শুরুটা ঝলমলে, এরপর নিয়ন্ত্রণহীন চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম দিন

শ্রীলংকার সংগ্রহ ২৫৮ রান, বাংলাদেশের ৪ উইকেট

ক্রীড়া প্রতিবেদক | সোমবার , ১৬ মে, ২০২২ at ৪:৪২ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম টেস্টের সকালটা মোমিনুলের টসে হার দিয়ে শুরু হলেও দিনের প্রথম সেশনটা ছিল একেবারে দুর্দান্ত। বিশেষ করে দুই সিরিজ পর দলে সুযোগ পাওয়া চট্টগ্রামের ছেলে নাঈম হাসানের দারুণ ঘুর্নির সুবাধে প্রথম সেশনেই শ্রীলংকাকে কোণঠাসা করে ফেলেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু সময় গড়ানোর সাথে সাথে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় শ্রীলংকা। দিনের প্রথম সেশনে নাঈমের জোড়া আঘাতে দুটি উইকেট হারালেও দ্বিতীয় সেশনে একটি উইকেটও হারায়নি লংকানরা। দিনের শেষ সেশনে বাংলাদেশের বোলাররা আরো দুটি উইকেট তুলে নিয়েছে বটে। তবে ততক্ষণে ম্যাচের লাগাম চলে গেছে লংকানদের হাতে। তাইতো দিনের প্রথম সেশনে পিছিয়ে পড়া শ্রীলংকা এগিয়ে যায় শেষ দুই সেশনে। আর পিছিয়ে পড়ে বাংলাদেশ। শ্রীলংকার সাবেক অধিনায়ক অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউসের দুর্দান্ত সেঞ্চুরির উপর ভর করে প্রথম দিন শেষে লংকানরা সংগ্রহ করেছে ৪ উইকেটে ২৫৮ রান। অপরাজিত রয়েছেন সেঞ্চুরিয়ান ম্যাথিউস।
জহুর আহমদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে সকালটা শুরু হয়েছিল লংকান অধিনায়ক দিমুথ করুনারত্নের টস জয় দিয়ে। ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে প্রথমে ব্যাটিং নিতে একবারও ভাবেননি লংকান অধিনায়ক। কিন্তু দিনের প্রথম সেশনে লংকান অধিনায়কের সিদ্ধান্তকে ভুল মনে হচ্ছিল। কারণ ইনিংসের শুরুতেই বেশ জোরে ধাক্কা দিয়েছিলেন নাঈম হাসান। ইনিংসের অষ্টম ওভারে নাঈমের হাতে বল তুলে দেন অধিনায়ক মোমিনুল। নিজের প্রথম ওভারের প্রথম বলেই লংকান অধিনায়ক করুনারত্নেকে ফেরান নাঈম। এলবিডব্লিউর শিকার হয়ে ফিরেন লংকান দলপতি। করেন ৭ রান। দ্বিতীয় উইকেটে ফার্নান্ডো এবং কুমল মেন্ডিস মিলে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেও ৪৩ রানের বেশি যোগ করতে পারেননি দুজনে। নাঈমের দ্বিতীয় শিকার হয়ে ফিরেন ৩৬ রান করা ফার্নান্ডো। দিনের প্রথম সেশনে ২৪ ওভারে ২ উইকেটে ৭৩ রান নিয়ে ম্যধাহ্ন বিরতিতে যায় লংকানরা।
বিরতি থেকে ফিরে মেন্ডিস এবং সাবেক অধিনায়ক অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস মিলে দারুণ প্রতিরোধ গড়ে তোলেন টাইগার বোলারদের সামনে। এ জুটি পুরো দুই ঘণ্টা অবিচ্ছিন্ন থাকেন। দিনের মধ্য সেশনে এ দুজন যোগ করেন ৮৫ রান। বাংলাদেশের বোলারদের রক্ত চক্ষুকে উপেক্ষা করে দারুণভাবে এগিয়ে যান দুজন। এ সময়ে দুজনেই তুলে নেন হাফ সেঞ্চুরি। প্রথম দিনের ৩৬ তম ওভারে সাকিবকে বোলিংয়ে আনেন অধিনায়ক মোমিনুল। তবে বেশ ভালই করেছেন সাকিব। প্রথম স্পেলে ১০ ওভার বল করে ৫টি মেডেনসহ মাত্র ৯ রান দিয়েছেন। তবে কোনো উইকেট পাননি। চা বিরতির পর প্রথম বলেই আঘাত হানেন তাইজুল। তার আলগা হওয়া বলে পুল করতে গিয়ে শর্ট মিড উইকেটে নাঈমের হাতে ক্যাচ দেন কুশল মেন্ডিস। ১৩১ বলে ৫৪ রান করেন এই লংকান। প্রথম স্পেলে দশ ওভার বল করলেও কোনো উইকেট না পাওয়া সকিব দ্বিতীয় স্পেলের প্রথম ওভারেই উইকেট নেন। তার শিকার ধনঞ্জায়া ডি সিলভা। স্লিপে মাহমুদুল হাসান জয়ের দুর্দান্ত এক ক্যাচে পরিণত হয়ে ফিরেন ধনঞ্জায়া ডি সিলভা।
১৮৩ রানে ৪ উইকেট হারানো লংকানরা যখন চাপে তখন সে সুযোগটাকে আর কাজে লাগাতে পারেনি বাংলাদেশের বোলাররা। উল্টো নিজেরাই চাপে পড়ে গেছে দিনেশ চন্ডিমাল এবং অ্যঞ্জেলো ম্যাথিউসের ব্যাটিং এর সামনে। এ দুজন দিনের বাকি সময়টা কেবলই ছড়ি ঘুরিয়েছে বাংলাদেশের বোলারদের উপর। একের পর এক বোলার পরিবর্তন করেও কোনো সুফল পায়নি বাংলাদেশ। উল্টো একেবারে বীরদর্পে ব্যাটিং করে গেছেন এ দুজন। দিনের শেষ সেশনে ম্যাথিউস এবং চন্ডিমাল মিলে যোগ করেন ৭৫ রান। দুজনই অপরাজিত রয়েছেন। ম্যাথিউস তুলে নিয়েছেন তার সেঞ্চুরি। ক্যারিয়ারের ১২ তম সেঞ্চুরি এটি তার। আর বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রথম। ১৮৩ বলে ৩০৩ মিনিট উইকেটে থেকে সেঞ্চুরি করা ম্যাথিউস অপরাজিত আছেন ১১৪ রানে। তার ইনিংসে ১৪টি চার এবং একটি ছক্কার মার ছিল। অপরদিকে ৭৭ বলে ৩৪ রান করে অপরাজিত আছেন দিনেশ চন্ডিমাল। বাংলাদেশের পক্ষে ৭১ রানে ২টি উইকেট নিয়েছেন নাঈম হাসান। একটি করে উইকেট নিয়েছেন সাকিব এবং তাইজুল। আজ দ্বিতীয় দিনে এ জুটি লংকান ইনিংসটাকে কতদূর নিয়ে যান সেটাই এখন দেখার বিষয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচমকে দিলেন পড়শী
পরবর্তী নিবন্ধকক্সবাজারে ভেসে যাওয়া পর্যটকের লাশ মহেশখালী চ্যানেলে উদ্ধার