বহুগুণের সমাহার গাঁদাফুলে

রাজন বড়ুয়া | বুধবার , ১৯ জানুয়ারি, ২০২২ at ১১:১৬ পূর্বাহ্ণ

এখন শীতকাল। এ সময় আমাদের দেশে বাহারি রঙের ফুল ফোটে। শীতকালীন ফুলগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো গাঁদা। এটি Composite পরিবারের সদস্য। ইংরেজি নাম Marigold আর বৈজ্ঞানিক নাম হলো ঞধমবঃবং বৎবপঃধ। গাঁদা গুল্ম জাতীয় বর্ষজীবী উদ্ভিদ। সারা পৃথিবীতে গাঁদার ২০টি প্রজাতি থাকলেও বাংলাদেশে প্রধানত দুই ধরনের গাঁদা বেশি পাওয়া যায়। একটি আফ্রিকান গাঁদা। এটি হলুদ রঙের হয়। এই জাতের গাছ সোজা এবং ৩০-১০০ সেমি পর্যন্ত লম্বা হয়। অপরটি ফরাসি গাঁদা। এই ফুল কমলা-হলুদ রঙের। এজন্য এদের রক্তগাঁদাও বলে। গাছ তুলনামূলক ক্ষুদ্রাকৃতির। এগুলো সাধারণত ১৫-৩০ সে.মি পর্যন্ত হয়। এই ফুলের পাপড়ির গোড়ায় কালো ছোপ থাকে। এছাড়াও সাদা গাঁদা, জাম্বো গাঁদা, হাইব্রিড এবং রক্ত বা চাইনিজ গাঁদাও পাওয়া যায়।
অঞ্চলভেদে নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত ফুল ফোটে। উদ্ভিদ বিজ্ঞানীদের মতে গাঁদা ফুলের আদি নিবাস মেক্সিকোর গেন্ডামেরিতে। ১৯৯০ সাল থেকে বাংলাদেশে বাণিজ্যিকভাবে গাঁদা ফুলের চাষ শুরু হয়। বাংলাদেশের শৌখিন কৃষকরা তাদের জমিতে এই ফুলের চাষ করেন। বাংলাদেশের সব জায়গায় চাষ হলেও চট্টগ্রামের হাটহাজারী, পটিয়া ছাড়াও যশোরের গদখালী, ঝিকরগাছা, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা, গাজীপুর জেলার সদর উপজেলা এবং ঢাকা জেলার সাভার এলাকায় বর্তমানে অধিক হারে এটির চাষ হয়। তবে চাষাবাদ পদ্ধতি সহজ হওয়ায় অনেকে শখের বশে নিজেদের ঘরের আঙিনা, ছাদ কিংবা টবেও লাগাতে দেখা যায়। বাগানের শোভাবর্ধন ছাড়াও বিভিন্ন উৎসব, অনুষ্ঠান, পূজা, পার্বন ও ফুলের মালা তৈরিতে এই ফুলের বিশেষ কদর রয়েছে। এটি শুধু শোভাবর্ধন করেনা, বরং এর অনেক উপকারিতাও রয়েছে। শুধু গাছের পাতা কিংবা কাঁচা ফুল নয়, শুকনো ফুলও নানা কাজে ব্যবহার করা যায়। গাঁদা ফুল থেকে বিভিন্ন ধরনের সুগন্ধি তৈরি হয়। দ্য জার্নাল অব নিউট্রিশনের গবেষণা মতে, গাঁদার মধ্যে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্যান্সরের বিরুদ্ধে লড়াই করে এবং প্রতিরোধে সাহায্য করে। গরম পানিতে গাঁদা ফুলের পাপড়ি ফুটিয়ে ছেঁকে নিয়ে সেই পানি দিয়ে চা বানিয়ে খেলে তা মুখ ও পাকস্থলির আলসার প্রতিরোধ করে। মুখের দুর্গন্ধ দূর হয়, মুখের ঘা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
শরীরের কোথাও কেটে গেলে গাঁদার পাতা পিষে লাগালে রক্তপড়া ও ক্ষত ভালো হয়। গাঁদা ফুলের চা নিয়মিত পান করলে মুখের ব্রণ দূর হয়। ত্বক মসৃণ হয়, হজমশক্তি বাড়ে, হাড়ের ক্ষয়রোধ হয়। অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট দেহের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়। গাঁদাফুল বেটে নারিকেল তেলের সাথে মিশিয়ে মাথায় ১০/১৫ দিন লাগালে মাথার খুশকি দূর হয়। চুল কালো হয়। গাঁদাফুল শুকিয়ে পুড়ে ছাই দিয়ে নিয়মিত দাঁত মাজলে দাঁতের গোড়া শক্ত হয়। পেটের সমস্যা সারাতে, গুরুপাক খাবার খেয়ে অথবা বেশিক্ষণ উপবাস থেকে স্নেহজাতীয় খাবার খেলে অজীর্ণ হয়। এটি সারতে না সারতে আবার গুরুপাকা খাবার প্রথমে আমাশয় ও পরে রক্ত আমাশয় দেখা দেয়। এক্ষেত্রে গাঁদা পাতার রস বেশ উপকারি। পাতার দেড় থেকে দুই চা চামচ রসে একটু চিনি মিশিয়ে দিনে দুই-তিনবার খেলে রক্ত পড়া বন্ধ হয়। যেকোনো কারণে চোখ লাল হলে ফুলের রস চোখে দিলে উপকার হয়। শরীরে পাঁচড়া হলে ফুলের রস উপকারি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধলাল সবুজের গল্পো
পরবর্তী নিবন্ধপৃথিবীর বয়স্ক প্রাণী