রেকর্ড ২১২ জনের মৃত্যু

৭৯ জনই খুলনা বিভাগের।। দেশে মৃতের সংখ্যা ১৬ হাজার ও রোগী ছাড়াল ১০ লাখ

| শনিবার , ১০ জুলাই, ২০২১ at ৬:৩৬ পূর্বাহ্ণ

এক দিনে রেকর্ড মৃত্যু বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা নিল ষোল হাজারে। একই দিনে দেশে শনাক্ত কোভিড রোগীর সংখ্যা ১০ লাখ ছাড়িয়ে গেল। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গতকাল শুক্রবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশে আরও ১১ হাজার ৩২৪ জনের মধ্যে করোনার সংক্রমণ ধরা পড়েছে। তাতে মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১০ লাখ ৫৪৩ জন। গত এক দিনে করোনায় আক্রান্তদের মধ্যে আরও ২১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের নিয়ে দেশে করোনায় মোট ১৬ হাজার ৪ জনের মৃত্যু হলো। খবর বিডিনিউজের।
দেশে করোনার প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়েছিল গত বছর ৮ মার্চ। তা ৯ লাখ পেরিয়ে যায় গত ২৯ জুন। সেই সংখ্যা ১০ লাখে পৌঁছাতে লাগল মাত্র ১০ দিন। মহামারীর ষোল মাসে এত কম সময়ে আর কখনও এত রোগী শনাক্ত হয়নি। মোট শনাক্ত ১০ লাখে পৌঁছানোর পথে বৃহস্পতিবার রেকর্ড ১১ হাজার ৬৫১ জনের মধ্যে করোনার সংক্রমণ ধরা পড়ে। প্রথম রোগী শনাক্তের ১০ দিন পর গত বছরের ১৮ মার্চ দেশে প্রথম মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এ বছর ৪ জুলাই তা ১৫ হাজার ছাড়ায়। সেই তালিকায় আরও এক হাজার নাম যুক্ত হলো মাত্র পাঁচ দিনে। এক কম সময়ে কোভিডে এত মৃত্যু বাংলাদেশকে আর দেখতে হয়নি। বিশ্বে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ইতোমধ্যে ১৮ কোটি ৫৬ লাখ ছাড়িয়েছে। ৪০ লাখের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে এ মহামারীতে। সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের ধাক্কা সামলে বাংলাদেশে দৈনিক শনাক্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা কিছুটা কমে এসেছিল মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে। কিন্তু করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ডেল্টার সামাজিক বিস্তার বা কমিউনিটি ট্রান্সমিশন ঘটায় জুনের শুরু থেকে দেশের বিভিন্ন এলাকায় সংক্রমণ ও মৃত্যু আবার বাড়তে শুরু করে।
ভাইরাসের বিস্তার নিয়ন্ত্রণে গত ৩০ জুন থেকে সারা দেশে জারি করা লকডাউনের বিধিনিষেধের মধ্যেই গত ৬ জুন প্রথমবারের মতো ১০ হাজার ছাড়িয়ে যায় শনাক্ত রোগীর সংখ্যা। সেদিন ১১ হাজার ৫২৫ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়ে। এরপর টানা চার দিন ধরেই দৈনিক শনাক্ত ১১ হাজারের উপরে রয়েছে। আর টানা ১২ দিন ধরে একশর বেশি মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। এর আগে গত ৭ জুলাই সর্বোচ্চ ২০১ জনের মৃত্যুর খবর দিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। বৃহস্পতিবার ১৯৯ জনের মৃত্যুর পরদিন তা বেড়ে ২১২ জনে দাঁড়াল।
গত এক দিনে কেবল ঢাকা বিভাগেই ৪৩১৩ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে, যা দিনের মোট শনাক্তের ৩৮ শতাংশের বেশি। চট্টগ্রাম বিভাগে এক দিনে শনাক্ত রোগী প্রায় দুই হাজারের কাছাকাছি, খুলনায় ছাড়িয়েছে দেড় হাজার। আর যে ২১২ জন গত এক দিনে মারা গেছেন তাদের ৭৯ জনই ছিলেন খুলনা বিভাগের বাসিন্দা। ঢাকা বিভাগে মৃত্যু হয়েছে ৫৩ জনের। সরকারি হিসাবে, আক্রান্তদের মধ্যে একদিনে আরও ৬ হাজার ৩৮ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন। তাদের নিয়ে মোট সুস্থ হয়েছেন ৮ লাখ ৬২ হাজার ৩৮৪ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ৬০৫টি ল্যাবে ৩৬ হাজার ৫৮৬টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এ পর্যন্ত পরীক্ষা হয়েছে ৬৯ লাখ ৩ হাজার ২৬৮টি নমুনা। ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে ৩০ দশমিক ৯৫ শতাংশ, আগের দিন যা ৩১ দশমিক ৬২ শতাংশ ছিল।
দেশে এ পর্যন্ত মোট শনাক্তের হার ১৪ দশমিক ৪৯ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৮৬ দশমিক ১৯ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৬০ শতাংশ। ঢাকা বিভাগের মধ্যে ঢাকা জেলায় ২ হাজার ৭৬৩ জন, ফরিদপুরে ১৭৬ জন, গাজীপুরে ২৩৪ জন, গোপালগঞ্জে ১১৩ জন, মাদারীপুরে ১৪৪ জন, নারায়ণগঞ্জে ২১৫ জন এবং টাঙ্গাইল জেলায় ২৯০ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে। চট্টগ্রাম বিভাগের মধ্যে চট্টগ্রাম জেলায় ৭৮৩ জন, কুমিল্লায় ৪২৮ জন, নোয়াখালীতে ১৪২ জন এবং কঙবাজারে ১৩৮ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে। রাজশাহী বিভাগের মধ্যে রাজশাহী জেলায় ২৬৩ জন, নাটোরে ২২৮ জন, পাবনায় ৩৪৮ জন, সিরাজগঞ্জে ১৩৩ জন এবং বগুড়ায় ১৭০ জন নতুন রোগী মিলেছে। খুলনা বিভাগের বাগেরহাটে ১৩৫ জন, চুয়াডাঙ্গায় ১৩৩ জন, যশোরে ৩৮৮ জন, ঝিনাইদহে ১৬২ জন, খুলনায় ২৯৬ জন এবং কুষ্টিয়ায় ২২০ জনের মধ্যে ধরা পড়েছে সংক্রমণ। রংপুর বিভাগের রংপুরে ২৩৪ জন, দিনাজপুরে ১২৩ জন, ঠাকুরগাঁওয়ে ১৫১ জন এবং গাইবান্ধায় ১১০ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে। এছাড়া অন্য বিভাগগুলোর মধ্যে সিলেট জেলায় ২৭৩ জন, বরিশাল জেলায় ১৩৮ জন, ময়মনসিংহ জেলায় ২৩৬ জন এবং শেরপুরে ১০০ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে গত এক দিনে।
গত এক দিনে ঢাকা বিভাগে যে ৫৩ জনের মৃত্যু হয়েছে, তাদের মধ্যে ২২০ জন ঢাকা জেলার। আর খুলনা বিভাগে মারা যাওয়া ৭৯ জনের মধ্যে ১৭ জন খুলনা এবং ১৫ জন করে ঝিনাইদহ ও কুষ্টিয়া জেলার বাসিন্দা ছিলেন। এছাড়া চট্টগ্রাম বিভাগে ২৬ জন, রাজশাহী বিভাগে ২৩ জন, বরিশাল বিভাগে ৫ জন, রংপুর বিভাগে ১২ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ৮ জন এবং সিলেট বিভাগে ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে গত ২৪ ঘণ্টায়।
মৃত ২১২ জনের মধ্যে ৯০ জনেরই বয়স ছিল ৬০ বছরের বেশি। ৫৬ জনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে, ৪০ জনের বয়স ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে, ১৭ জনের বয়স ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে, ৭ জনের বয়স ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে এবং ২ জনের বয়স ১১ থেকে ২১ বছরের মধ্যে ছিল। তাদের ১১৯ জন ছিলেন পুরুষ, ৯৩ জন ছিলেন নারী। ১৬০ জন সরকারি হাসপাতালে, ৩৬ জন বেসরকারি হাসপাতালে এবং ১৬ জন বাসায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকরোনা পরিস্থিতি পর্যালোচনায় চার সদস্যের বিভাগীয় টাস্কফোর্স
পরবর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামে আরও ১০ মৃত্যু শনাক্ত সর্বোচ্চ ৭৮৩