লাল সবুজের গল্পো

রাজিব উল হাসান | বুধবার , ১৯ জানুয়ারি, ২০২২ at ১১:১৪ পূর্বাহ্ণ

শহর থেকে দূর গ্রামে কিষাণ-কিষাণী বিল থেকে ঘরে সোনালী ফসল তুলে এনেছে। ঘরে ঘরে নতুন ধানের মৌ মৌ গন্ধ কৃষকের মনে আনন্দের বান ঢেকে আনছে। সোনালী ফসল তোলার পাশাপাশি শীতের সব্জি লাগানোর ধুম পড়েছে কাশখালীর কূলে। ফুল, বাঁধাকপি, মুলা, বেগুন, টমেটোসহ কতো রকমের সবজি তার ইয়াত্তা নেই। লালে লাল হয়ে উঠেছে লালশাকের ক্ষেত। সবুজের গালিচা বিছিয়েছে কপি, পালং, মুলাশাকের ক্ষেত। তরী তাঁর দাদার হাত ধরে প্রতিদিন কাশখালী খালের পাড়ে ঘুরে বেড়ায়। এসব দেখে তাঁর ছোট মনে কতো আনন্দ বয়ে যায়। হাজারটা প্রশ্ন করে দাদাকে বিরক্ত করলে ও দাদা বিরক্ত হন না। দাদা, এই শাকগুলো সবুজ কেন? আমাদের দেশটা সবুজ বলে। আর… এইগুলো লাল কেন, দাদা? দাদা, একটু আনমনা হয়ে বলে সে অনেক দুঃখের কথা দাদা। কি দুঃখ দাদা? আজ থেকে অনেক বছর আগে আমাদের এই সবুজ সুন্দর দেশটাতে দৈত্য দানোর চেয়ে ও কিছু খারাপ! মানুষ হামলা চালিয়ে রক্তের নদী ভাসিয়ে দেয়। তরী ভয় পেয়ে বলে কেন দাদা? ভীনদেশি ওরা আমাদের দেশটাকে লুটেপুটে খেতে চেয়েছে। তোমার ভাষা কেড়ে নিতে চেয়েছে। তরী চোখ বড়ো করে বলে তারপর? দাদা দাঁতে দাঁত চেপে বলে, তারপর আমরা বাঙালিরা রুখে দাঁড়ায়। শুরু হয়ে যায় ঝগড়া বিবাদ যুদ্ধ। ভয় পেয়ে তরী বলে, যুদ্ধ? আমাদের অধিকার আদায়ের সংগ্রাম। আমাদের নেতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু বজ্রকন্ঠে বলেন, এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। তোমাদের যা আছে তা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ো।একথায় বাঙালিরা ঝাঁপিয়ে পড়ে। বাঙালির রক্তে লাল হয়ে যায় মাঠঘাট। লাল রক্তের স্বাক্ষী এই লালশাক। দেখো, লাল সবুজের পতাকা যেন এখানে আঁকা আছে। তরী বললো,আরে তাই তো।তারপর কি হলো দাদা? তারপর নয়মাস যুদ্ধ করে আমরা বিজয় ছিনিয়ে এনেছি। বিজয়ের সূর্যটাকে পেড়ে আনবে বলে বড়োদের পাশাপাশি তোমার মতো ছোটরা ও যুদ্ধ করে শহীদ হয়েছে। কি বলো দাদা? দাদা বলে হ্যাঁ রে। তরীর সাথে হাঁটতে হাঁটতে কথা বলতে গিয়ে দাদা একটু হাঁপিয়ে উঠলেন। চল ওদিকটায় বসি। তরী বললো চলো। এদিকে তরী আর দাদাকে অনেকক্ষণ ধরে গল্প করতে দেখে রাহ্‌বার, মেহেদী, রুপসা, নিশি, আদিবা বিলে খেলা ফেলে দৌড়ে আসলো। আদিবা বললো, দাদা কি করছেন? গল্প করছিরে। তরী বললো, যুদ্ধের গল্প শুনবে এসো। মেহেদী বললো, দাদা আমাদেরকে ও শোনান। দাদা বললো, হ্যাঁ সবাই বসো। তরী বললো, ছোটরা কীভাবে যুদ্ধ করেছে দাদা। হ্যাঁ, শোন তাহলে। মানুষরূপী দৈত্য দানোরা বাঙালি নিধন করতে করতে ছড়িয়ে পড়ে সবখানে। বাঙালিরা আত্মগোপনে থেকে হামলার জবাব দিতে থাকে। ওদিকে তোমাদের মতো ছোটরা দৈত্য দানোদের খবর যুদ্ধরত বাঙালি মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে পৌঁছে দিতো। কোন সময় খাবার, অস্ত্র পৌঁছে দিতে গিয়ে ধরা পড়ে নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়ে শহীদ হয়েছে। দাদার এই কথায় সবার মন খারাপ হয়ে গেল। রাহ্‌বার বললো, তারপর দাদা? দাদা বললো, না রে এই কথাগুলো বলতে গিয়ে আমার মনটাই খারাপ হয়ে গেছে। ওদিকে সন্ধ্যা নেমে আসছে…। সূর্যটা টকটকে লাল হয়ে পশ্চিমাকাশে ডুবতে যাচ্ছে। লালের লালিমা লাল সবুজে ছড়িয়ে পড়ে অন্যরকম দৃশ্যের সূচনা হলো। দাদা বললো, চল এক কাজ করি। সবাই বললো, কি কাজ দাদা। জানিস তো, ডিসেম্বর আমাদের বিজয়ের মাস। বিজয়ের মাসে পালা করে তোরা সবাই বিজয়ের বেদী ধুয়ে মুছে পরিস্কার করবি। কি পারবি তো? সবাই সমস্বরে বললো, পারবো মানে। পারতেই হবে। আমরা নতুন প্রজন্ম। আমরা যদি শহীদ বেদী, বধ্যভূমি চিনে না রাখি তাহলে আমরা তো অকৃতজ্ঞ হয়ে যাবো, দাদা। দাদা বললো, কাল থেকে তোমরা কাজ শুরু করো। একথায় সবাই হাততালি দিয়ে উঠলো। ততক্ষণে পশ্চিমাকাশে সূর্যটা ও হেলে পড়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধনতুন বই
পরবর্তী নিবন্ধবহুগুণের সমাহার গাঁদাফুলে