লক্ষ্য যখন স্মার্ট বাংলাদেশ : শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে

লিপি বড়ুয়া | বৃহস্পতিবার , ২৫ মে, ২০২৩ at ৬:২১ পূর্বাহ্ণ

শিক্ষা একটি জাতির মেরুদণ্ড। আর শিক্ষার্থীরা হলো জাতির ভবিষ্যৎ। জাতির এগিয়ে যাওয়ার শক্তি। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে হলে শিক্ষার্থীদের স্মার্ট হতে হবে। যুগ যুগ ধরে দেশের অগ্রযাত্রায় শিক্ষার্থীরাই অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে।

সরকার স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে চায়। সেজন্য শিক্ষার্থীদেরই এগিয়ে আসতে হবে। পড়ালেখাসহ সব কাজে শিক্ষার্থীদের স্মার্ট হতে হবে। তাহলেই স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবে রূপ পাবে। আজকের শিক্ষার্থীরাই আগামীর স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার অন্যতম কারিগর। সে কারণে স্মার্ট বাংলাদেশ তৈরি করতে হলে সবার আগে শিক্ষা স্মার্ট হতে হবে। ২০০৮ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়বেন। ২০২২ সালে এসে আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন করতে পেরেছি।

স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্নও পূরণ হবে এবং সেই লক্ষ্যে আগামী ২০২৫ সাল থেকে নতুন পাঠ্যক্রমে শিক্ষাদান করার প্রস্তুতি চলছে। স্মার্ট বাংলাদেশ হলো বাংলাদেশ সরকারের একটি প্রতিশ্রুতি ও শ্লোগান যা ২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তরের পরিকল্পনা। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সর্বপ্রথম এই প্রতিশ্রুতি ও শ্লোগান দেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১২ই ডিসেম্বর ২০২২ সালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের (বিআইসিসি) অনুষ্ঠানে ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবস২০২২ উদ্‌যাপন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে সর্বপ্রথম ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার কথা বলেন। শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা আগামী ২০৪১’ সালে বাংলাদেশকে উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তুলব এবং বাংলাদেশ হবে ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশ।

স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার ভিত্তি চারটি। এগুলো হচ্ছে : স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট অর্থনীতি, স্মার্ট সরকার, স্মার্ট সমাজ। স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণে এ চারটি নির্দিষ্ট ক্ষেত্রকে চিহ্নিত করে অগ্রসর হলে স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তরের কোনো অবশিষ্ট থাকবে না। স্মার্ট নাগরিক ও স্মার্ট সরকার এর মাধ্যমে সব সেবা এবং মাধ্যম ডিজিটালে রূপান্তরিত হবে। আর স্মার্ট সমাজ ও স্মার্ট অর্থনীতি প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করলে অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠন এবং ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ গড়ে তুলতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।

স্মার্ট বাংলাদেশ’ হবে সাশ্রয়ী, টেকসই, জ্ঞানভিত্তিক, বুদ্ধিদীপ্ত ও উদ্ভাবনী। এককথায় সব কাজই হবে স্মার্ট। যেমন স্মার্ট শহর ও স্মার্ট গ্রাম বাস্তবায়নের জন্য স্মার্ট স্বাস্থ্যসেবা, স্মার্ট পরিবহন, স্মার্ট ইউটিলিটিজ, নগর প্রশাসন, জননিরাপত্তা, কৃষি, ইন্টারনেট সংযোগ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা। অনলাইনে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে এক শিক্ষার্থী, এক ল্যাপটপ, এক স্বপ্নের উদ্যোগ নেয়ার কথা বলা হয়েছে। এর আওতায় সব ডিজিটাল সেবা কেন্দ্রীয়ভাবে সমন্বিত ক্লাউডের আওতায় নিয়ে আসা হবে। ইতোমধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ টাস্কফোর্সের নাম পরিবর্তন করে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ টাস্কফোর্স’ গঠন করেছে বাংলাদেশ সরকার।

বিশেষজ্ঞদের মতে, স্মার্ট বাংলাদেশ বলতে স্বাভাবিকভাবে বোঝায় প্রযুক্তিনির্ভর নির্মল ও স্বচ্ছ তথা নাগরিক হয়রানিবিহীন একটি রাষ্ট্র বিনির্মাণ প্রক্রিয়া, যেখানে ভোগান্তি ছাড়া প্রত্যেক নাগরিক পাবে অধিকারের নিশ্চয়তা এবং কর্তব্য পালনের সুবর্ণ এক সুযোগ। তাঁরা বলেন, স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট ইকনোমি, স্মার্ট গভর্নমেন্ট ও স্মার্ট সোসাইটিএ শব্দগুলোর সঠিক বাস্তবায়নের মাধ্যমেই স্মার্ট বাংলাদেশ থিওরিকে বাস্তবে রূপায়ণ করা সম্ভব, যার মূল সারমর্ম হলোদেশের প্রত্যেক নাগরিক প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষ হবে, উইথ স্মার্ট ইকনোমি; অর্থাৎ, অর্থনীতির সব কার্যক্রমে সরকার এ প্রযুক্তি ব্যবহার করে পরিচালনা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আর আমাদের গোটা সমাজটাই হবে স্মার্ট সোসাইটি।

ইতিমধ্যে শিক্ষাকার্যক্রমে নানাবিধ কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চলছে। শিক্ষার্থীকেও মনোযোগী হতে হবে পাঠ গ্রহণের ক্ষেত্রে। স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্ন পূরণ হয়তো খুব বেশি দূরে নয়। বাংলাদেশ ধীরে ধীরে বিশ্বের উন্নত দেশের সাথে তাল মিলিয়ে চলার উপযোগী হয়ে উঠছে।

আমরাও আমাদের স্বপ্নটা বড় করে দেখার মানসিকতা তৈরি করে নিজ নিজ অবস্থান থেকে শিক্ষার্থীদের সব রকমের শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ তৈরি করে দিই। সেদিন খুব বেশি দূরে নয় শিক্ষার্থীদের হাত ধরেই ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশের খ্যাতি অর্জন করবে বাংলাদেশ। লেখক : কবি, গল্পকার

পূর্ববর্তী নিবন্ধরঙ
পরবর্তী নিবন্ধআমাদের জাতীয় জীবনে কবি নজরুলের দর্শনের অভিঘাত