শ্রমশক্তির নতুন বাজার ও খাত খুঁজে বের করতে হবে

| বৃহস্পতিবার , ২৩ ডিসেম্বর, ২০২১ at ৬:২০ পূর্বাহ্ণ

মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খোলার সুখবর প্রকাশিত হয়েছে দৈনিক আজাদীতে। গত ২০ ডিসেম্বর প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, দীর্ঘ তিন বছর পর বাংলাদেশ থেকে আবারও কর্মী নেওয়ার জন্য নতুন একটি সমঝোতা স্মারকে সই করেছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ মালয়েশিয়া। গত রোববার কুয়ালালামপুরে বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ এবং মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রী এম সারাভানান এই সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেন। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এই সমঝোতার আওতায় বাংলাদেশি কর্মীদের মালয়েশিয়ায় নেওয়া, আবাসন, এবং দেশে ফেরত পাঠানোসহ মালয়েশিয়াপ্রান্তের যাবতীয় খরচ বহন করবেন নিয়োগকর্তা।
নিয়োগকর্তা নিজ খরচে মালয়েশিয়ার রিক্রুটিং এজেন্ট নিযুক্ত করতে পারবে। মালয়েশিয়ায় পৌঁছানোর পর বাংলাদেশি কর্মীর ইমিগ্রেশন ফি, ভিসা ফি, স্বাস্থ্য পরীক্ষার খরচ, ইনস্যুরেন্স সংক্রান্ত খরচ, কোভিড পরীক্ষার খরচ, কোয়ারেন্টিন সংক্রান্ত খরচসহ সব ধরনের ব্যয় মালয়েশিয়ার নিয়োগকর্তা বা কোম্পানি বহন করবে। মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, নিয়োগকর্তা কর্মীর মানসম্মত আবাসন, বীমা, চিকিৎসা এবং কল্যাণ নিশ্চিত করবে। ফলে আশা করা যায়, কর্মীর অভিবাসন খরচ অনেক কমে যাবে।এর আগে মালয়েশিয়া সরকার তাদের পাঁচটি খাতে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ের সমন্বয়ে জিটুজি প্লাস পদ্ধতিতে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিতে ২০১৬ সালে সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেছিল। পাঁচ বছর মেয়াদী ওই চুক্তির আওতায় লোক পাঠানোর অনুমতি দেওয়া হয়েছিল ১০টি জনশক্তি রপ্তানিকারক এজেন্সিকে। কিন্তু প্রবাসী এক বাংলাদেশি ব্যবসায়ীর নেতৃত্বে মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগসাজশে একটি চক্র ওই ১০ এজেন্সিকে নিয়ে সিন্ডিকেট করে শ্রমিকদের কাছ থেকে দুই বছরে ২০০ কোটি রিঙ্গিত হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ ওঠে। এরপর ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর থেকে নতুন করে বাংলাদেশি কর্মীদের আর ভিসা দেয়নি মালয়েশিয়া। তবে আগে যারা ভিসা পেয়েছিলেন তারা পরেও মালয়েশিয়া যাওয়ার সুযোগ পান। করোনার দাপট কমে এলে মালয়েশিয়া সরকার আবারও বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নিতে সম্মত হয়। এর মধ্য দিয়ে মালয়েশিয়ায় বিভিন্ন খাতে বহু বাংলাদেশি কর্মীর কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে বলে আশা করছেন বাংলাদেশ সরকারের কর্মকর্তারা।
করোনা সংক্রমণের কারণে শুধু মালয়েশিয়া নয়, অন্যান্য দেশেও কর্মী পাঠানো হয়েছিল। কোনো কোনো দেশে বন্ধই ছিল। তবে করোনার শুরুতে বিদেশে শ্রমশক্তি রপ্তানির হার কমলেও প্রবাসীদের পাঠানো অর্থের পরিমাণ বেশি ছিল। এর অন্যতম কারণ, করোনাকালে হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ পাঠানো কমে যাওয়ায় বৈধ পথে বেশি অর্থ এসেছে। সরকার প্রবাসীদের পাঠানো অর্থের ওপর যে ২ শতাংশ প্রণোদনা দিয়েছে, তাতেও তাঁরা দেশে টাকা পাঠাতে উৎসাহিত হয়েছেন।
পত্রিকান্তরে প্রকাশিত তথ্যমতে, গত পাঁচ বছরের মধ্যে মহামারি করোনার কারণে ২০১৯ ও ২০২০ সালে বিদেশে সবচেয়ে কম কর্মী পাঠানো গেছে। বেসরকারি জনশক্তি রফতানিকারকরা বলছেন, করোনাভাইরাসের কারণে গত দুই বছর বিশ্বের বেশিরভাগ দেশ কর্মী নিয়োগ বন্ধ রেখেছিল। কিন্তু পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর যখন শুরু হলো তখন বেশ কিছু দেশ শ্রমজীবী নিয়োগে তাদের পলিসিতেই পরিবর্তন এনেছে।
বলা যায়, এখন শ্রমবাজার একে একে খুলতে শুরু করেছে। সৌদি আরব এখন আগের মতোই জমজমাট হচ্ছে। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর সংযুক্ত আরব আমিরাত শ্রমিক নেওয়া শুরু করেছে। সেখানে একটা বড় সুখের খবর। এ সব দেশে শ্রমিক যাওয়া শুরু করেছে। পাশাপাশি অন্যতম বড় শ্রমবাজার মালয়েশিয়াতে যে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছিল, তা নিরসন হয়েছে।
ফলে জনশক্তি রফতানির বাজার ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বলা যায়। করোনাকালে বিদেশের শ্রমবাজারে যে ধস নেমেছে, তা পূরণ করতে তিনটি বিষয়ের ওপর জোর দিতে হবে বলে বিশেষজ্ঞরা মত প্রকাশ করেছেন। সেগুলো হলো : আমদানিকারক দেশগুলোর চাহিদামাফিক আমাদের কর্মীদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দেওয়া; শ্রমশক্তির নতুন বাজার ও খাত খুঁজে বের করা এবং বিদেশে গিয়ে আমাদের শ্রমিকেরা যাতে অহেতুক হয়রানির শিকার না হন, সে বিষয়ে দূতাবাসগুলোর তদারকি জোরদার করা। তাঁরা বলছেন, মালয়েশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরবসহ যে সব দেশে বাংলাদেশের শ্রমশক্তির চাহিদা বেশি, সেসব দেশে কূটনৈতিক যোগাযোগের মাধ্যমে দ্রুত আমলাতান্ত্রিক বাধাগুলো দূর করা জরুরি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে