দুর্গম পাহাড় জয়ী দুঃসাহসিক বাইকার তাহমিদ (ভিডিও সহ)

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ১২ জানুয়ারি, ২০২২ at ৫:৫০ পূর্বাহ্ণ

২৮০ মিটার উচ্চতার আঁকা-বাঁকা যে পাহাড় থেকে নামতে একজন মানুষের কয়েক ঘণ্টা সময় লাগার কথা সেই পাহাড় থেকে সাইকেল নিয়ে দিব্যি ৫-৬ মিনিটে নেমে আসছে এক মাউন্টেইন বাইকার। দৃশ্যটি বাইরের কোন দেশের নয়। এটি চট্টগ্রাম নগরীর টাইগার পাস এলাকার বাটালি হিলের। আর যার হাতে এই বাহনের দায়িত্ব সে দুঃসাহসী তরুণ হচ্ছে ২০১৯ সালে নেপালে অনুষ্ঠিত সাউথ এশিয়ান গেমস ডাউন হিল বাইকিংয়ে বাংলাদেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করা ফটিকছড়ির তাহমিদ আহমেদ চৌধুরী।
২০২০ সালে ফটিকছড়ি ভূজপুর থানার দাঁতমারা নিচিন্তা এলাকার আহমেদ আবু রাহাত চৌধুরী ও নুরুন্নেচ্ছা বেগমের ঘরে জন্ম নেওয়া তাহমিদ আহমেদ চৌধুরী একজন বাক ও শ্রবণপ্রতিবন্ধী। সব বাধা পেরিয়ে যিনি ছুটছেন স্বপ্নজয়ের পথে। তাহমিদের মা নুরুন্নেচ্ছা বেগম দৈনিক আজাদীকে বলেন, নগরীর একটি স্কুলে ৭ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছিল তাহমিদ। ২০১২ সালের দিকে ফেসবুক ও ইউটিউবে মাউন্টেন বাইকিং ভিডিও দেখে সাইকেল নিয়ে আগ্রহ সৃষ্টি হয়। সেই থেকে এমন মাউন্টেন বাইকিং নিয়ে রেকর্ড গড়ার নেশা তার মাথায় এসে চাপে। পরে সে ২০১৬ সালের দিকে সাইকেল নিয়ে চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে রাইড দেওয়া শুরু করে একটি সাইক্লিং কমিউনিটি গ্রুপের মাধ্যমে।
একসময় তাহমিদ এমটিবি সাইকেল দিয়ে সাইক্লিংয়ের কসরতগুলো টিমের মেম্বারদের সঙ্গে চর্চা শুরু করে। ধীরে ধীরে সাইকেলের কসরতের প্রাথমিক স্কিলগুলো তার আয়ত্বে চলে আসে। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রোগ্রাম উপলক্ষে টিমের সাথে তার সাইকেল দিয়ে অর্জিত কসরত প্রদর্শন করা হতো জনসম্মুখে। ২০১৮ সালে ফটিকছড়ির হাজারীখীলের একটি পাহাড়ে এমটিবি এন্ডুরো রেস আয়োজন করেছিল, সেই রেইসে ৪০ জন প্রতিযোগির মধ্যে তাহমিদ তৃতীয় স্থান অধিকার করেছিল। এটিই তার প্রথম অর্জন। পরবর্তী কয়েকটি রেস ইভেন্টে ধারাবাহিকভাবে প্রথম ও দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছিল। ২০১৯ সালে নেপালে অনুষ্ঠিত সাউথ এশিয়ান গেমসে বাংলাদেশের হয়ে প্রথম ডাউনহিলে অংশগ্রহণ করেছিল। সেখানে ইনজুরির মধ্যেও অংশগ্রহণ করে অষ্টম হয়েছিল। এমটিবি বাংলাদেশ এন্ডোরো চ্যাম্পিয়শিপ বাংলাদেশ-২০২১ প্রথম হয়েছিল তাহমিদ।
পাহাড়ি উঁচু পথে এত দ্রুত ঝুঁকি নিয়ে নামার বিষয়ে তাহমিদ অঙ্গিভঙ্গির মাধ্যমে আজাদীকে বলেন, শুরু থেকেই উচ্চতাকে আমার কোন ভয় লাগেনা। তাহমিদ বলে, বিদেশে এ ধরনের খেলার জন্য যে সুযোগ-সুবিধা ও পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়া হয় তা আমাদের ক্ষেত্রে নেই বললেই চলে। এ ধরনের প্রতিযোগিতায় একটি ভালো সাইকেলের দাম ৮-১০ লাখ টাকা পড়ে। যা একটি মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য খুই ব্যয়বহুল। তাই চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থা যদি পৃষ্ঠপোষকতায় এগিয়ে আসে তাহলে আমাদের মতো আরও তরুণ এ খেলায় উৎসাহিত হবে।
তাহমিদের সহযোদ্ধা মাউন্টেন বাইকার আহসান হাবীব বলেন, আমরা মূলত প্রেকটিসের জন্য নগরীর বাটালি হিল, বায়েজিদের আরেফিন নগর পাগাড়, ২নং গেট মুক্তিযোদ্ধা পাহাড় ব্যবহার করে থাকি। তবে সবখানে নির্দিষ্ট ট্র্যাক থাকলে আমাদের জন্য সুবিধার। হাবীব বলেন, আমরা সবসময় তাহমিদের রাইডিং স্কিলগুলো দেখে অনুপ্রাণিত হই এবং দারুণ উপভোগ করি। তার অনেক প্রতিবন্ধকতা থাকা সত্ত্বেও সে একজন সাধারণ মানুষের মতই চলাফেরা করতে পছন্দ করে।

ভিডিও দেখতে ক্লিক করুন এই লিংকে :
https://www.facebook.com/DainikAzadi/videos/229229852707873

পূর্ববর্তী নিবন্ধরাউজানে উদ্ধার তরুণীর হত্যা রহস্য উদঘাটন
পরবর্তী নিবন্ধটেকনাফে সাড়ে ১০ কোটি টাকার আইস উদ্ধার