন্নমাত্রিক হওয়ায় পৃথক মেরিটাইম ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠা করার বিধান রাখা হয়েছে। এছাড়া অনেক ক্ষেত্রে সমুদ্রে সংঘটিত অপরাধ বা দুর্ঘটনার সাক্ষী পাওয়া যায় না। এ কারণে অনেক অপরাধের সঠিক বিচার হয় না। তাই এ ধরনের অপরাধ বা দুর্ঘটনা সংক্রান্ত ভিডিও ফটো বা ইলেকট্রনিক রেকর্ডসকে সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করার বিধান আইনে সংযোজন করা হয়েছে।
মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত খসড়া সংশোধিত আইনে ৩৫টি ধারা রয়েছে। এসব ধারার উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্যসমূহ হচ্ছে, পুরাতন আইনটি যুগোপযোগী করতে আধুনিক মেরিটাইম সংক্রান্ত বিষয়াবলি ও প্রযুক্তির যেমন সংজ্ঞা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, বিদেশি জাহাজ বা ডুবোজাহাজের বাংলাদেশের জলসীমায় প্রবেশের ক্ষেত্রে ফৌজদারি এখতিয়ার ও দেওয়ানি এখতিয়ার উভয়ই অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, পূর্বের আইনের কনন্টিগোয়াস জোনের সংজ্ঞা ও সীমা ইউএনসিএলওএস ১৯৮২ এর সাথে সামঞ্জস্য রেখে সংশোধন করা হয়েছে। এ জোনের ব্যাপ্তি ১৮ থেকে ২৪ মাইল করা হয়েছে, ইউএনসিএলওএস ১৯৮২ এ একান্ত অর্থনৈতিক জোনের উল্লেখ থাকায় প্রস্তাবিত আইনে অর্থনৈতিক জোনের পরিবর্তে একান্ত অর্থনৈতিক জোন শব্দগুলো ব্যবহার করা হয়েছে এবং একান্ত অর্থনৈতিক জোনে সকল প্রাণিজ ও অপ্রাণিজ সম্পদের উপর সার্বভৌম অধিকার প্রতিষ্ঠা করার বিধান করা হয়েছে।
পূর্বের আইনে এরিয়া এবং হাই সি সংক্রান্ত কোন ধারা না থাকায় এরিয়াতে সম্পদ আহরণ, উত্তোলন ও জাহাজ পরিচালনার অধিকার ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এছাড়া খসড়া এ আইনে কন্টিনেন্টাল সেল্ফ এর সংজ্ঞা ও সীমা ইউএনসিএলওএস ১৯৮২ এবং আন্তর্জাতিক আদালতের মামলার রায় অনুযায়ী সংশোধন করা হয়েছে। এই অঞ্চলে নিরাপদ জোন নির্ধারণ, সাবমেরিন কেবল ও পাইপলাইন স্থাপন সংক্রান্ত বিধানাবলি সংযোজন করা হয়েছে। সংশোধিত খসড়া আইনে ওস্যান গভার্ন্যন্স, ব্লু-ইকোনমি মেরিটাইম কোপারেশন সংক্রান্ত নির্দেশনামূলক বিধিবিধান সংযোজিত হয়েছে। বিশেষ করে মেরিন সায়েন্টফিক রিচার্স এর পদ্ধতি ও অনুশাসন সংক্রান্ত বিধানাবলি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া পূর্বের আইনে সামুদ্রিক দূষণের জন্য সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা বা সর্বোচ্চ এক বছরের কারাদণ্ড শাস্তির বিধান ছিল যা সংশোধিত খসড়া আইনে সর্বোচ্চ তিন বছরের কারাদণ্ড অথবা সর্বনিম্ন দুই কোটি টাকা থেকে সর্বোচ্চ পাঁচ কোটি টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিপ্লবী তারকেশ্বর দস্তিদার স্মৃতি পরিষদের শোকসভা
পরবর্তী নিবন্ধমানসম্মত শিক্ষা প্রসারে সম্মিলিত প্রয়াস জরুরি