সবার মান বাড়িয়ে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে হবে

| বুধবার , ১২ জানুয়ারি, ২০২২ at ৬:২১ পূর্বাহ্ণ

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে বিদেশে বাংলাদেশের কূটনীতিকদের তৎপরতা বাড়ানোর ওপর জোর দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ইদানীং দেশের কিছু বিষয়ে ঝামেলা হচ্ছে। কিছু প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে অভিযোগ এসেছে। এগুলো বানোয়াট, এসবের কোনো ভিত্তি নেই। যেখানে যেভাবে দরকার, সেভাবে সঠিক তথ্য তুলে ধরতে হবে।
বিশ্বের ৮১টি বাংলাদেশ মিশনের প্রধানদের ভার্চ্যুয়াল সম্মেলনে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এ নির্দেশনা দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ করতে হয় যে, র‌্যাব ও বাহিনীটির সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পর এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলো। তবে এতে মিশনপ্রধানদের দেওয়া নির্দেশনায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কিন নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি উল্লেখ করেননি।
পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রবাসী বাংলাদেশি ও বিদেশি নাগরিকদের জন্য ব্যবসা-বিনিয়োগসহ নানা ক্ষেত্রে সেবার মান বাড়িয়ে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার তাগিদ দেন। পাশাপাশি তিনি ২০৩১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উচ্চমধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধিশালী দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কৌশলগত কূটনৈতিক পদক্ষেপ হিসেবে অর্থনৈতিক কূটনীতি ও জনকূটনীতি বাস্তবায়নে বিভিন্ন নির্দেশনা দেন।
রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে আলোচনায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী কনস্যুলার সেবাদানকারী বেশির ভাগ মিশনের বিরুদ্ধে বিদ্যমান অভিযোগগুলোর বিস্তারিত তুলে ধরেন। একই সঙ্গে এসবের আশু নিষ্পত্তি কামনা করেন। ওদিকে মিশনগুলোতে পাসপোর্ট পেতে যে সীমাহীন ভোগান্তি চলছে, তার খণ্ডচিত্র মিশনপ্রধানেরা তুলে ধরেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, দূতাবাস ও মিশনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মচারীরা দায়সারা কাজ করেন। ফলে মিশনপ্রধানদের বদনাম হয়। তিনি দায়সারা কাজ সহ্য না করার নির্দেশনা দেওয়ার পরামর্শ দেন। মন্ত্রী আরও উল্লেখ করেন, অভিযোগ আছে মিশনগুলোতে বারবার ফোন করেও কাউকে পাওয়া যায় না। এ জন্য সপ্তাহে সাত দিন ২৪ ঘণ্টা ‘হট লাইন’ চালু রাখার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। সেটা করতে প্রয়োজনে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে জনবল নিয়োগ দেওয়া হবে। কিন্তু প্রবাসীদের সেবা দিতে হবে। বিশ্বের বড় বড় দেশ তাদের নিজ দেশের ব্যবসা বাড়ানোর জন্য রাষ্ট্রদূতদের কাজ করার অনুরোধ করে থাকে জানিয়ে মন্ত্রী আব্দুল মোমেন বলেন, ‘তারা পারলে আমরা কেন পারব না?’
বিশেষজ্ঞরা বলেন, বাংলাদেশের জন্য বিদেশে তিনটি কাজই প্রধান- ১. নতুন নতুন শ্রমবাজার অন্বেষণ, ২. নতুন রপ্তানি বাজার অন্বেষণ এবং ৩. দেশে বিনিয়োগের জন্য বিদেশি উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করা। যে অভিবাসী শ্রমজীবীরা দেশের মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা পাঠিয়ে থাকেন তাদের সংশ্লিষ্ট মিশন থেকে আরও সেবা প্রাপ্য। অভিযোগ রয়েছে, তা তারা পান না। এ ছাড়া বিদেশে অবস্থানরত অনাবাসী বাংলাদেশিদের দিক থেকেও দূতাবাসের সহযোগিতা না পাওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এসব বিষয় অবশ্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী খোলাখুলিভাবেই বলেছেন।
বাংলাদেশ মিশনের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী যেন সেবাগ্রহীতাদের সঙ্গে কোনো ধরনের দুর্ব্যবহার না করেন, সেদিকে খেয়াল রাখতে নির্দেশনা দিয়ে মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের সব দূতাবাসে সেবার গুণগত মান বাড়াতে হবে। তিনি উল্লেখ করেন, গত বুধবারও বিদেশে বাংলাদেশের একটি মিশন সম্পর্কে বড় অভিযোগ পেয়েছেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রবাসী বাংলাদেশি ও বিদেশি নাগরিকদের জন্য ব্যবসা-বিনিয়োগসহ নানা ক্ষেত্রে সেবার মান বাড়িয়ে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার যে তাগিদ দিয়েছেন, তা অত্যন্ত গুরুত্ববহ। কেননা, বাংলাদেশের এখন লক্ষ্য হচ্ছে উন্নত দেশের মর্যাদা অর্জন করা। বাংলাদেশের এলডিসি উত্তরণের সুপারিশ অনুমোদনের পর যে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি মেলেছে, তার ফলে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে নিরাপদবোধ করবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে দেশে বিদেশি বিনিয়োগ আনার উদ্যোগ নিতে হবে। তবে এজন্য অবকাঠামোর উন্নয়ন, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা নিরসন, দুর্নীতি রোধ, সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। একই সঙ্গে রাজনৈতিক বা অন্যান্য ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা দূর করে সার্বিকভাবে আস্থার পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য বিশ্বব্যাংকের ব্যবসা খরচ ও পরিবেশের যে সূচক রয়েছে তাতে আরও উন্নয়ন করতে হবে। তার জন্য বেশ কিছু সংস্কার প্রয়োজন। যাতে দ্রুত ব্যবসা শুরু করা যায়। তাঁরা আরও বলেন, দেশে বিদেশি বিনিয়োগ এলে একদিকে শিল্প স্থাপন হবে, অন্যদিকে উৎপাদন বাড়বে। তাতে কর্মসংস্থানও বাড়বে। আর কর্মসংস্থান বাড়লে দারিদ্র্যও পর্যায়ক্রমে কমবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে