রেলওয়ের উচ্চতার গ্যাঁড়াকলে আটকা দুই ব্রিজ

পতেঙ্গা-ফৌজদারহাট ও বায়েজিদ লিংক রোড বঙ্গবন্ধু টানেল চালু হলে যান চলাচল পরিস্থিতি স্থবির হয়ে পড়ার শংকা

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ১৫ জুলাই, ২০২২ at ৭:৪৫ পূর্বাহ্ণ

রেল লাইনের উপরে ব্রিজের উচ্চতার গ্যাঁড়াকলে পড়ে ভয়াবহ সংকটে পড়তে যাচ্ছে চট্টগ্রামের সড়ক পরিবহন ব্যবস্থা। আগামী ডিসেম্বরে কর্ণফুলীর তলদেশের বঙ্গবন্ধু টানেল চালু হলে চট্টগ্রামের যান চলাচল পরিস্থিতি হ-য-ব-র-ল অবস্থায় পড়বে। শহরজুড়ে যানজট দেখা দেবে। হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে প্রকল্প বাস্তবায়ন করেও শুধুমাত্র রেলওয়ে ব্রিজের উচ্চতার গ্যাঁড়াকলে পড়ে সব আয়োজনই মুখ থুবড়ে পড়ার উপক্রম হয়েছে। চট্টগ্রামের পতেঙ্গা-ফৌজদারহাট আউটার রিং রোডের তিন নম্বর ফিডার রোড এবং ফৌজদারহাট-বায়েজিদ লিংক রোডের দুইটি ব্রিজ নিয়ে শংকা চরম আকার ধারণ করতে শুরু করেছে।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশ রেলওয়ের দেশব্যাপী প্রায় তিন হাজার কিলোমিটার রেল লাইন রয়েছে। যমুনা নদীকে মধ্যে রেখে সারাদেশের রেল লাইন দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে যমুনার পশ্চিম পাশকে পশ্চিমাঞ্চল এবং পূর্ব পাশকে পূর্বাঞ্চল হিসেবে নামকরণ করা হয়। পশ্চিমাঞ্চলে ১৪২৭ কিলোমিটার এবং পূর্বাঞ্চলে ১২৭৪ কিলোমিটার রেল লাইন রয়েছে। যে সব এলাকায় রেল লাইনের উপর দিয়ে সড়ক কিংবা মহাসড়ক পার হয়েছে সেখানে সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। দেশব্যাপী এ রকম শত শত সেতু রয়েছে। চট্টগ্রামে রেল লাইনের উপর এ রকম দুইটি সেতুর উচ্চতা নির্ধারণ নিয়ে তৈরি হয়েছে জটিলতা। যার কারণে চট্টগ্রামের যান চলাচল পরিস্থিতি ক্রমেই হুমকির মুখে পড়তে শুরু করেছে। নানাভাবে উদ্যোগ নিয়েও এই সংকটের সুরাহা না হওয়ায় হাজার কোটি টাকার প্রকল্পই কেবল ঝুলে পড়েনি, আগামী কিছুদিন পর যান চলাচলই মুখ থুবড়ে পড়বে বলে আশংকা প্রকাশ করা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেছেন, ২০১৬ সাল পর্যন্ত দেশে রেল লাইনের উপর সেতু নির্মাণকালে সেতুর উচ্চতা নির্দিষ্ট করা ছিল ৬.৫ মিটার বা ২১.৩২ ফুট। অর্থাৎ সেতু নির্মাণকালে রেললাইনের উপর থেকে সেতুর নিচের অংশে এ উচ্চতা ফাঁকা রাখতে হবে। ওই সময় যত প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছিল সবগুলোতেই ৬.৫ মিটারের উচ্চতা নিশ্চিত করা হয়। কিন্তু দুই বছরের ব্যবধানে ২০১৮ সালে এসে হুট করে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ সেতুর উচ্চতা নির্ধারণ করে ৭.৫ মিটার। এতে করে পুরোদেশে একটি জটিলতা তৈরি হয়। এই জটিলতার কোনো সুরাহা হওয়ার আগে দুই বছরের মাথায় ২০২০ সালে এসে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ সেতুর উচ্চতা নির্দিষ্ট করে দেয় ৮.৫ মিটার। আবারো একটি হুলস্থুল পড়ে। দেশের বিভিন্ন স্থানে অসংখ্য ব্রিজ এই উচ্চতার গ্যাঁড়াকলে আটকা পড়ে। একই গ্যাঁড়াকলে আটকা পড়ে ফৌজদারহাট- বায়েজিদ লিংক রোডের ফৌজদারহাট অংশের ওভারব্রিজটি। ২০১৮ সালে যখন ব্রিজটি নির্মাণের কার্যক্রম শুরু হয় তখন রেলওয়ের ব্রিজের উচ্চতা নির্দিষ্ট ছিল ৭.৫ মিটার। তখন ব্রিজটি নির্মাণে ৭.৬ মিটার উচ্চতা নিশ্চিত করে প্রকল্প গ্রহণ এবং কাজ শুরু করা হয়। এখন ব্রিজ নির্মাণের শেষ পর্যায়ে এসে রেলওয়ে ৮.৫ মিটার উচ্চতা নিশ্চিত করতে বলছে। এতে করে ব্রিজটির নির্মাণ কাজ ঝুলে গেছে, ঝুলে গেছে পুরো প্রকল্পের কাজ। প্রায় ৯০ শতাংশ কাজ শেষ করেও ব্রিজটির কাজ শেষ না হওয়ায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাটি পুরোদমে চালু করা যাচ্ছে না। সিডিএর পক্ষ থেকে ব্রিজটি ৭.৬ মিটার উচ্চতা রেখে নির্মাণ শেষ করার অনুরোধ জানিয়ে বলা হয়েছে আপাতত হলেও ব্রিজটি চালু করার অনুমোদন দেয়া হোক। ১০ বছর পর ব্রিজটি ভেঙে নতুন উচ্চতায় নির্মাণ করে দেয়া হবে। কিন্তু গত প্রায় দেড় বছর ধরে নানাভাবে চেষ্টা করেও ব্রিজটির অনুমোদন জুটেনি। এতে করে প্রকল্পটি কবে পুরোদমে চালু হবে তা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। পুরোদমে চালু না হওয়ায় কয়েকশ’ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত চট্টগ্রামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কটির সুফলই মিলছে না।
অপরদিকে পতেঙ্গা-ফৌজদারহাট আউটার রিং রোডের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ৩ নম্বর ফিডার রোডে সাগরিকা স্টেডিয়ামের পাশে রেল লাইনের উপর একটি ওভারব্রিজ রয়েছে। পণ্যবাহী রেলগাড়ি চলাচল করা উক্ত রেল লাইনের উপরও ব্রিজটি নির্মাণে উচ্চতা নিশ্চিত করতে গিয়ে সিডিএ বেকায়দায় পড়েছে। এই ব্রিজটিও ৭.৫ মিটার উচ্চতায় রেখে সিডিএ নির্মাণ শুরু করে। কিন্তু উচ্চতার গ্যাঁড়াকলে পড়ে ওভারব্রিজ নির্মাণসহ ফিডার রোড প্রকল্পটিই ঝুলে গেছে।
৩ নম্বর ফিডার রোড চালু না হওয়ায় লিংক রোডে চলাচলকারী বহু গাড়িকেই একে খান হয়ে সিটি গেট ঘুরে ফৌজদারহাট হয়ে লিংক রোডে চলাচল করতে হচ্ছে। ফিডার রোড চালু হলে এ সব গাড়ি সহজেই অলংকারের পাশ দিয়ে নগরীতে চলাচল করতে পারে। রাস্তাটি চালু না হওয়ায় টানেল চালু হওয়ার পর বড় ধরনের সংকট তৈরি হবে বলেও আশংকা প্রকাশ করা হয়েছে। একইভাবে ফৌজদারহাট বায়েজিদ লিংক রোডও পুরোদমে চালু না হওয়ায় টানেল চালুর পর যান চলাচল হুমকির মুখে পড়বে।
বিষয়টি নিয়ে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চিফ ইঞ্জিনিয়ার কাজী হাসান বিন শামস বলেন, চট্টগ্রামের দুইটি ব্রিজ রেলওয়ের কারণে আটকা পড়ে আছে। এটি স্রেফ রেলের কারণে আটকে গেছে। আমরা যখন প্রকল্পের কাজ শুরু করেছিলাম তখন রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের যেই আইন ছিল তা মেনেছি। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ নতুন করে যে উচ্চতা নিশ্চিত করতে বলছে তা পুরানো প্রকল্পগুলোর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য করতে গিয়ে সংকট সৃষ্টি করেছে। এই সংকট ক্রমে মারাত্মক পরিস্থিতি সৃষ্টি করবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
এই ব্যাপারে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের শীর্ষ একজন কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করা হলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে উচ্চ পর্যায়ে আলাপ আলোচনা চলছে। রেল লাইনের উপরে এবং স্টেশন এলাকায় ফুটওভার ব্রিজসহ যেসব ব্রিজ রয়েছে যেগুলোর উচ্চতা ২০১৬ সাল পর্যন্ত ৬.৫ মিটার ছিল। এ গুলো ৯ দশমিক ৫ মিটার করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে কন্টেনারবাহী ট্রেনে ডাবল কন্টেনার (টু হাই) পরিবহন করতে যেনো কোনো সমস্যা না হয় সে জন্য উচ্চতা বাড়ানো হচ্ছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবাংলাদেশ ব্যাংকের বিরুদ্ধে আরসিবিসির মামলা খারিজ
পরবর্তী নিবন্ধএসএসসি পরীক্ষা কবে, জানা যাবে রোববার