সব পথ মিশে গেল জামালখানে

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২২ at ৬:০০ পূর্বাহ্ণ

বাংলার সোনার মেয়েদের হাত ধরে ১৯ বছর পর দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবলে শিরোপা জয়ের স্বাদ পেয়েছে লাল-সবুজের দেশ। ইতিহাস গড়ে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জয়ী দলের সদস্য বৃহত্তর চট্টগ্রামের পাঁচ নারী ফুটবলারকে উষ্ণ অভ্যর্থনায় বরণ করে নিল স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সংবাদপত্র দৈনিক আজাদী। বিজয়ী দলের উচ্ছ্বসিত এ পাঁচ তারকাকে এক নজর দেখতে গতকাল বিকেলে দলমত নির্বিশেষে সকলের গন্তব্য ছিল একটাই-জামালখান।
নগরীর জামালখান মোড়ে ডা. আবুল হাশেম চত্বরে পাঁচ ফুটবলকন্যা জাতীয় পতাকা হাতে উঠে আসেন মঞ্চে। হাজার হাজার দর্শক হাত নেড়ে মুহুর্মুহু করতালিতে অভিনন্দিত করেন তাদের। বহুদূর থেকে ভেসে আসছিল হৃদয় মোচড়ানো ক’টি শব্দ, ‘আঁরার মাইয়্যা, আঁরার গর্ব’। ফুটবলকন্যাদের আসার খবর পেয়ে নির্দিষ্ট সময় বিকেল ৪টার আগে থেকেই জামালখান চত্বরে ও আশপাশে জড়ো হতে শুরু করেন হাজার হাজার মানুষ। এ যেন জনস্রোতের জোয়ার। হুড খোলা জিপে মেয়েদের নিয়ে আসছিলেন আজাদীর পরিচালনা সম্পাদক ওয়াহিদ মালেক। মেয়েরা যখন আসছিলেন, তখন অনেকের চোখ-মুখের অভিব্যক্তিতে অবিশ্বাস। রাস্তার দুই ধারে মানুষের ঢল। শুধু তাই নয়, বড় বড় ভবনের ছাদ, বারান্দায় দাঁড়িয়ে অভিনন্দন জানাচ্ছিলেন অনেকে।
ধীরলয়ে এগোতে থাকা গাড়িবহর যতক্ষণ পর্যন্ত দৃষ্টিসীমার বাইরে গেল ততক্ষণ পর্যন্ত চলে অভিনন্দন। হতাশ করেননি পাঁচ কন্যাও। হাত নেড়ে সাড়া দিচ্ছিলেন তারা। অনেকে তো গানের তালে তালে মন খুলে নেচেছেন।
দৈনিক আজাদীর পরিচালনা সম্পাদক ওয়াহিদ মালেক জানালেন, আমাদের মেয়েদের হয়ত রাজসিক সংবর্ধনা দিতে পারিনি। তবে এমন এক সংবর্ধনায় তাদের বরণ করতে চেয়েছি, যাতে হৃদয়ের উষ্ণতা থাকে।
ক্যামেরার চোখও ছিল ব্যস্ত। সামপ্রতিককালে কোনো খেলার ইভেন্ট কাভার করতে সংবাদমাধ্যমের এমন ভিড় আর হয়নি। সংবাদকর্মীদের পাশাপাশি প্রচুর ইউটিউবারও ছিলেন সেখানে।
মঞ্চে এক ফাঁকে আলাপকালে ঋতুপর্ণা চাকমার কাছে জানতে চাই, এরা তো কিছুদিন আগেও আপনাকে চিনত না। আজ কতজন কাজ ফেলে আপনাদের দেখতে এসেছে। এই যে হাজার হাজার মানুষ আপনার নামে জয়ধ্বনি দিচ্ছে, কেমন লাগছে?
কিছুক্ষণ নীরবতা। হাতে ধরা আজাদীর পক্ষ থেকে দেওয়া এক লাখ টাকার চেকের রেপ্লিকা। ওদিকে এক পলক তাকিয়ে বললেন, অনেক কথা মনে পড়ছে। আমাদের ফুটবল খেলা নিয়ে অনেক সমালোচনা হতো। নানা সমালোচনা সহ্য করে এই জায়গায় এসেছি। মানুষ যে এত ভালোবাসে তা আগে বুঝতে পারিনি।
পাশে থাকা মনিকা চাকমাকে দেখিয়ে ঋতু বলেন, মনিকার বাবা ফুটবল খেলা পছন্দ করতেন না। বাবার চোখ ফাঁকি দিয়ে পাড়ার ফুটবল খেলায় সে বড়বোনের সাথে অংশ নিত। ঋতু জানালেন, ২০১৯ সালে বঙ্গমাতা অনুর্ধ্ব-১৯ নারী আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে মঙ্গোলিয়ার বিপক্ষে মনিকা যে গোলটি করেছিল, ফিফা সেই গোলটিকে ‘জাদুকরী গোল’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিল।
কিছুটা লাজুক মনিকা তখন মাথা নিচু করে টিমমেটের মুখে নিজের প্রশংসা শুনছিল। মুখে ছিল মুচকি হাসি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধভালো কাজে পাশে থাকার চেষ্টা করবে আজাদী
পরবর্তী নিবন্ধআজাদীর সংবর্ধনায় সিক্ত পাঁচ ফুটবলকন্যা