শাহ আমানতে বিশ্বের সর্ববৃহৎ কার্গো বিমানের অবতরণ

জ্বালানি তেল নিয়ে ইউক্রেনের এই বিমান গেল ভারতের আহমেদাবাদে রানওয়েসহ বিমানবন্দরের অবকাঠামোগত উন্নয়নে এই সাফল্য, রাজস্ব আয় বৃদ্ধি

হাসান আকবর | বৃহস্পতিবার , ২৫ এপ্রিল, ২০২৪ at ৭:৪২ পূর্বাহ্ণ

বিশ্বের সর্ববৃহৎ কার্গো বিমান চট্টগ্রামে অবতরণ করে আবার যথারীতি উড়ালও দিয়েছে। চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়েসহ অবকাঠামোগত উন্নয়নের ফলে প্রায় দেড় লাখ টন পণ্য পরিবহনের ধারণক্ষমতা সম্পন্ন বিশাল বিমানটি অনায়াসে অবতরণ এবং উড্ডয়ন করতে সক্ষম হয়েছে। চট্টগ্রামে অবতরণ করা ইউক্রেনের বিশাল বিমানটি হংকং থেকে ভারতের আহমেদাবাদে যাচ্ছিল। পথিমধ্যে জ্বালানি তেল বোঝাইয়ের জন্য এটি ঢাকায় অবতরণ করার কথা থাকলেও ‘বিশেষ কারণে’ চট্টগ্রামে অবতরণ করে। মঙ্গলবার রাতে অবতরণ করা বিমানটি গতকাল ভোরে চট্টগ্রাম ত্যাগ করেছে। শাহ আমানত বিমানবন্দর পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন তাসলিম আহমেদ দৈনিক আজাদীকে বলেন, এটি বড় কোন ব্যাপার নয়, একেবারে স্বাভাবিক ঘটনা। এ ধরনের বিমান প্রায়ই চট্টগ্রামে নামে। দূরপাল্লার বিমানগুলো একই সাথে পুরো গন্তব্যের জ্বালানি তেল বোঝাই করতে পারে না। পথিমধ্যে কোন বিমানবন্দরে অবতরণ করে জ্বালানি তেল বোঝাই করে। এই বিমানটি ঢাকা থেকে জ্বালানি তেল সংগ্রহের সিডিউল ছিল।

কিন্তু এটি ঢাকায় নামতে না পেরে চট্টগ্রামে অবতরণ শুধুমাত্র রিফুয়েলিং করার জন্য। এ বিমানটিও একাধিকবার চট্টগ্রামে নেমেছিল। তবে, বিমানটি নামার কথা ছিল ঢাকায়, কিন্তু ঢাকাতে কাতারের আমীর থাকায় কর্তৃপক্ষ বিমানটিকে চট্টগ্রামে পাঠিয়ে দেয়। এটি চট্টগ্রামে অবতরণ করে রিফুয়েলিং করেছে। বিমানের ক্রুরা রাতে বিশ্রাম নিয়ে সকালে ভারতের আহমেদাবাদ চলে গেছে।

চট্টগ্রাম বিমানবন্দরের সক্ষমতা বাড়ায় এই ধরণের বিমান অবতরণ বা উড্ডয়নে কোন সমস্যা হয় না বলে উল্লেখ করে গ্রুপ ক্যাপ্টেন তাসনিম আহমেদ বলেন, বিশাল আকারের এসব বিমান নামতে রানওয়ে স্ট্রং লাগে। যেটি আমরা করতে সক্ষম হয়েছি। আমাদের রানওয়েসহ অবকাঠামোগত উন্নয়ন এই ধরণের বিমান নামার পথ সুগম করেছে। এতে সরকারের বেশ কিছু রাজস্ব আয় হয় এবং জ্বালানি তেল বিক্রিতেও অর্থ পাওয়া যায়।

অ্যান্টোনভ এএন১২৪ মডেলের এই কার্গো বিমানটি বর্তমানে বিশ্বের সর্ববৃহৎ কার্গো বিমান বলে সূত্র জানিয়েছে। দুই বছর আগে একই কোম্পানির অ্যান্টোনভ এএন২২৫ ছিল বিশ্বের সবচেয়ে বড় কার্গো বিমান। ওটির ধারণক্ষমতা আরো বেশি। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া ইউক্রেনে হামলার পর ওই কার্গো বিমানটি রাশিয়ার বোমার আঘাতে ধ্বংস হয়ে যায়। এরপর থেকে অ্যান্টোনভ এএন১২৪ বিশ্বের সবচেয়ে বড় কার্গো বিমান হিসেবে স্বীকৃত। এই বিমানটি একই সাথে দেড় লাখ টন পণ্য পরিবহন করতে পারে। ডাবল ডেকের বিমানটির উপরের ডেকে ককপিট, রিলিফ ক্রু কম্পার্টমেন্ট ও ৮৮ সিটের প্যাসেঞ্জার কেবিন রয়েছে। নিচের ডেকের পুরোটাই কার্গো স্পেস।

অনলাইনে বিভিন্ন সংস্থার তথ্য থেকে জানা যায় যে, অ্যান্টোনভ এএন১২৪ বিমানটির নকশা করা হয়েছিল ১৯৭১ সালে। ১৯৭৩ সালে বিমানটি প্রস্তুতের জন্য পুরো প্রস্তুতি নেয় অ্যান্টোনভ। ১৯৭৯ সালে রাশিয়া ও ইউক্রেনের দুইটি প্লান্টে বিমানটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়। বিমানটির যন্ত্রাংশ এবং অত্যাধুনিক প্রযুক্তিগত সিস্টেম সন্নিবেশ করা ও তৈরির জন্য রাশিয়া ও ইউক্রেনের অন্তত একশটি কারখানাকে যুক্ত করা হয়। ১৯৮২ সালের ডিসেম্বরে অ্যান্টোনভ ১২৪ উড়ার জন্য তৈরি হয়। ১৯৮৫ সালে বিশ্বের সর্ববৃহৎ প্যারিস এয়ার শোতে বিমানটি উন্মুক্ত করা হয়।

১৯৮৬ সালে বিশ্বের অভিজাত কয়েকটি বিমান পরিবহন সংস্থা অ্যান্টোনভ১২৪ এর অর্ডার দেয়। সাম্প্রতিক সময় পর্যন্ত বিশ্বের অ্যন্টোনভ এই মডেলের ৫৫টি কার্গো বিমান তৈরি করেছে বলে ওয়েবসাইটে উল্লেখ রয়েছে। অবশ্য ২০০০ সালের প্রথম দিকে চ্যাপ্টার৪ নয়েজ রেগুলেশন পূরণের জন্য ইঞ্জিনে বেশ উন্নতি সাধন করা হয়। বিমানটির সার্ভিস লাইফ বাড়ানোর জন্য ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয় কাঠামোতে। বিমানটিতে চারটি ইঞ্জিন রয়েছে। এগুলো অপারেশনের জন্য এভিওনিক্স এবং সিস্টেমে ওই সময় বেশ উন্নতি সাধন করা হয়। বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বেসামরিক বিমান পরিবহন সংস্থার বহরে ২৬টি অ্যান্টোনভ১২৪ চলাচল করছে।

বিমানটিতে কমপক্ষে ছয় জন ক্রু থাকে। এরমধ্যে পাইলট এবং কোপাইলট ছাড়াও দুইজন ফ্লাইট ইঞ্জিনিয়ার, নেভিগেটর এবং কমিউনিকেশন অফিসার অপারেশনে থাকাকালে বিমানটিতে সার্বক্ষণিক অবস্থান করেন। বিপুল ওজন নিয়েও বিমানটি যাতে অনায়াসে অবতরণ করতে পারে সে জন্য এতে ২৪টি চাকা এবং মাল্টিলেগ ল্যান্ডিং গিয়ার রয়েছে। রাতে সুষ্ঠুভাবে অবতরণের পর গতকাল ভোরে বিমানটি একইভাবে উড্ডয়ন করে ভারতের উদ্দেশ্যে চট্টগ্রাম ছেড়ে গেছে। .

পূর্ববর্তী নিবন্ধথাইল্যান্ডে প্রধানমন্ত্রীকে লাল গালিচা সংবর্ধনা
পরবর্তী নিবন্ধকৌতুক কণিকা