যান চলাচলের অযোগ্য পায়ে হাঁটাও দায়

খানাখন্দ ও পানিতে সয়লাব সিডিএ বলছে- ড্রেন না থাকায় দুর্দশা

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ৫ আগস্ট, ২০২২ at ৭:০৮ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামের ভিআইপি রোড খ্যাত বিমানবন্দর সড়কের অবস্থা নাজুক হয়ে উঠেছে। আগ্রাবাদ থেকে শুরু করে সিমেন্ট ক্রসিং পর্যন্ত রাস্তাটির বিভিন্ন অংশ যান চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। ইপিজেড থেকে বন্দরটিলা পর্যন্ত এলাকায় রাস্তাটির বিভিন্ন অংশ বিলীন হয়ে গেছে। খানাখন্দকে ভরে গেছে পুরো রাস্তা। বর্ষণ এবং ব্যবহার্য পানিতে সয়লাব হয়ে থাকা রাস্তাটির বিভিন্ন অংশ দিয়ে যান চলাচল দূরের কথা, পায়ে হাঁটার অবস্থাও নেই। শহরের প্রধান সড়কটির বেহাল দশায় এলাকাবাসীর পাশাপাশি নগরবাসীর দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে।

সিডিএ বলেছে, রাস্তার পাশে কোনো ধরনের ড্রেন না থাকায় বিভিন্ন বাসা বাড়ি এবং দোকানপাটের ব্যবহৃত পানি রাস্তায় জমা হয়। পাশাপাশি জোয়ারের পানিতেও রাস্তাটির অবস্থা প্রতিদিনই শোচনীয় হয়ে উঠছে।

সূত্র জানিয়েছে, প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সন্নিকটস্থ টানেল রোড পর্যন্ত ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে। এই ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজকে কেন্দ্র করে নগরীর প্রধান সড়কটির অবস্থা অত্যন্ত বেহাল হয়ে উঠেছে। এলিভেটেড এঙপ্রেসওয়ের নির্মাণ কাজ পাঁচটি পৃথক ভাগে ভাগ করে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এই কাজের সুবিধার জন্য যেখানে পাইলিং এবং পিলার নির্মাণের কাজ চলছে সেখানে রাস্তার মাঝের বিশ ফুটেরও বেশি অংশ ঘিরে ফেলা হয়েছে। ঘেরা দেয়া অংশের দুই পাশে দুই লেন করে মোট চার লেনের গাড়ি চলাচলের ব্যবস্থা রাখতে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশনা দেয়া হয়। পুলিশের নির্দেশনায় শহরের অত্যন্ত ব্যস্ত রাস্তাটির বিভিন্ন এলাকায় রাস্তা সম্প্রসারণ করা হয়েছে। কিন্তু বেহাল দশার কারণে রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। কাঠগড় থেকে সল্টগোলা ক্রসিং পর্যন্ত এলাকায় পিলার নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ হয়েছে। এলিভেটেড এঙপ্রেসওয়ের কাঠগড় অংশে গার্ডার স্থাপন এবং গার্ডারের উপর রাস্তা তৈরির কাজও প্রায় শেষ পর্যায়ে। ফ্লাইওভারের উপরের অংশে রাস্তা তৈরির কাজ দ্রুততার সাথে এগুলেও নিচে রাস্তাটির অস্তিত্ব ক্রমে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। নগরীর বন্দরটিলা এলাকায় রাস্তার অস্তিত্ব নেই বললেই চলে। বন্দরটিলা থেকে ইপিজেড এবং মাইলের মাথা থেকে সল্টগোলা ক্রসিং পর্যন্ত প্রায় চার কিলোমিটার এলাকা যান চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে।

কাঠগড় এলাকায় বসবাসকারী শাহরিয়ার হোসেন গতকাল দৈনিক আজাদীকে বলেন, অবস্থা খুবই ভয়াবহ। এই রাস্তাটি দিয়ে প্রতিদিন আসা যাওয়া করতে শুধু গাড়িই নয়, মানুষের শরীরও বিগড়ে যাচ্ছে। একটি বেসরকারি কর্পোরেট হাউজের নির্বাহী শাহরিয়ার রাস্তাটির ব্যাপারে উদসীনতা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
বিষয়টি নিয়ে সিডিএর এলিভেটেড এঙপ্রেসওয়ের প্রকল্প পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মাহফুজুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, সিমেন্ট ক্রসিং থেকে সল্টগোলা ক্রসিং পর্যন্ত গত বিশ বছরে কোনো ড্রেন নির্মাণ করা হয়নি। এতে করে রাস্তাটিতে পর্যাপ্ত ড্রেনেজ সিস্টেমই নেই। মানুষের বাসা বাড়ি এবং অফিস আদালতের ব্যবহার্য পানি সরাসরি চলে আসে রাস্তায়। আবার উল্টো জোয়ারের পানিও সকাল বিকেল প্লাবিত করে রাস্তাটিকে। রাস্তাটির পাশে একেবারে সরু একটি ড্রেন থাকলেও ওয়াসার পাইপ লাইনে সেটি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে রয়েছে। ফলে রাস্তা থেকে পানি সরার কোনো পথই নেই। ইঞ্জিনিয়ার মাহফুজুর রহমান বলেন,
রাস্তাটিতে সবসময়ই হয় বাসা বাড়ির পানি অথবা জোয়ারের পানি কিংবা বৃষ্টির পানি থাকে। এতে করে আমরা চেষ্টা করেও রাস্তাটি রক্ষা করতে পারছি না।

দফায় দফায় মেকাডম দিয়েও রক্ষা করা সম্ভব হয়নি বলেও তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ড্রেন নির্মাণ না করা পর্যন্ত রাস্তাটির এই বেহাল দশা থাকবে।
এলিভেটেড এঙপ্রেসওয়ে প্রকল্পে ড্রেন নির্মাণের কোনো কাজ না থাকলেও রাস্তাটির দুইপাশে বড় করে ড্রেন নির্মাণ করে দেয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি। ড্রেনের কাজ শেষ করার পরই রাস্তা কার্পেটিং করে দেয়া হবে। ড্রেন করার আগে রাস্তা কার্পেটিং করা যাচ্ছে না বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, পানির একটি ব্যবস্থা করা না গেলে রাস্তা টিকিয়ে রাখা কঠিন হবে। তাই আমরা আগে ড্রেন নির্মাণ করছি। তিনি আগামী কিছুদিনের মধ্যে রাস্তাটির সমস্যার একটি স্থায়ী সমাধান হবে বলেও মন্তব্য করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদুর্ঘটনা এড়াতে রেলগেট ‘অটোমেশনের’ পরামর্শ সংসদীয় কমিটির
পরবর্তী নিবন্ধসিকান্দার আবু জাফর: বাঙালি জাতীয়তাবাদের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক