শহীদ মিনার যাওয়া

আখতারুল ইসলাম | বুধবার , ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ at ৬:২৩ পূর্বাহ্ণ

আজ এনির স্কুল বন্ধ। ছুটির দিন, ছুটির দিন হলেও অন্য দিনের মত এনি ভোরে ঘুম থেকে ওঠে। বাবা মা তখন ঘুমিয়ে আছে। এনি বাবা মা’র রুমে গিয়ে ডাকে, বাবা এতক্ষণ ঘুমাতে হয়। ওঠ। তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে ওঠ। মাকে সে ডাকে না, কারণ হলো মাকে এনি খুব ভয় পায়। মা কারণে অকারণে বকা দেয়, খেলতে বারণ, টিভি দেখতে বারণ, বাইরে যাওয়া নিষেধ এসব নিষেধ বারণে তার জীবন বইয়ের পাতায়, কলম খাতায় চার দেয়ালের ঘর নামক এক ধরনের জেলখানায় বন্দি। তাই সে বাবাকে ডাকে, বাবা তার বন্ধু! শুধু বন্ধু না বন্ধুবাবা! সব অভাবঅভিযোগ, স্বাধআহ্লাদ বাবার কাছে। চাওয়া পাাওয়াও এনির পৃথিবী জুড়ে শুধু বাবা আর বাবা, একজন শুধু প্রিয় মানুষ। যাকে এনি সব কিছু বলতে পারে। বাবাকে ডাকতে! বাবা না ওঠে, উল্টো মা ওঠে যায়। এনি এই সাত সকালে চেঁচামেচি করছিস কেন? আজ বন্ধের দিন বাবা কে একটু ঘুমাতে দে।

একথা শুনে অমনি এনি মুখ ভার করে ফেলে। মুহুর্তে মন খারাপ হয়ে যায়। এনির মা আবার বলে আজ না তোমার ইশকুল বন্ধ!

হ্যাঁ মা, বলে এনি চলে যাচ্ছে এমন সময় বাবা ওঠে, বলছে তুমি কেন মেয়েটাকে বকা দিচ্ছ! ও কি বলতে এসেছে শোন। বাবার শব্দ শুনে চলে যাওয়া বন্ধ করে। বলে বাবা! আজ না শহীদ মিনার যাওয়ার কথা।

এনির বাবা চমকে ওঠে, হ্যাঁ তাইতো সত্যি মা একদম ভুলে গেছি।

বাবার কথা শুনে এনি চোখে মুখে আনন্দের রেখা ফোটে ওঠে। এনি বলে বাবা তুমি না গতকাল অফিস থেকে এসে বলেছিলে আমাকে শহীদ মিনার নিয়ে যাবে। আজ একুশে ফেদব্রুয়ারি শহীদ দিবস।

এনির মা বলে ওঠে, না শহীদ মিনার যেতে হবে না। ওখানে অনেক মানুষ, অনেক মানুষের ভীড়ে ও হারিয়ে যাবে, যে কোন বিপদ ঘটতে পারে।

মার কথা শুনে, এনির আবার মন খারাপ হয়, না মা আমি যাব।

ঃ আমি না বলছি না, মা’র ধমকে এনি কেঁদে ফেলে।

না না! বাবা আমি যাব! আমি কো….নো দিন শহীদ মিনার দেখিনি। আমার স্কুলের সব বন্ধুরা যাবে। এনির কান্না দেখে বাবা থত্‌মত হয়ে যায়। এনি তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। স্কুল বন্ধ! স্কুলেও অনুষ্ঠান আছে। কিন্তু স্যারদের বলে কয়ে শহীদ মিনার যাওয়ার অনুমতি নেয়। আর মা কিনা বলে যেতে হবে না।

এনির বাবা বলল, শোন এনির মা! দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধ করে আমাদের এই বিজয়! অনেক ত্যাগ তিতিক্ষা কষ্ট ও লক্ষ প্রাণের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয়। সে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এনিকে শহীদ মিনারে নিয়ে যাওয়া আমাদের পিতামাতার অবশ্য কর্তব্য। জাতীয় ইতিহাস ঐতিহ্য ওদের না জানালে ওরা দেশ সম্পর্কে জানবে না, দেশের প্রতি শ্রদ্ধা বিশ্বাস জন্মাবে না, দেশকে ভালোবাসতে কার্পণ্য করবে, শহীদ মিনারযে ভাষা শহীদের স্মৃতি রক্ষার্থে ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি তারিখে সালাম, রফিক, শফিক জব্বার সহ আরো অনেকে বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষার দাবিতে মিছিল করে। পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠি সে মিছিলের উপর গুলি চালায়। তাতেই সালাম, রফিক শফিক জব্বারের রক্তে লাল হয়ে যায় ঢাকার রাজপথ। সেই থেকে প্রতি বছর ২১শে ফেব্রুয়ারি শহীদ দিবস পালন করা হয়। কিন্তু তা জাতিসংঘে ২০০১ সালে সেই ভাষার দাবিকে চিরস্মরণীয় করে রাখতে সকল মাতৃভাষাকে শ্রদ্ধা জানাতে ২১শে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘোষনা করে। তা আমাদের গর্বের বিষয়।

মা তার ভুল বুঝতে পারে, বলে, ঠিক আছে এনিকে নিয়ে যাও তাড়াতাড়ি ফিরবে।

এনি খুশিতে আত্মহারা! বাবা বাবা আমাদের ছাদে টবে অনেক ফুল ফুটেছে, সে ফুল গুলোই শহীদদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে দেব।

ঠিক আছে!

এনি আর বাবা পৌঁছে শহীদ মিনারে অনেক মানুষ ছোট, বড়, বৃদ্ধ, নারী, পুরুষ, সকল ধর্ম, বর্ণ, শ্রেণির মানুষে গম্‌ গম করছে শহীদ মিনার চত্বর।

খুশিতে এনি বুক ভরে যায়। নিজেকে খুব সুখি মনে করে। এতো মানুষের মাঝে নিজেও আসতে পেরে আনন্দে আত্মহারা। বাবা ও মেয়ে লাইন ধরে।

এনি বাবাকে বলে, বাবা এতো মানুষ, সবাই ফুল নিয়ে, আমার খুব ভাল লাগছে।

হ্যাঁ মা। আচ্ছা বাবা সবাই কি দেশকে ভালোবাসে?

হ্যাঁ মা, দেশ যে সবার উপরে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা শুরু কাল
পরবর্তী নিবন্ধবর্ণমালার ফুল