‘যত জ্বালা আঁরা মধ্যবিত্তর’

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ৩০ জুন, ২০২১ at ৬:৩৪ পূর্বাহ্ণ

‘করাকরি কি উদ বাস আর টেক্সির লাই না? হাজার হাজার রিকশে চলের। মোটরসাইকেল চলের, প্রাইভেট গারি চলের। এডে স্বাস্থ্যর বারটা ন বাজের? দুজনর জাগাত তিনজন, কার, মাইক্রুত ৫ জন/১০ জন যাদ্দে পুলিশর সামনে দি, খই, ধরতে ত ন দেইলাম। আঁরা যারা মধ্যবিত্ত, যত জ্বালা আঁরার। হয় অফিসত আঁডি য, নইলি বেশি ভারা দি রিকশাত গরি য।’ গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে লাঞ্চ আওয়ারে আক্ষেপের সাথে কথাগুলো বলছিলেন প্রায় ৬০ বছর বয়সী মোহাম্মদ শাহীন উদ্দিন। অফিস খোলা রেখে গণপরিহন বন্ধ রাখায় অফিস যাত্রী অন্য অনেকের মতো গতকাল দুর্ভোগে পড়েন তিনি। তার বাসা চকবাজার। চাকরি করেন সদরঘাটে একটি বেসরকারি অফিসে। সকালে তিনি বাসা থেকে রিকশায় আসেন আন্দরকিল্লা মোড়ে। সেখান থেকে শেয়ারে রিকশায় আসেন কোতোয়ালীর মোড়। সেখান থেকে হেঁটে অফিস। তার যে বেতন তাতে তিনি চিন্তিত, অফিস শেষে বাসায় ফিরবেন কীভাবে? রিকশা ছাড়া উপায় নেই। অপেক্ষা করছিলেন যদি শেয়ারে যাওয়া যায়। সেটা সম্ভব না হলে এই বয়সে হেঁটেই বাসায় যাবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি বলেন, সরকার খোলা রাখা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে তার কর্মচারীদের ট্রান্সপোর্টের ব্যবস্থা করতে বললেও আমাদের অফিস তা করেনি। চাকরি করতে হলে যেকোনো উপায়ে অফিসে আসতে হবে। শাহীন উদ্দিনের মতো দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে চট্টগ্রামের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষকে। সোমবার থেকে সীমিত লকডাউন শুরুর পর দলে দলে লোকজন চট্টগ্রাম শহর ছাড়ছে। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় ব্যক্তিগত কিংবা ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেলে, কখনো ট্রাক কিংবা পিকআপে চেপে একাধিক আরোহীকে গ্রামে ফিরতে দেখা গেছে। এমনকি কর্মস্থলে যেতেও কর্মজীবীরা ভাড়ায় মোটরসাইকেলে চড়েছেন। গতকালসহ গত দুদিনে নগরীর শাহ আমানত সেতু, নিউ মার্কেট মোড়, টাইগারপাস মোড়সহ বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে এ দৃশ্য চোখে পড়ছে। শাহ আমানত সেতু এলাকা থেকে অনেকেই বিভিন্ন উপজেলায় যাচ্ছেন মোটরসাইকেলে। আবার সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন অফিস ও কলকারখানায় কর্মরতদের গণপরিবহন না থাকায় সকালে রিকশার পাশাপাশি মোটরসাইকেলে চড়তে দেখা গেছে। মাঝে মধ্যে একটি-দুটি বাসের দেখা মিললে হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন লোকজন।
পশ্চিম মাদারবাড়ী থেকে মোটরসাইকেলে জামালখানে আসা এনজিও কর্মকর্তা মো. মারুফ আজাদীকে বলেন, মাদারবাড়ী থেকে জামালখান পর্যন্ত রিকশা ভাড়া চায় ১০০ টাকা। আমি ৭০ টাকা দিয়ে মোটরসাইকেলে এসেছি। চালক আমিসহ দুজন নিয়েছিলেন। রিকশা থেকে কম সময়ের মধ্যে এসেছি। এখন গণপরিবহনও বন্ধ, রিকশার ভাড়াও বেশি। মোটরসাইকেলে ওঠা যাবে না। তাহলে আমরা অফিসে যাব কীভাবে?
বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা শিমুল সেন আজাদীকে বলেন, লকডাউন, অথচ সীমিত পরিসরে খোলা সরকারি-বেসরকারি অফিস ও পোশাক কারখানা। আবার বন্ধ রয়েছে অধিকাংশ গণপরিবহনও। ফলে সকাল থেকে অফিসগামী মানুষকে পোহাতে হয়েছে দুর্ভোগ। নগরীর মোড়ে মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় অফিসগামী যাত্রীদের। এটা কারো কাম্য নয়।
শারমিন আখতার নামে এক যাত্রী জানান, সীমিত আকারে অফিস খোলা রেখেছে, কিন্তু যাতায়াতের ব্যবস্থা নেই। রাস্তায় নামলেই যাত্রীদের দুর্ভোগের শেষ নেই।
গতকাল নগরী ঘুরে দেখা গেছে, আগের দিনের তুলনায় রিকশা, মোটরসাইকেল, প্রাইভেট গাড়ি চলছে দেদারছে। সকালে কম থাকলেও বেলা বাড়ার সাথে সাথে বাড়তে থাকে এসব যান। ফুটপাতে রয়েছে সাধারণ মানুষের চলাচল। তবে যান ও পথচারী চলাচল নিয়ন্ত্রণে তৎপর ছিলেন পুলিশ সদস্যরাও। কয়েকটি স্থানে পুলিশের তল্লাশি চৌকিতে যানবাহন আটক করতে দেখা গেছে।
লকডাউন ঘোষণার পর রাইড শেয়ারিং কোম্পানি উবার ও পাঠাও তাদের যাত্রী পরিবহন বন্ধ রেখেছে। জনপ্রিয় এ দুটি রাইড শেয়ারিং কোম্পানি তাদের সেবা বন্ধ রাখলেও থেমে নেই মোটরসাইকেলে যাত্রী পরিবহন। অ্যাপের পরিবর্তে এখন ‘খ্যাপে’ চলছে যাত্রী পরিবহন। এ নিয়ে পুলিশের কড়াকড়ি অবস্থান থাকলেও চোখ ফাঁকি দিয়েই চলছে সেবাটি। সাধারণ যাত্রীদের অভিযোগ, অ্যাপের চেয়ে চুক্তিতে মোটরসাইকেল চালকরা কয়েক গুণ বেশি টাকা আদায় করছেন। এছাড়া গণপরিবহন বন্ধের সুযোগও তারা নিচ্ছেন। এতে বাধ্য হয়ে তাদের দাবিকৃত ভাড়া পরিশোধ করতে হচ্ছে যাত্রীদের।
প্রাইভেট গাড়ির কথা বলতে গেলে, তারা ফুরফুরে আমেজে গাড়ি চালাচ্ছেন। নগরীর ব্যস্ত সড়কে সবচেয়ে বেশি লক্ষণীয় রিকশা। বাসের জায়াগা দখল করা রিকশা এখন প্রতিটি সড়কেই চলছে।
আবুল হাসান নামের এক ব্যবসায়ী মুরাদপুর রেলগেট যাবেন রেয়াজউদ্দিন বাজার তিন পোলের মাথা থেকে। রিকশাওয়ালা ভাড়া দাবি করেন ১০০ টাকা। এখানে স্বাভাবিক সময়ে ৬০-৭০ টাকা ভাড়া নেওয়া হয়।
প্রসঙ্গত, ২৮ জুন থেকে সীমিত পরিসরে তিন দিনের লকডাউন ঘোষণা করে সরকার। প্রজ্ঞাপনে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে নিজ নিজ অফিসের ব্যবস্থাপনায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আনা-নেওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করা হলেও হাতে গোনা দু-একটি প্রতিষ্ঠান ছাড়া কাউকে এ নির্দেশনা মানতে দেখা যায়নি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদেশে শনাক্ত রোগী ছাড়াল ৯ লাখ
পরবর্তী নিবন্ধজুলাই থেকে গণটিকা শুরু : প্রধানমন্ত্রী