লকডাউনেও থেমে নেই কর্মযজ্ঞ

৬৬ দশমিক ৫ শতাংশ কাজ শেষ ।। ২০২২ এর ডিসেম্বরে চলবে গাড়ি

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ২৯ এপ্রিল, ২০২১ at ৬:৫৪ পূর্বাহ্ণ

করোনার ভয়াবহতার মাঝেও কাজ চলছে বহুল প্রত্যাশার কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণ প্রকল্পের কাজ। তবে চীন থেকে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম আনার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হওয়ায় নির্মাণ কাজ কিছুটা বিঘ্নিত হচ্ছে। অবশ্য প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পরিস্থিতি সামাল দেয়ার চেষ্টা চলছে। প্রকল্পের কাজ ৬৬ দশমিক ৫ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। বাকি কাজও নির্ধারিত সময়ে শেষ করার চেষ্টা চলছে। বড় কেনো সমস্যা না হলে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে টানেলে গাড়ি চলবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চীনের কারিগরি ও আর্থিক সহায়তায় নগরীর পতেঙ্গা থেকে আনোয়ারা পর্যন্ত কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। বাংলাদেশ ও চীন সরকারের (জি টু জি) যৌথ অর্থায়নে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে এটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি ৪২ লাখ টাকা। এরমধ্যে বাংলাদেশ সরকার দিচ্ছে ৪ হাজার ৪৬১ কোটি ২৩ লাখ টাকা এবং চীন সরকার সহজ শর্তে ঋণ দিচ্ছে ৫ হাজার ৯১৩ কোটি ১৯ লাখ টাকা।
২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী টানেলের বোরিং কাজের উদ্বোধন করেন। ইতোমধ্যে ২ হাজার ৪৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের প্রথম টিউবের সম্পূর্ণ বোরিংয়ের কাজ রিং প্রতিস্থাপনসহ সম্পন্ন হয়েছে। দ্বিতীয় টিউবের বোরিং কাজ ২০২০ সালের ১২ ডিসেম্বর সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী উদ্বোধন করেন। বর্তমানে দ্বিতীয় টিউবের বোরিং কাজ চলছে। একই সাথে চলছে প্রথম টিউবের ফিনিশিং কাজ। প্রতিটি টিউবের প্রস্থ হবে ১০ দশমিক ৮ মিটার বা সাড়ে ৩৫ ফুট। দুটি টিউবে গাড়ি চলাচলের জন্য মোট চারটি লেন থাকবে। এক টিউবের দুই লেনে গাড়ি যাবে, অপর টিউবের দুই লেনে গাড়ি আসবে। দুটি টিউবের মাঝে দূরত্ব রয়েছে ১১ মিটার বা ৩৬ ফুট। আর টানেলটি নদীর তলদেশ থেকে সর্বোচ্চ ৩৬ মিটার বা ১১৮ ফুট এবং সর্বনিম্ন ১২ মিটার বা প্রায় ৪০ ফুট মাটির গভীরে নির্মিত হচ্ছে।
চীনের জিনজিয়াং শহরে টানেল সেগমেন্ট কাস্টিং প্লান্টে সেগমেন্ট নির্মাণ করা হয়েছে। সেখানে থেকে জাহাজে করে এসব সেগমেন্ট এনে টিউবে স্থাপন করা হচ্ছে। পুরো টানেলের জন্য প্রয়োজনীয় ১৯ হাজার ৬১৬টি সেগমেন্টের মধ্যে প্রায় সাড়ে ১৯ হাজার সেগমেন্ট নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। যার মধ্যে প্রায় ১৬ হাজার সেগমেন্ট জাহাজে বোঝাই করে প্রকল্প এলাকায় আনা হয়েছে। এই সেগমেন্টসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি চীন থেকে আনার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়েছে। যা প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। তবে সাইটে পর্যাপ্ত সেগমেন্ট মজুদ থাকায় বোরিং বা সেগমেন্ট প্রতিস্থাপনের কাজ চলছে। ফলে বড় কোনো সমস্যা হচ্ছে না বলেও সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা জানিয়েছেন।
প্রকল্পের অংশ হিসেবে শুধু নদীর তলদেশে বোরিংই নয়; সড়ক নির্মাণসহ নানা ধরনের কার্যক্রম চলছে। টানেলের আনোয়ারা প্রান্তে ৭২৭ মিটার ভায়াডাক্ট নির্মাণের অগ্রগতি প্রায় ৫৫ শতাংশ। এরই মধ্যে ১২১টি কাস্ট ইন সিটু বোরড পাইল, ১০৩টি কংক্রিট পিয়ার ও ৪৬টি কলার বিমের শতভাগ কাজ, ৪৬টি পিয়ার ক্যাপের মধ্যে ৪৬টির শতভাগ কাজ এবং ২০৩টি প্রি-ফেব্রিকেটেড বঙ গার্ডারের মধ্যে ১২২টির ৫৮ দশমিক ৬২ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ৩৮২ দশমিক ৮২১ একর ভূমির মধ্যে ৩৬২ দশমিক ৩২২১ একর ভূমির অধিগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে এবং ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে হস্তান্তর করা হয়েছে। বাকি ১৯ দশমিক ৭৬ একর ভূমি হস্তান্তর করার প্রক্রিয়া চলছে।
প্রকল্পটি বাস্তবায়নে প্রকৌশলীসহ দুই শতাধিক চাইনিজ এবং ছয় শতাধিক দেশিয় লোকবল কাজ করছে। করোনা এবং লকডাউনে এই বিপুল সংখ্যক মানুষকে নিয়মিত কাজে রাখাটাও বড় ব্যাপার হয়ে উঠেছে।
গতকাল প্রকল্প পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার হারুনুর রশিদ দৈনিক আজাদীকে বলেন, কিছু সমস্যা তো আছেই, তবুও আমরা চেষ্টা করছি। এখন পর্যন্ত আমরা সবকিছু ম্যানেজ করে কাজের গতি ধরে রেখেছি। তবে ভবিষ্যৎ তো বলা যায় না। বড় ধরনের সমস্যা না হলে যথাসময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ করা যাবে বলে তিন আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
করোনা এবং লকডাউন পরিস্থিতিতে কাজ কতটুকু হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, করোনায় প্রভাবতো পড়েছেই। সে কারণে আমরা অনেক দিন পুরোদমে কাজ করতে পারিনি। আমরা সীমিত আকারে কাজ চালিয়েছি। কিন্তু করোনার মধ্যেও আমাদের কাজ বন্ধ হয়নি। এটাই আমাদের বড় অর্জন। প্রকল্প পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার হারুনুর রশিদ ৬৬.৫ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে উল্লেখ করে বলেন, এখন আমরা যেখানে আছি সেখান থেকেও ২০২২ সালের ডিসেম্বরে নির্ধারিত সময়ে কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপাহাড়খেকোরা বেপরোয়া
পরবর্তী নিবন্ধজয়ই চায় বাংলাদেশ