রমজানের আগে অস্থির চিনির বাজার

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ at ৮:০৫ পূর্বাহ্ণ

দীর্ঘদিন স্থিতিশীল থাকার পর আবারও অস্থির চিনির বাজার। গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে চিনির দাম বেড়েছে মণপ্রতি ৭০ টাকা। রমজানের আগে চিনির বাজার ফের বৃদ্ধির কারণে ভোক্তাদের কপালে ভাঁজ পড়তে শুরু করেছে। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরকার গত বছরের চিনির আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশ কমানোয় দাম কমে যায়। কিন্তু সম্প্রতি আবার আন্তর্জাতিক বাজারে দরবৃদ্ধির ফলে দর উঠানামা করছে।
খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে পাইকারিতে প্রতি মণ (৩৭ দশমিক ৩২ কেজি) চিনি বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৬৯০ টাকা। গত দুই সপ্তাহ আগে যা ছিল ২ হাজার ৬২০ টাকা।
জানতে চাইলে খাতুনগঞ্জের একজন চিনি ব্যবসায়ী বলেন, বর্তমানে চিনির বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে দেশের শীর্ষ দুই ব্যবসায়ী গ্রুপ। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়েছে এটি যেমন ঠিক, আবার চিনির বাজারে সরকারের তেমন নিয়ন্ত্রণ নেই এটিও ঠিক। চিনির বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের উচিত হবে রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিকলগুলোকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে গড়ে তোলা।
অন্যদিকে খাতুনগঞ্জের কয়েকজন চিনি ব্যবসায়ী জানান, খাতুনগঞ্জের বাজারে পণ্য বেচাকেনা ও লেনদেনে যুগ যুগ ধরে কিছু প্রথা চালু আছে। নিজেদের সুবিধার অনেক প্রথা আছে যেগুলো আবার আইনগতভাবেও স্বীকৃত নয়। এরমধ্যে অন্যতম হচ্ছে ডেলিভারি অর্ডার (ডিও) স্লিপ। চিনি কিংবা অন্য কোনো পণ্য কেনাবেচায় ডিও বেচাকেনার মাধ্যমে আগাম লেনদেন হচ্ছে। দেখা যায়, পণ্য হাতে না পেলেও ওই স্লিপটিই বেচাকেনা হচ্ছে। কোনো কোম্পানি বাজার থেকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ পণ্যের ডিও কিনে নেয়। যে দরে ডিও কেনা হয়, তার বাজার দর যদি বেড়ে যায়, তখন পণ্যটি ডেলিভারি দিতে তারা গড়িমসি করে। আবার দেখা যায়, কোম্পানির পণ্যই আসেনি কিন্তু ডিও কিনে রেখেছেন অনেক বেশি। এর ফলেও কোম্পানি বাজারে পণ্য ডেলিভারি দিতে পারে না। ফলে এ সব পণ্যের দামও নিয়ন্ত্রণে থাকে না। এক্ষেত্রে চিনির ডিও বেচাকেনা বেশি হয়।
চাক্তাই খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন দৈনিক আজাদীকে বলেন, গত দুই সপ্তাহ ধরে চিনির বাজার ওঠানামা করছে। আসলে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়লে সেটি আমাদের দেশের বাজারে প্রভাব পড়ে। দাম বাড়লে অনেকে সিন্ডিকেট কারসাজির অভিযোগ তুলে। প্রকৃতপক্ষে চিনির বাজারে সিন্ডিকেট কারসাজি বলে কিছু নেই। আন্তর্জাতিক বাজার কমে গেলে দাম এমনিতে কমে যাবে।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন দৈনিক আজাদীকে বলেন, চিনির বাজার নিয়ে কারসাজির ঘটনা নতুন কিছু নয়। তবে প্রশাসনের যেভাবে নজরদারি হওয়ার সেভাবে হচ্ছে না। প্রশাসনের নজরদারির অভাবেই ব্যবসায়ীরা কৃত্রিম সংকট তৈরি করার সুযোগ পাচ্ছেন। আসলে আমাদের দেশে গুটিকয়েক চিনি আমদানিকারক আছেন। তারা নির্দিষ্ট কিছু ডিস্ট্রিবিউটরের মাধ্যমে চিনি বিক্রি করতেন। এ ভাবে চিনির বাজারটা পুরোপুরি তাদের দখলে চলে যায়। বর্তমান বাজারে সরকারি চিনিকলগুলোর চিনি পাওয়া যাচ্ছে না। এছাড়া সরকারি চিনিকলগুলোর বিপণন অব্যবস্থাপনার কারণে বেসরকারি চিনির আমদানিকারকরা কারসাজি করার সুযোগ পাচ্ছেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএবার রেলের অস্থায়ী ১৯শ গেট কিপারের আমরণ অনশনের ঘোষণা
পরবর্তী নিবন্ধতিনটি ট্রলারসহ ৮৮ জেলে আটক