মোট নম্বর ২০০, পেল ২১৮!

দুপুরে প্রাপ্ত নম্বর পাল্টে গেল সন্ধ্যায়

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ at ৫:২২ পূর্বাহ্ণ

এবার (২০২১ সালে) তিনটি বিষয়ে পরীক্ষায় বসতে হয়েছে এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের। গ্রুপ ভিত্তিক যে তিনটি বিষয়ে পরীক্ষা দিতে হয়েছে, এর প্রতিটিতে দুটি করে পত্র রয়েছে। প্রতি পত্রে একশ করে দুটি পত্র মিলে একটি বিষয়ে মোট নম্বর (মার্কস) ২০০। অর্থাৎ একটি বিষয়ে ২০০ নম্বরের মধ্য থেকেই শিক্ষার্থীদের নম্বর দেয়া হয়। কিন্তু মোট নম্বর ২০০ হলেও দুই পত্র মিলে একটি বিষয়ে দুইশ’র বেশি নম্বরও পেয়েছে একাধিক শিক্ষার্থী। এক বিষয়ে ২১৮ নম্বর পাওয়া একাধিক শিক্ষার্থীর নম্বর ফর্দ আজাদীর হাতে এসেছে। গতকাল প্রকাশিত চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের এইচএসসির ফলাফলে এমন ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া দুপুরে ফল প্রকাশের পরপর ওয়েবসাইটে পাওয়া নম্বর ফর্দে প্রাপ্ত নম্বর সন্ধ্যা গড়াতেই পাল্টে গেছে। উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের বড় একটি অংশের ক্ষেত্রে এই নম্বর পাল্টে যাওয়ার ঘটনা ঘটে। প্রকাশিত ফলাফলে এমন হ-য-ব-র-ল অবস্থায় উদ্বিগ্ন হয়ে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অভিভাবকরা। চট্টগ্রাম কলেজের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এবার এইচএসসি উত্তীর্ণ এক শিক্ষার্থীর নম্বর ফর্দে দেখা যায়, পদার্থ বিজ্ঞানে মোট ২০০ নম্বরের মধ্যে ওই শিক্ষার্থীর প্রাপ্ত নম্বর লেখা রয়েছে ২১৮! একই ঘটনা ঘটেছে উচ্চতর গণিতের বেলায়ও। আরো একাধিক শিক্ষার্থীর নম্বর ফর্দেও এমন অস্বাভাবিক বেশি নম্বর দেখা গেছে।
চট্টগ্রাম কলেজেরই অপর এক শিক্ষার্থীর দুটি নম্বর ফর্দে একই বিষয়ে প্রাপ্ত নম্বরে গড়মিল দেখা গেছে। তার একটি নম্বর ফর্দে উচ্চতর গণিতে ২০০ নম্বরের মধ্যে প্রাপ্ত নম্বর দেখা যায় ১৯৪। অপর নম্বর ফর্দে একই বিষয়ে প্রাপ্ত নম্বর কমে হয়েছে ১৮৪! আরেকজন শিক্ষার্থী ও তার অভিভাবক জানিয়েছেন, দুপুরে ফল প্রকাশের পরপরই শিক্ষাবোর্ডের ওয়েবসাইটে পাওয়া নম্বর ফর্দে উচ্চতর গণিতে প্রাপ্ত নম্বর হিসেবে ১৮৫ দেখায়। কিন্তু বিকেলে ওয়েবসাইট থেকে প্রিন্ট করা অপর নম্বর ফর্দে একই বিষয়ের (উচ্চতর গণিতে) প্রাপ্ত নম্বর কমে গেছে। কারো কারো ক্ষেত্রে এ নম্বর আবার বেড়ে গেছে বলেও অনেক শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা জানিয়েছেন। এ ধরণের বহু নম্বর ফর্দ আজাদীর হাতে এসেছে। কোনো কোনো নম্বর ফর্দে আবার প্রাপ্ত নম্বর ‘এ প্লাসের’ হলেও গ্রেড দেখাচ্ছে ‘এ মাইনাস। এইচএসসির মতো পাবলিক পরীক্ষার ফলাফলে এমন হ-য-ব-র-ল অবস্থা দেখে যারপরনাই ক্ষুব্ধ মহিউদ্দিন নামে এক অভিভাবক। শিক্ষাবোর্ডের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অদক্ষতা ও অব্যবস্থাপনার কারণেই এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করেন তিনি। মহিউদ্দিনের মতো আরো একাধিক অভিভাবক এ নিয়ে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
ফলাফলে এমন ভুলের কথা স্বীকার করেছেন চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নারায়ণ চন্দ্র নাথ। তার দাবি, তিনজন শিক্ষার্থীর ক্ষেত্রে এক বিষয়ে ২০০ নম্বরের স্থলে এর বেশি নম্বর দেখা গেছে। এর একটি হয়েছে প্রধান পরীক্ষকের ভুলের কারণে। বাকি দুই শিক্ষার্থীর নম্বর ফর্দে ভুলের জন্য বুয়েটের প্রোগ্রামের দুর্বলতাকেই দায়ী করছেন পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক।
অন্যদিকে, দুপুরে প্রাপ্ত নম্বর সন্ধ্যায় পাল্টে যাওয়ার কারণ হিসেবে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বলছেন, দুপুরে ফল প্রকাশের পর পরীক্ষায় অনুপস্থিত শিক্ষার্থীদের নম্বরও ওয়েবসাইটে দেখাচ্ছিল। কিন্তু আমরা চাচ্ছিলাম না, অনুপস্থিত শিক্ষার্থীদের নম্বর দেখা যাক। আমাদের নজরে আসার পর অনুপস্থিত শিক্ষার্থীদের নম্বর দেখানো বন্ধ করার প্রক্রিয়া শুরু হয়। সেটি বন্ধ করতে গিয়েই কম্পিউটারের প্রোগ্রামের ভুলে এমন অবস্থার তৈরি হয়। তবে সন্ধ্যার পর সব ঠিক হয়েছে দাবি করে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নারায়ণ চন্দ্র নাথ বলেন, দুপুরে শিক্ষার্থীরা প্রথম যে নম্বর ফর্দটি পেয়েছে সেটি-ই সঠিক। সন্ধ্যার পর সব ঠিক করা হয়েছে। এখন আগের নম্বরই দেখা যাবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআজ বসন্তের আমন্ত্রণে
পরবর্তী নিবন্ধসাফল্য ধরে রেখেছে মেয়েরা