রাউজানে উদ্ধার তরুণীর হত্যা রহস্য উদঘাটন

৫১ দিন পর মিলল পরিচয়, গ্রেপ্তার ৩

রাউজান প্রতিনিধি | বুধবার , ১২ জানুয়ারি, ২০২২ at ৫:৫০ পূর্বাহ্ণ

রাউজানের নোয়াপাড়া-অলিমিয়াহাট পূর্বগুজরা সিকদার ঘাটার কাছে সড়কের পাশ থেকে গত ২০ নভেম্বর উদ্ধার করা তরুণীকে হত্যা করা হয়েছিল। ৫১ দিন পর মিলল লাশের পরিচয়। এছাড়া খুনের রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। খুনের সাথে জড়িত তিনজনকে গ্রেপ্তারও করেছে।
রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল হারুন জানান, রাউজান সিকদারটেক থেকে ২০ নভেম্বর উদ্ধার করা লাশটি ছিল কক্সবাজার জেলার কুতুবদিয়াপাড়ার নুর হোসেনের কন্যা আমেনা আক্তার রাহি প্রকাশ শারমিনের। জানা গেছে, তিনি স্থানীয় কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলেন। পুলিশের একটি টিম খুনের সাথে জড়িত তিনজনের অবস্থান শনাক্ত করে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে। ওই টিমে ওসিও ছিলেন।
ওসি বলেন, বিয়ে প্রলোভনে ফেলে শারমিনকে ধর্ষণ করেছিল তারই গ্রামের আবদুস শুক্কুরের পুত্র নুরুল ইসলাম। ধর্ষিতার গর্ভে সন্তান এলে চাপ প্রয়োগ করে গর্ভপাত ঘটায়। এতে ক্ষুব্ধ শারমিন ২০১৯ সালের ১১ নভেম্বর ধর্ষকের বিরুদ্ধে কক্সবাজার সদর থানায় এজাহার দায়ের করেছিলেন নারী শিশু নির্যাতন দমন আইনে। ওই মামলায় নুরুল ইসলাম গ্রেপ্তার হয়েছিল। পরে জামিনে এসে আগের ঘটনা ভুলে যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে শারমিন ও তার পরিবারকে অনুরোধ করেছিল মামলাটি প্রত্যাহার করে নিতে।
এতে যুবতীর পরিবার রাজি না হলে ধর্ষক ফাঁদে আটকায় শারমিনকে। বিয়ে করার আশ্বাস দিয়ে তাকে নিয়ে ১১ নভেম্বর চট্টগ্রাম শহরে আসে। চট্টগ্রামে এসে দুজন উঠে লালদীঘির পাড়ের হোটেল গোল্ডেন সিটিতে। শারমিনকে নিয়ে বিভিন্ন স্থানে বেড়াতে যেত নুরুল ইসলাম। তাকে হত্যা করতে বন্ধু আকতার হোসেনের সাথে পরিকল্পনা করে। দুজনের এই পরিকল্পনায় অংশীদার করে তাদের পূর্বপরিচিত টেক্সিচালক মেহেরাজ হোসেন মিরাজকে।

এরপর তিনজন মিলে ১৮ নভেম্বর শারমিনকে নিয়ে কাপ্তাই যায়। তাদের পরিকল্পনা ছিল শারমিনকে বেড়াতে নিয়ে নিরিবিলি কোনো স্থানে হত্যা করে ফেলে আসবে। কিন্তু ওইদিন এই ধরনের পরিবেশ না পেয়ে ফিরে যায় হোটেলে। পরদিন যায় রাঙ্গুনিয়ার চন্দ্রঘোনায়। সারা দিন ঘোরাঘুরি করে ফিরছিল শহরের দিকে। তাদের বহনকারী মিরাজের টেক্সিটি রাউজানের মুহামুনি পাহাড়তলীতে পৌঁছে। তখন রাত প্রায় আটটা। ওই এলাকার নিরিবিলি ফাঁকা জায়গায় এলে নুরুল ইসলাম শারমিনের গলা চেপে ধরে। সে গলায় থাকা ওড়না টেনে পেঁচিয়ে ধরলে ওড়নার অপর প্রান্ত থেকে টেনে ধরে আকতার হোসেন। দুদিকে টেনে ধরা ওড়নায় শ্বাসরুদ্ধ হয়ে গাড়িতেই মারা যান শারমিন।
মৃত্যু নিশ্চিত করে তারা সুযোগ খুঁজে লাশ ফেলার। এখানকার পথঘাটের সাথে পরিচিত চালক মিরাজ। সে গাড়িটি নোয়াপাড়া পথেরহাটের উত্তর দিকে থাকা অলিমিয়াহাট রাস্তায় চালাতে শুরু করে। পথেরহাট থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার ভেতরে গিয়ে নিরিবিলি রাস্তার পাশে শারমিনের দেহ ফেলে চলে যায়।

রাউজান থানার ওসি বলেন, গ্রেপ্তার তিনজন হলো কক্সবাজারের কুতুবদিয়া পাড়ার আবদুস শুক্কুরের পুত্র নুরুল ইসলাম প্রকাশ বাদশা (২৪), নগরীর লালখান বাজার শহীদের গ্যারেজের ঠিকানায় বসবাসকারী ভোলা জেলার মনপুরা দক্ষিণ সাকোরচিয়া গ্রামের মৃত গোলাম হোসেনের পুত্র আকতার হোসেন (৩৫) ও রাউজানের উরকিরচর জিয়া বাজারে বক্কর কলোনিতে বসবাসকারী নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার দক্ষিণ আদর্শ গ্রামের জসিম মাঝি বাড়ির রাশেদ মিয়ার পুত্র মেহেরাজ প্রকাশ মিরাজ (২৩)। গতকাল তাদের আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকৌতুক কণিকা
পরবর্তী নিবন্ধদুর্গম পাহাড় জয়ী দুঃসাহসিক বাইকার তাহমিদ (ভিডিও সহ)