শ্রমবাজারে বাংলাদেশের অবস্থান দৃঢ় করতে হবে

| শুক্রবার , ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২২ at ৬:০৯ পূর্বাহ্ণ

এক পরিসংখ্যানে জানা যায়, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের ১ কোটি ৩০ লাখ মানুষ প্রবাসে রয়েছে। তাদের পাঠানো অর্থ দিয়েই বাংলাদেশ নতুন গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে রেমিট্যান্স এসেছে ১৪৯৮১.৬৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার যা ছিল তার আগের অর্থ বছরের তুলনায় ২ শতাংশ বেশি। বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের ক্ষেত্রে পণ্য রপ্তানি খাত সবার শীর্ষে থাকলেও সার্বিক বিচারে জাতীয় অর্থনীতিতে এ খাতের অবদান তথা মূল্য সংযোজনের হার তুলনামূলকভাবে কম। কারণ পণ্য রপ্তানি বাবদ যে অর্থ উপার্জিত হয় এর একটি বড় অংশই কাঁচামাল আমদানিতে চলে যায়। কিন্ত জনশক্তি রপ্তানি খাত এমনই এক অর্থনৈতিক খাত যার উপার্জিত বৈদেশিক মুদ্রার পুরোটাই জাতীয় অর্থনীতিতে মূল্য সংযোজন করে।
গত ২৬ সেপ্টেম্বর দৈনিক আজাদীতে ‘চাঙ্গা জনশক্তি রপ্তানি খাত’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, করোনা মহামারির ধাক্কা কাটিয়ে স্বাভাবিক হচ্ছে জনশক্তি রপ্তানি খাত। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত সারাদেশ থেকে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে পাড়ি দিয়েছেন ৮ লাখ ২০ হাজার ৮১৪ জন। এরমধ্যে কেবল চট্টগ্রাম থেকে গেছে ৫০ হাজার ৬২৪ জন। এর আগে গত ২০২১ সালের পুরো বছরে ২৪ হাজার ৬১৭ জন এবং ২০২০ সালে বিদেশে পাড়ি দেন ১১ হাজার ৪৩০ জন। গত বছরের হিসেবেও এখন পর্যন্ত দ্বিগুণ জনশক্তি রপ্তানি বেড়েছে। এতে বাড়ছে বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ।
জনশক্তি রপ্তানি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আমাদের দেশের শ্রম বাজার প্রধানত মধ্যপ্রাচ্য ভিত্তিক। মোট জনশক্তি রপ্তানির ৯০ ভাগ হয়ে থাকে সৌদি আরব, কাতার, ওমান এবং আরব আমিরাতে। এর বাইরে এশিয়ার চীন, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর এবং দক্ষিণ কোরিয়াতেও ভাগ্য বদলের উদ্দেশ্য অনেকে পাড়ি দিচ্ছেন। এছাড়া পূর্ব ইউরোপের দেশ রুমানিয়া, পোল্যান্ড, মাল্টা এবং বুলগেরিয়ার মতো দেশগুলোতে এখন অনেকে পাড়ি দিচ্ছেন। এছাড়া আফ্রিকার মোজাম্বিক, ইথিওপিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকাতেও অনেকে যাচ্ছেন। তবে এক সময় কোনো দক্ষতা ছাড়াই অনেকে বিদেশে যেতো। বর্তমানে সেই ধারা পরিবর্তন হয়েছে। যেমন কুয়েতে বাংলাদেশ থেকে প্রচুর পরিমাণে প্রশিক্ষিত নার্স যাচ্ছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, দেশে প্রতি বছর যে পরিমাণে রফতানি হয়, তার চেয়ে বেশি আমদানি হয়। ফলে বৈদেশিক বাণিজ্যে বড় ঘাটতি হচ্ছে। রফতানির চেয়ে আমদানির পরিমাণ বাড়ায় এ ঘাটতির পরিমাণও বেড়ে যাচ্ছে। এ ঘাটতি মেটাতে রেমিট্যান্স বড় ভূমিকা রাখছে। দেশের মোট আমদানির মধ্যে ২৭ থেকে ৩০ শতাংশ ব্যয় মেটানো হচ্ছে রেমিট্যান্সের অর্থ দিয়ে। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, শুধু চলতি বছরে এপ্রিল মাসে ২ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। দেশের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ২ থেকে ২.৫ কোটি মানুষ প্রবাসীদের ওপর নির্ভরশীল।
এ কথা স্বীকার করতেই হবে যে, চলমান বৈশ্বিক সংকটে দেশের অর্থনীতির অক্সিজেন হিসেবে কাজ করছে প্রবাসী বাংলাদেশিদের পাঠানো রেমিট্যান্স। স্বাধীনতার পর থেকে দেশের অর্থনীতিতে রেমিট্যান্স গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। কর্মসংস্থান, বৈদেশিক মুদ্রা আয়, দারিদ্র্য বিমোচন, খাদ্য নিরাপত্তা, গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন, শিক্ষা এবং মানুষের জীবনমান উন্নয়নের অন্যতম চালিকাশক্তির ভূমিকা রেখেছে। বিশ্বব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও প্রবাসী আয়ে পৃথিবীর শীর্ষ সাতে আছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য বলছে, দেশে রেমিট্যান্স পাঠান মূলত স্বল্প শিক্ষিত প্রবাসীরা, যারা মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে রক্ত পানি করে অর্থ উপার্জন করেন। অমানবিক শারীরিক পরিশ্রমে উপার্জিত সে অর্থ পাঠিয়ে দিচ্ছেন দেশে থাকা পরিবার-পরিজনদের কাছে। যার ফলে পরিবারের সচ্ছলতা বাড়ার পাশাপাশি রিজার্ভ বাড়ছে রাষ্ট্রের।
অর্থনীতিবিদদের মতে, দেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের অন্যতম প্রধান খাত জনশক্তি রপ্তানি। কর্মী প্রেরণের বেলায় সতর্ক থাকতে হবে। আগের ভুলত্রুটি মোকাবিলা করে শ্রমবাজারে বাংলাদেশের অবস্থান সুদৃঢ় করতে হবে। সে ক্ষেত্রে কর্মী প্রেরণে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে সহনশীল ব্যয়ের মাধ্যমে কর্মী প্রেরণ করাটাই এখন বড় কর্তব্য। শ্রমিক পাঠানোর আগে বাংলাদেশকে অভিবাসন খরচসহ বেশকিছু বিষয়ের দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকৌতুক কণিকা
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে