রাজস্ব না দেওয়া প্রতিষ্ঠানের তালিকা হচ্ছে

চসিকের সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্প ।। ছয়টির ভাগ্য নির্ধারণ আজ

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ৩০ জানুয়ারি, ২০২২ at ৫:২৭ পূর্বাহ্ণ

সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্পের আওতায় চুক্তিবদ্ধ যে সব প্রতিষ্ঠান নিয়মিত রাজস্ব পরিশোধ করছে না তাদের তালিকা করছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে এ তালিকা প্রস্তুত হওয়ার কথা রয়েছে। এরপর প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে চুক্তি বাতিল করবে চসিক।
এদিকে চুক্তিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ছয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ভাগ্য নির্ধারণ হবে আজ রোববার। চুক্তি অনুযায়ী কাজ না করায় এ ছয় প্রতিষ্ঠানের সাথে সম্পাদিত সাতটি চুক্তি বাতিলের সুপারিশ করেছে চসিকের ‘নগর পরিকল্পনা ও উন্নয়ন স্ট্যান্ডিং কমিটি’। গত ২৪ জানুয়ারি এ সুপারিশ করা হয়। এর প্রেক্ষিতে আজ অনুষ্ঠেয় সাধারণ সভায় প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে চুক্তি বাতিল করা হবে কিনা তার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হওয়ার কথা রয়েছে।
চসিক সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালের ২৮ ডিসেম্বর থেকে ২০২০ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত নগরে সৌন্দর্যবর্ধনে বিভিন্ন ঠিকদারি প্রতিষ্ঠানের ৪২টি চুক্তি করে সিটি কর্পোরেশন। ২০২০ সালের আগস্ট মাসে চসিকের আইন কর্মকর্তা মো. জসীম উদ্দিন সৌন্দর্যবর্ধন বিষয়ে একটি পর্যালোচনা প্রতিবেদন প্রস্তুত করেন। এতে চুক্তির শর্ত ভেঙে নকশাবহির্ভূত কোন কাজ বা স্থাপনা নির্মাণ করেছে কিনা তা সরেজমিন যাচাইয়ের সুপারিশ করা হয়। পরবর্তীতে অক্টোবর মাসে সরেজমিন পরিদর্শন করে চসিকের তৎকালীন প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মো. মুফিদুল আলম একটি প্রতিবেদন তৈরি করেন।
প্রতিবেদনটি পর্যালোচনা করে জানা গেছে, মাত্র ছয়টি প্রতিষ্ঠান চুক্তি মেনে কাজ করেছে। বাকি ৩৬টি প্রতিষ্ঠান কোন না কোনভাবে চুক্তি লঙ্ঘন করেছে। এর মধ্যে ১০টি প্রতিষ্ঠান দৃশ্যমান কোনো কাজই করেনি। এছাড়া কয়েকটি প্রতিষ্ঠান চুক্তিবর্হিভূতভাবে দোকান নির্মাণ করেছে ফুটপাতে।
পরবর্তীতে গত বছর ১৭টি প্রতিষ্ঠানকে চুক্তি মেনে কাজ করার তাগাদা দিয়ে চিঠি দেয়া হয় নগর পরিকল্পনা বিভাগ থেকে। ইতোমধ্যে কিছু প্রতিষ্ঠান কাজও করে। সর্বশেষ গত ২৪ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত চসিকের নগর পরিকল্পনা ও উন্নয়ন স্ট্যান্ডিং কমিটির সভায় চুক্তি অনুযায়ী কাজ না করা সাত প্রতিষ্ঠানকে চিহ্নিত করা হয়। কমিটি প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে চুক্তি বাতিলেরও সুপারিশ করে। এছাড়া একই বৈঠকে যেসব প্রতিষ্ঠান চুক্তি অনুযায়ী রাজস্ব পরিশোধ করছে না তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এর প্রেক্ষিতে রাজস্ব না দেয়া প্রতিষ্ঠানের তালিকা তৈরির জন্য নগর পরিকল্পনা শাখাকে ১৫ দিনের সময় নির্ধারণ করে দেয়া হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করে চসিকের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ স্থপতি আবদুল্লাহ আল ওমর দৈনিক আজাদীকে বলেন, চুক্তি মেনে কাজ না করা সাত প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি বাতিলের বিষয়ে সাধারণ সভায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। এর বাইরে যেসব প্রতিষ্ঠান চুক্তি মেনে রাজস্ব পরিশোধ করছে না বা চুক্তি অনুযায়ী কাজ করছে না তাদের তালিকা তৈরির সিদ্ধান্ত হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তালিকা প্রস্তুত করে জমা দিব।
‘নগর পরিকল্পনা ও উন্নয়ন স্ট্যান্ডিং কমিটি’র সভাপতি ও ১৩ নং পাহাড়তলী ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোহাম্মদ ওয়াসিম উদ্দিন চৌধুরী দৈনিক আজাদীকে বলেন, চুক্তি লঙ্ঘন করা সাতটি প্রতিষ্ঠানের তালিকা মেয়র মহোদয়কে আমরা জমা দিয়েছি। সেখানে প্রতিষ্ঠানগুলো কী কী লঙ্ঘন করেছে তা বিস্তারিত উল্লেখ করেছি। এখন মেয়র মহোদয় সর্বোচ্চ অথরিটি হিসেবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিবেন।
চুক্তি না মানা ছয় প্রতিষ্ঠান : চুক্তি মেনে কাজ না করা ছয় প্রতিষ্ঠান হচ্ছে এঙটেনসিভ মিডিয়া, এবি কর্পোরেশন, চিটাগং খুলশি ক্লাব লিমিটেড, মিডিয়া ট্রেন্ডস, লিরা আর্ট ও আইকনিক সাইন।
সংশ্লিস্ট সূত্রে জানা গেছে, এঙটেনসিভ মিডিয়ার সাথে দুটি চুক্তি হয়েছে। এর মধ্যে ২০২০ সালের ২২ জুন একটি এবং ২০২০ সালের ২৩ জানুয়ারি অপর চুক্তি করে। চুক্তির আওতায় দুই নম্বর গেইট থেকে অঙিজেন মোড় পর্যন্ত মিড আইল্যান্ড, রাস্তার উভয়পাশ ফুটপাত ও গোল চত্বরসমূহ এবং সল্টগোলা ক্রসিং থেকে শাহীন গলফ ক্লাব পর্যন্ত মিড আইল্যান্ড ও রাস্তার উভয়পাশ ল্যান্ডস্কেপিং, সবুজায়ন ও আলোকায়ন করার কথা। চুক্তি লঙ্ঘন করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
নগর পরিকল্পনা ও উন্নয়ন স্ট্যান্ডিং কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী, এবি কর্পোরেশনের সাথে চসিকের চুক্তি হয় ২০১৯ সালের ১ জানুয়ারি। চুক্তি অনুযায়ী কাস্টম মোড় থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত ১৪টি যাত্রী ছাউনি করার কথা। প্রতিষ্ঠানটিও চুক্তি লঙ্ঘন করেছে। তবে রাজস্ব শাখার প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠানটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে ২০১৮ সালের ১ অক্টোবর। প্রতিষ্ঠানটির করা যাত্রী ছাউনিগুলো নিম্নমানের বলে রাজস্ব শাখার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
২০১৭ সালের ১৩ ডিসেম্বর চুক্তি করে চিটাগং খুলশি ক্লাব লিমিটেড। চুক্তি অনুযায়ী ফয়’স লেক এপ্রোচ সড়কের আইল্যান্ডে সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্পের কাজ করার কথা থাকলেও করেনি প্রতিষ্ঠানটি।
দুই নম্বর গেইট মোড়, শেখ ফরিদ মার্কেটের কর্নার থেকে এস.এ.পরিবহন কর্নার পর্যন্ত আধুনিকায়ন ও নাগরিক সুবিধার উন্নয়নে ২০২০ সালে চুক্তি করে মিডিয়া ট্রেন্ডস। প্রতিষ্ঠানটিও চুক্তি অনুযায়ী কাজ করেনি।
ঈদগাঁহ কাঁচা রাস্তা থেকে অলংকার মোড় পর্যন্ত ফুটপাত ও মিডআইল্যান্ড সৌন্দর্যবর্ধনে ২০১৯ সালের নভেম্বর মাসে চুক্তি করে লিরা আর্ট। প্রতিষ্ঠানটিও চুক্তি লঙ্ঘন করেছে। একই বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে চুক্তি করে আইকনিক সাইন। চুক্তি অনুযায়ী, ২নং গেইট মোড়ের পূর্ব পাশ, বহদ্দারহাট পুলিশ বঙের পশ্চিমে, চকবাজার প্যারেড কর্নারের উত্তর-পশ্চিম কর্নারে যাত্রী ছাউনি নির্মাণ ও ফুটপাতে সৌন্দর্যবর্ধন করার কথা আইকনিক সাইনের। যার কোন কাজ বাস্তবায়ন হয়নি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধডোপ টেস্ট ছাড়া মিলবে না ড্রাইভিং লাইসেন্স
পরবর্তী নিবন্ধবিএনপি দেশদ্রোহী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত