রক্ষা কি পাবে শতবছরের পুকুরটি?

দিনের বেলাতেই করা হচ্ছে ভরাট চকরিয়া পৌরসভার মুন্সিপাড়া

চকরিয়া প্রতিনিধি | শুক্রবার , ১০ মার্চ, ২০২৩ at ৫:০৮ পূর্বাহ্ণ

কক্সবাজারের চকরিয়া পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বায়তুশ শরফ সড়কের মুন্সিপাড়ায় শতবছর আগে খনন করা হয়েছিল একটি পুকুর। এক একর ১৬ শতাংশ জায়গাজুড়ে খনন করা পুকুরটিই হয়ে উঠে এলাকাবাসীর নিত্য ব্যবহার্য্যের একমাত্র মাধ্যম। এমনকি কোনো বাড়িতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে নেভানোর জন্য এই পুকুরের পানিই একমাত্র ভরসা। কিন্তু সড়কের পাশ দিয়ে মাটি ফেলে শতবছরের পুরোনো এই পুকুরটি ভরাট কাজ শুরু হয়েছে। এমনকি স্থায়ীভাবে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার জন্য সেখানে স্তুপ করা হয়েছে ইটও। এই অবস্থায় আশপাশের অন্তত পাঁচ শতাধিক পরিবারের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তারা অবিলম্বে শতবছরের ঐতিহ্যগত এই পুকুরটি রক্ষার দাবি জানিয়েছেন প্রশাসনের প্রতি।

এ ব্যাপারে স্থানীয় বাসিন্দাদের পক্ষে মৃত আনোয়ারুল ইসলাম চৌধুরী বাবু মিয়ার পুত্র আনোয়ারুল মোহসীন বাদী হয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন গতকাল বৃহস্পতিবার। স্থানীয় ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. মুজিবুল হক পুকুরটি ভরাট করছেন অভিযোগ করে আনোয়ারুল মোহসীন দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘এই এলাকায় আর কোনো পুকুর অবশিষ্ট নেই। তাই পুকুরটি সংরক্ষণ করাসহ মানুষের নিত্যকাজে ব্যবহারের সুবিধার্থে বর্তমান পৌরমেয়র আলমগীর চৌধুরী তিন পাড়ে তিনটি পাকা ঘাটও নির্মাণ করে দিয়েছিলেন।’

সরজমিন গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে দেখা গেছেপুকুরটির বায়তুশ শরফ সড়কটির পাশ ধরে ডাম্পার গাড়িতে করে মাটি এনে ফেলা হচ্ছে পুকুরে। সেই মাটির ওপর স্তুপ করে রাখা হচ্ছে ইটও। স্থানীয় বাসিন্দা ও চকরিয়া পৌরসভা আওয়ামী লীগের সাবেক জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মো. ওয়ালিদ মিল্টন দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘ডাম্পারভর্তি করে মাটি এনে ফেলার সময় পৌর কাউন্সিলর মুজিবুল হককে বাধা দেন স্থানীয়রা। এ সময় উভয়পক্ষের লোকজনের মধ্যে তুমুল বাগ্‌বিতণ্ডাও হয়। এ সময় স্থানীয় ভুক্তভোগী লোকজনের মাঝে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।’

তিনি বলেন, ‘ভূমি আইনে স্পষ্ট করে বলা হয়েছেকোনও জমির শ্রেণী পরিবর্তন করতে হলে তা যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে অনুমতি নিতে হবে। কিন্তু তা না করে শতবছরের পুকুরটি ভরাট করার খবরে এলাকাবাসীর মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। এমনকি পুকুরটি ভরাট করলে ভবিষ্যতে কোনও বাড়িতে আগুন লাগলে নেভানোর জন্য পানিও পাওয়া যাবে না। তাই প্রশাসন পুকুর ভরাট কাজ বন্ধ করতে এগিয়ে না আসলে যে কোনও মুহূর্তে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা রয়েছে।’

তবে পুকুর ভরাট করছেন না বলে দাবি করেছেন অভিযুক্ত পৌর কাউন্সিলর মুজিবুল হক। তিনি বলেন, ‘সামনে বর্ষা শুরু হবে। তাই ভারি বর্ষণের সময় পুকুর পাড়ের সড়কটি দেবে যাওয়ার আশঙ্কা থাকায় সেখানে মাটি ফেলা হচ্ছে। তাছাড়া পুকুরটির সিংহভাগ অংশ পৈত্রিকসূত্রে আমার প্রাপ্ত সম্পত্তি।’ শ্রেণী পরিবর্তন করার অনুমতি রয়েছে কীনা জানতে চাইলে তিনি কোনও সদুত্তর দেননি।

এ ব্যাপারে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেপি দেওয়ান দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘স্থানীয়দের পক্ষ থেকে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। পুকুর ভরাটের মাধ্যমে যে বা যারা শ্রেণী পরিবর্তন করার কাজ করছে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। একইসাথে অপসারণ করার কাজ শুরু করা হবে পুকুরে ফেলা মাটি ও স্তুপ করা ইট। এই বিষয়ে কোনো ধরণের ছাড় দেওয়া হবে না।’

পূর্ববর্তী নিবন্ধপুঁজিবাজারে স্বস্তির সপ্তাহ
পরবর্তী নিবন্ধনগরীর কোনো সড়ক কাঁচা থাকবে না : মেয়র