সবুজ পাহাড়ে নিত্যনতুন বসতি

বায়েজিদ-ফৌজদারহাট লিংক রোড

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১ at ৮:৩৯ পূর্বাহ্ণ

বায়েজিদ-ফৌজদারহাট লিংক রোডের দুই ধারে সবুজ পাহাড়গুলোতে নতুন নতুন কোপ বসাচ্ছে পাহাড়খেকোরা। কিছু কিছু পাহাড় কাটার বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর ব্যবস্থা নিলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে রাতের আঁধারে পাহাড় কাটার ঘটনা আড়ালে পড়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুম এবং করোনাকালে প্রশাসনের নজরদারি কম থাকায় সবুজ পাহাড়গুলো কেটে তৈরি করা হয়েছে নিত্যনতুন বসতিও। মূলত চট্টগ্রাম মহানগর এবং জেলা সীমানার মাঝামাঝিতে লিংক রোডটি তৈরি হওয়ায় পাহাড়খেকোদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতেও হিমশিম খেতে হয় পরিবেশ অধিদপ্তরকে।
স্থানীয় লোকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সড়কটির পাশের পাহাড়গুলোতে চলছে দখল-বেদখল। এজন্য পাহাড় কেটে বসতি তৈরি করে নিজেদের অবস্থান পোক্ত করছে প্রভাবশালী দখলদাররা। পাহাড় কেটে অবৈধ বসতি নির্মাণকারীদের মধ্যে রয়েছেন রাজনৈতিক প্রভাবশালীরাও। এসব পাহাড় কাটার সাথে ব্যবহার করা হচ্ছে পাশের ছিন্নমূলের সন্ত্রাসীদেরও।
সরেজমিনে দেখা গেছে, নগরীর বায়েজিদ-ফৌজদারহাট সংযোগ সড়ক লাগোয়া সড়কটির দুই ধারের পাহাড়গুলোতে নতুন নতুন কোপ বসেছে। আধুনিক যন্ত্র ব্যবহার করেও পাহাড়গুলো কাটা হচ্ছে নিমিষে। লিংক রোড সংলগ্ন নতুন তৈরি করা রাস্তা দিয়ে জঙ্গল সলিমপুর প্রবেশের মুখ লাগোয়া খাজা নুরনবী শাহ মাজারের পাহাড়টিতে চলছে নতুন নতুন দখল। এখানে গত কয়েকমাস ধরে তৈরি করা হয়েছে সিসি ঢালাই সীমানা প্রাচীর। প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের চোখ এড়িয়ে পাহাড়ের উঁচু থেকে নীচে পর্যন্ত তৈরি করা এ প্রাচীর নিয়ে সমালোচনা উঠেছে। শুধু প্রাচীর নয়, গত কয়েক মাসে নতুন করে পাহাড় কেটে বসতিগুলোর পরিধি বাড়ানো হয়েছে। পাহাড় কেটে বসানো হয়েছে পানির ট্যাংক, নতুন করে বানানো হয়েছে সেমি পাকা দালানও।
এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মহানগর কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মিয়া মাহমুদুল হক দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘মাজারের পাশের পাহাড়ের ওই স্থানে বসতি তৈরি করায় আগে জরিমানা করা হয়েছিল। এখন নতুন করে কাটার অভিযোগ পেয়ে থাকলে আমরা আবারো অভিযান চালাবো’। তিনি বলেন, ‘আগের অভিযানের সময় টিনের তৈরি সীমানা ছিল। এখন পাকা করা হলে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’ অন্যদিকে গত বছরের ২০ জুলাই লিংক রোডের অদূরে জালালাবাদ মাঝের ঘোনা এলাকায় জেলা প্রশাসন উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে অনেক ঝুঁকিপূর্ণ ও অবৈধ বসতি উচ্ছেদ করলেও পুনরায় গড়ে উঠেছে এসব বসতি। আবার মাঝের ঘোনা প্রবেশের মুখে বেশ কয়েকটি পাহাড় কেটে তৈরি করা হয়েছে নতুন নতুন বসতি।
এসব পাহাড় নয়, লিংক রোডের প্রকল্প ঠিকাদার স্পেক্ট্রার প্রজেক্ট অফিসের পরের আরেকটি পাহাড়ের মাঝামাঝিতে স্ক্যাভেটর দিয়ে আড়াআড়ি কেটে দেওয়া হয়েছে। এতে বর্ষায় ধীরে ধীরে ধসে পড়বে পাহাড়টি। স্থানীয় বেশ কয়েকজনের সাথে কথা হলেও কেউ মুখ খুলতে রাজি হননি। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুই বয়োবৃদ্ধ বলেন, ‘এখানে পাহাড়ে যারা বসতি বানিয়ে রয়েছেন তারা আসলে খেটে খাওয়া গরীব মানুষ। অনেকে আছেন নদীভাঙ্গন এলাকার। এখানে বড় বড় প্রভাবশালীরা বেশিরভাগ পাহাড় দখল করে প্লট বানিয়ে স্ট্যাম্পের মাধ্যমে গরীব মানুষের কাছে বিক্রি করে দিচ্ছেন। যারা কিনছেন তারাই বিপদে পড়ছেন। বিদ্যুতের লোকজন ম্যানেজ করে বিদ্যুতের সংযোগও নেওয়া হচ্ছে।’ তারা বলেন, ‘এখানে অনেকে টিনশেড বাসা বানিয়ে ভাড়াও দিচ্ছেন। বর্ষাকাল এলে জেলা প্রশাসন ও স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাঝে মধ্যে উচ্ছেদ করা হলেও পুনরায় এখানে গড়ে উঠে নতুন নতুন স্থাপনা। এবার করোনা হওয়ায় উচ্ছেদও হয়নি। এতে আগের চেয়ে বর্তমানে অবৈধ বসতির সংখ্যা দিনে দিনে বাড়ছে।’
এ বিষয়ে কথা হলে পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক জমির উদ্দিন দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘বায়েজিদ লিংক রোডটির কিছু অংশ মেট্রো অঞ্চলের, কিছু অংশ জেলা সীমানার। এতে কোন পাহাড় কোথায় সেটা চিহ্নিত করে, পাহাড় কাটার সাথে যারাই জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

পূর্ববর্তী নিবন্ধবেহাল সড়কে দুর্ভোগ
পরবর্তী নিবন্ধকলেজের নাম থেকে ‘বিশ্ববিদ্যালয়’ সরানোর নির্দেশ