সংস্কার দাবিতে রাস্তায় মানুষ

এক সপ্তাহের আল্টিমেটাম দিলেন সুজন

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২১ at ৫:১৩ পূর্বাহ্ণ

দীর্ঘদিন ধরে বেহাল বিমানবন্দর সড়ক সংস্কার না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা। গতকাল শনিবার সকালে সড়কটি সংস্কারের দাবিতে মানববন্ধনও করেছে এলাকাবাসী। সেখানে সবার একটাই বক্তব্য ছিল, দ্রুত মেরামত করা হোক খানাখন্দে ভরা বিমানবন্দর সড়ক। মুক্তি দেয়া হোক দুর্ভোগ ও ভোগান্তি থেকে। ওই মানববন্ধনে অংশ নিয়ে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাবেক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন এক সপ্তাহের মধ্যে সড়কটির ক্ষতিগ্রস্ত অংশ সংস্কারের আল্টিমেটাম দেন। অন্যথায় জনগণের স্বার্থে এলাকাবাসীকে সাথে নিয়ে কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হবেন বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।
বন্দরটিলা চত্বরে রাহে ভান্ডার তরুণ আশেকান পরিষদ (রাতআপ) বন্দর শাখা এ মানববন্ধনের আয়োজন করে। এতে এলাকার শত শত লোক অংশ নেন। বেপজা স্কুল এন্ড কলেজ, ব্যারিস্টার সুলতান আহমদ ডিগ্রি কলেজ সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শতাধিক শিক্ষার্থী সংহতি প্রকাশ করে মানবন্ধনে অংশ নেন। চসিক সূত্রে জানা গেছে, জরুরি ভিত্তিতে সড়কটি সংস্কারের অনুরোধ জানিয়ে গত ১২ সেপ্টেম্বর সিডিএকে একটি চিঠি দিয়েছিল চসিক। এর আগে সিএমপির ট্রাফিক বিভাগের এক প্রতিবেদনে সড়কটির বেহাল দশার জন্য ৫টি কারণ উল্লেখ করা হয়েছিল। প্রতিবেদনটিতে সড়কে খানাখন্দ থাকায় একাধিক সমস্যার কথাও তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে দুর্ঘটনার প্রবণতা বৃদ্ধি পাওয়া, যানবাহনের গতি ধীর হয়ে যাওয়া, রাস্তায় জলাবদ্ধতা হওয়া এবং সড়কের প্রশস্ততা কমে যাওয়া।
চসিকের চিঠি ও ও সিএমপির ট্রাফিক বিভাগের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিমানবন্দর সড়কের বেহাল দশার জন্য এলিভেটেড এঙপ্রেসওয়ের চলমান নির্মাণ কজ দায়ি। এক্ষেত্রে বলা হচ্ছে, এলিভেটেডে এঙেপ্রেসওয়ের পিলার বা স্প্যান স্থাপনের জন্য খোঁড়াখুঁড়ি করা হয়। এর পর পিলার স্থাপন হলেও গোড়া ভরাট না করায় চর্তুদিকে সৃষ্টি হয়েছে গর্ত। ধীরে ধীরে যা বড় হয়েছে। অবশ্য সিডিএর দাবি, ড্রেন না থাকায় রাস্তাটিতে সবসময় পানি জমে থাকে। বাসা-বাড়ির সাথে জোয়ারের পানিতে ডুবে যায় বিমানবন্দর সড়ক। এতে রাস্তার অবস্থা শোচনীয় হয়েছে।
উল্লেখ্য, সড়টির বেহাল দশা নিয়ে সম্প্রতি দৈনিক আজাদীতে একাধিক সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল। এদিকে গতকাল রাতআপ আয়েজিত মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন নাগরিক উদ্যোগের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হাজী মো. ইলিয়াছ, সদস্য সচিব হাজী মো. হোসেন, মানবাধিকার কর্মী ওয়াহিদ হাসান, রাতআপ কেন্দ্রীয় সাবেক সভাপতি শাহজাদা সাইফুল আলম নাইডু, বন্দর থানা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ কামরুল হোসেন, পতেঙ্গা থানা আওয়ামী লীগ নেতা সমীর মহাজন লিটন, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উপকমিটির সাবেক সদস্য ওয়াসিম আকরাম, মো. শাহজাহান, পতেঙ্গা থানা ছাত্রলীগ সভাপতি হাসান হাবীব সেতু, অ্যাডভোকেট বরকত উল্লাহ খান, পতেঙ্গা থানা ছাত্রলীগ সভাপতি হাসান হাবিব সেতু।
খোরশেদ আলম সুজন অভিযোগ করে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে মানুষ কষ্ট পাচ্ছে। মনে হচ্ছে, উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ড প্রশ্নবিদ্ধ করতেই এখানে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর হাজার হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে যে বা যারা গাফিলতি করবে তাদেরকে জনগণ কোনদিনও ক্ষমা করবে না। তিনি আগামী শুক্রবারের মধ্যে সড়কটি সংস্কার করে গাড়ি চলাচলের উপযোগী করে তুলতে সময় বেধে দেন।
তিনি বলেন, সড়কের ভাঙা দশার জন্য মানুষ যে ভারী ভারী যানবাহনের চাপায় পড়বে না তার নিশ্চয়তা কে দিবে? বৃষ্টি শুরু হলে কাদাপানির ভোগান্তি আর বৃষ্টি কমলে শুরু হয় ধুলো ঝড়। দেখে মনে হবে যেন একটা যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকার বাসিন্দা এরা। অব্যাহত ধুলিকনায় অসুস্থ হয়ে পড়ছে শিশু ও বৃদ্ধসহ সর্বস্তরের মানুষ। মানুষের ফুসফুসে ক্যান্সার বাসা বাঁধছে। এরকম একটি অমানবিক পরিস্থিতিতে বসবাস করছে এলাকার জনসাধারণ। যাদের কোন স্বাভাবিক জীবনধারা নেই বললেই চলে। তিনি বলেন, নষ্ট সড়কের জন্য লাখো পথচারী এবং যানবাহনের যাত্রীদের সীমাহীন ভোগান্তি যেন শেষ হচ্ছে না। রোগীকে হাসপাতাল নেওয়ার মুহূর্তে এ পর্যন্ত তিনজন রোগী রাস্তায় মারা গেছেন।
প্রসঙ্গত, বিমানবন্দর সড়কের সাথে রয়েছে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, চট্টগ্রাম বন্দর, দুটি ইপিজেড, কলকারখানা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বেসরকারি কন্টেইনার ডিপো, ব্যাংক, নৌ ও বিমান বাহিনীর সব গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। শুধুমাত্র দুটি ইপিজেডে কাজ করেন কয়েকলাখ পুরুষ ও নারী শ্রমিক।

পূর্ববর্তী নিবন্ধইভ্যালি অবসায়ন করে দেনা পরিশোধের প্রস্তাব
পরবর্তী নিবন্ধরাউজানে ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যুৎ টাওয়ার