শিক্ষার্থীদের মূল্যবোধ

অস্মিতা তালুকদার | মঙ্গলবার , ২ আগস্ট, ২০২২ at ৭:০৯ পূর্বাহ্ণ

দীর্ঘ দু’বছর করোনাকালীন সময় অতিবাহিত করার পর বর্তমানে শিক্ষার্থী আর শিক্ষকের মধ্যে এক বিস্তর দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে! শিক্ষাব্যবস্থার আংশিক পরিবর্তন করার উদ্দেশ্যে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। বর্তমানে সামাজিক অবক্ষয় যে হারে বেড়ে চলেছে পাঠ্যবিষয়ে সামাজিক মূল্যবোধ এবং দেশীয় সংস্কৃতি বিষয়ে আলোকপাত করা উচিত। শ্রেণি কার্যক্রমে সামাজিক মূল্যবোধ ও দেশীয় সংস্কৃতির উপরে শিক্ষার্থীদের প্রতিদিন অন্যান্য বিষয়ের মত আলোকপাত করা আবশ্যক হয়ে দাঁড়িয়েছে! বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর মধ্যে দূরত্ব কমানোর লক্ষ্যে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের মানসিক, শারীরিক শাস্তি যেমন নিষিদ্ধ করা হয়েছে, ঠিক সেভাবেই যদি শ্রেণিকক্ষে একজন শিক্ষকের জন্য পঁচিশ থেকে ত্রিশজন শিক্ষার্থী নির্ধারণ করা যেত তাহলে শিক্ষকের পাঠদান সকল শিক্ষার্থীর মধ্যে পৌঁছে যেত এবং শ্রেণিকক্ষে ছাত্র শিক্ষকের ভারসাম্য বজায় থাকতো। যেমনটা করা হয় উন্নত দেশগুলোতে। শিক্ষার্থীদের মূল্যবোধের বিষয়ে আলোকপাত করা যেমন একজন শিক্ষকের দায়িত্ব ঠিক তেমনই একজন অভিভাবকেরও দায়িত্ব নিজের সন্তানকে মূল্যবোধের শিক্ষা দেওয়া।

দীর্ঘ দু’বছর অনলাইন ভিত্তিক কার্যক্রম ছিল যা সত্যিই প্রসংশনীয় কিন্তু শিক্ষার্থীদের অটোপাশের বিষয়টিতে কতিপয় শিক্ষার্থীরা কিছুটা ঝিমিয়ে পড়েছে এবং মূল্যবোধের বিষয়গুলো তারা অনুশীলনের অভাবে ভুলতে বসেছে। বাংলাদেশে যে হারে দুর্নীতি বেড়ে চলেছে যদি এ বিষয়ে এখন থেকে গুরুত্ব দেওয়া না হয় তবে করোনাচলাকালীন সময়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে মূল্যবোধ চর্চার যে ঘাটতি দেখা যাচ্ছে তা ভবিষ্যতের জন্য হুমকীস্বরূপ! সামাজিক মূল্যবোধের বিষয় যদি পাঠ্যক্রমে মূল বিষয় হিসেবে সংযোজন করা হয় তবে শিক্ষার্থীরা ভবিষ্যতে সুশিক্ষিত হওয়ার পাশাপাশি জাতি হিসেবে স্বশিক্ষিত হয়ে গড়ে উঠবে!

জাপানিরা একটা সময় খুবই রূক্ষ জাতি ছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জাপানিদের শিক্ষাকার্যক্রমে দীর্ঘ চার বছর শুধু নিয়মানুবর্তিতা ও মূল্যবোধের উপর পাঠদান করানো হয়, যার ফলস্বরূপ আজ এ জাতি বিনয়ী জাতি হিসেবে বিশ্বের দরবারে তাদের অতীতকে পরিবর্তন করতে সক্ষম হয়েছে! পাশাপাশি কারিগরি শিক্ষা পাঠ্যক্রমে সংযোজন করা উচিত। ভবিষ্যতে দেশে যদি কখনো অর্থনীতির ধস নামে কিংবা চাকরির বাজারে যে হারে এক পেশে বিষয়গুলোর উপর আলোকপাত করা হচ্ছে সেক্ষেত্রে কারিগরি শিক্ষা যদি পাঠ্যসূচিতে সংযোজন করা হয় তবে যুবসমাজ অন্তত বেকার বসে থাকবে না! যেমনটা করা হয়েছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় চীনে। যুদ্ধবিধ্বস্ত জাতিকে সেসময়ে দাঁড় করানোর জন্য চীনের সরকার দীর্ঘ দশ বছর মেয়াদি শিক্ষাগ্রহণের চেয়ে কারিগরি শিক্ষায় গুরুত্ব দিয়েছিল বিধায় আজ বিশ্বে অন্য দেশ গুলোর তুলনায় চীনাজাতির দ্রুত ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছিল।

পূর্ববর্তী নিবন্ধনতুন ই-পাসপোর্ট পেতে জটিলতার নিরসন চাই
পরবর্তী নিবন্ধকেবল বন্ধুত্বই নয়, সব সম্পর্কই দামী