সমকাল ও শাশ্বতকালের দর্পণে আত্মজার প্রতি ও অন্যান্য কবিতা

শুক্লা ইফতেখার | শুক্রবার , ১০ ডিসেম্বর, ২০২১ at ৬:৫৬ পূর্বাহ্ণ

কবি জিললুর রহমান। দেশের কাব্যাঙ্গনে একটি সুপরিচিত নাম। উত্তর-আধুনিক নন্দনতত্ত্বের চিন্তক হিসেবেও তিনি সমধিক পরিচিত। কৌতূহলী পাঠকের জন্য সুসংবাদ, অতি সম্প্রতি খড়িমাটি, চট্টগ্রাম থেকে কবি জিললুর রহমানের পঞ্চম কাব্যগ্রন্থ ‘আত্মজার প্রতি ও অন্যান্য কবিতা’ প্রকাশিত হয়েছে। এতে বারোটি কবিতা গ্রন্থিত হয়েছে। প্রতিটি কবিতা কলেবরে দীর্ঘ যেমন, চিন্তার পরিধিতেও প্রশস্ত। কবির দর্শনাশ্রয়ী চিন্তার প্রসারণের প্রয়োজনেই কবিতাগুলো বর্ধিত পরিসর খুঁজে নিয়েছে। জিললুর রহমান তাঁর যাপিত জীবনের অভিজ্ঞতাকে দেখেন সমকাল ও শাশ্বতকালের দর্পণে। প্রতিটি কবিতা জীবন নিয়ে কবির অকপট আবেগ ও বোধের প্রসূন। চারপাশের জীবন ও জগতকে বিশাল ক্যানভাসে দেখার জন্য কবির ব্যাকুলতা অনুভব করা যায়। এই দেখাকে যথার্থ কাব্যভাষায় পরিস্ফুট করার নৈপুণ্যও বিশেষ লক্ষ্যণীয়। ব্যক্তি কবির ইচ্ছা-অনিচ্ছা, আকাঙ্ক্ষা, প্রত্যয় সহজ সুরে সমষ্টিতে গিয়ে মিলে। ‘আত্মজার প্রতি’ কবিতাটিতে তিনি যেমনটি লিখলেন, ‘ষাঁড়ের মোষের তাড়া খেয়ে / দৌড়ে যাচ্ছি স্পেনের রাস্তায়/ বিরামহীন এই যাত্রাপথে কন্যা../ তোমাকেও সঙ্গী করে নিলাম।
তাঁর কবিতার আর একটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করতেই হয়, স্বপ্ন ও বাস্তব, চেতন ও অবচেতনের মিথষ্ক্রিয়ায় ডানা মেলে তাঁর রচিত অনেক অনেক পংক্তি। আর এখানেই কবি জিললুর রহমান অনন্যতা অর্জন করেন। তাঁর কবিতায় চমকে যাবার মতো নয়, থমকে গিয়ে কোন কোন শব্দগুচ্ছ, বাক্যবন্ধ আবার পাঠের আহ্‌বান মেলে। তাঁর কবিতার বিষয়-ভাবনা বিভিন্ন পথে চলে।
এই যেমন, ‘জড়ো হলে ঝরে যাবো’ কবিতাটিতে করোনার মতন সমসাময়িক কালের ভয়াবহতম বিষয়টি বোধের গভীরতায় ও যথাযথ শব্দসৌকর্যে ফুটে ওঠে। অন্যদিকে কবি মাফলারের মতন বিশেষ ঋতুলগ্ন একটি সাধারণ বস্ত্রকে বহুমাত্রিকতায় প্রকাশ করেছেন ‘লাল মাফলার’ কবিতায়। এই কবিতায় শ্রেণিচ্যুত সমাজের মানুষগুলোর জীবনের কষ্ট, ব্যথা-বেদনা কাব্যিক বর্ণনাগুণে মর্র্মস্পশী হয়ে ওঠে। সংবেদনশীল কবি জিললুর রহমানের ‘আত্মজার প্রতি ও অন্যান্য কবিতা’ পাঠকের অভিনিবেশ কেড়ে নেবে, এই কথা অনায়াসে বলা যায়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধশাস্তি
পরবর্তী নিবন্ধখাবার নিয়ে এতিমদের পাশে মমতাজ চৌধুরী ফাউন্ডেশন