মেজর (অব:) সিনহা হত্যা মামলার রায় আজ

সবার দৃষ্টি কক্সবাজারের দিকে

কক্সবাজার প্রতিনিধি | সোমবার , ৩১ জানুয়ারি, ২০২২ at ৬:২৬ পূর্বাহ্ণ

হত্যাকাণ্ডের দেড়বছরের মাথায় দেশের বহুল আলোচিত মেজর (অবসরপ্রাপ্ত ) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করা হচ্ছে আজ সোমবার (৩১ জানুয়ারি)। কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল আজ সকাল ১০টায় রায় পাঠ শুরু করবেন এবং এ উপলক্ষে ইতোমধ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে বলে জানান পাবলিক প্রসিকিউটর ফরিদুল আলম।
তিনি বলেন, সারা দেশবাসীর চোখ আজ এ রায়ের দিকে। সবাই চায় এই বর্বর হত্যাকাণ্ডের একটি কঠোর ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি যেন হয়। আর আমরা রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরাও সাক্ষ্য-প্রমাণের মাধ্যমে সন্দেহাতীতভাবে হত্যাকারীদের অপরাধ প্রমাণে সক্ষম হয়েছি।
২০২০ সালের ৩১ জুলাই ঈদুল আযহার আগের রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের টেকনাফের বাহারছড়ার এপিবিএন চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে খুন হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা রাশেদ খান। ঘটনার শুরুতে পুলিশ এ ঘটনাকে ‘ক্রসফায়ার’ হিসেবে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। এরই অংশ হিসেবে মেজর সিনহা ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে পুলিশ বাদী হয়ে তিনটি (টেকনাফে দুটি ও রামুতে একটি) মামলা দায়ের করে। এ নিয়ে সর্বত্র সমালোচনার ঝড় উঠলে ঘটনার ৫দিন পর ৫ আগস্ট সেনা প্রধান ও পুলিশ প্রধান কক্সবাজারে এসে সভা করেন এবং ওইদিনই নিহত সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বাদী হয়ে বাহারছড়া পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের তৎকালীন ইনচার্জ পরিদর্শক লিয়াকত আলীকে প্রধান আসামি এবং টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ সহ নয় পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করেন। এ মামলার পর ঘটনার মোড় ঘুরে যায়। চারটি মামলা তদন্তের দায়িত্ব পায় র‌্যাব। প্রথমদিকে র‌্যাব-১৫এর সহকারী পুলিশ সুপার জামিল আহমদকে এ সব মামলা তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হলেও সপ্তাহখানেক পর এ মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. খায়রুল ইসলামকে নিয়োগ দেওয়া হয়। এরপর চার মাসের বেশি সময় ধরে চলা তদন্তের পর একই বছরের ১৩ ডিসেম্বর ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট জমা দেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা।
ওসি প্রদীপের আইনজীবী রানা দাশ গুপ্ত বলেন, ওসি প্রদীপ এই হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে কিছুই অবহিত নন। ষড়যন্ত্রমূলক ভাবে তাকে এই মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। আসামিপক্ষের এই আইনজীবী বলেন, ‘এই হত্যার সাথে ওসি প্রদীপ জড়িত ছিলেন তা প্রমাণে ব্যর্থ হয়েছে রাষ্ট্র ও বাদীপক্ষ।’ ন্যায়বিচার না পেলে উচ্চ আদালতে যাবেন বলে জানান তিনি।
মামলায় অভিযুক্ত আসামিরা হলেন- বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের তৎকালীন পরিদর্শক লিয়াকত আলী, টেকনাফ থানার বরখাস্ত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, দেহরক্ষী রুবেল শর্মা, বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের বরখাস্ত উপপরিদর্শক (এসআই) নন্দদুলাল রক্ষিত, বরখাস্ত কনস্টেবল সাফানুর করিম, কামাল হোসেন ও আব্দুল্লাহ আল মামুন, বরখাস্ত সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) লিটন মিয়া, বরখাস্ত কনস্টেবল সাগর দেব, বরখাস্ত এপিবিএনের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. শাহজাহান, বরখাস্ত কনস্টেবল মো. রাজীব ও মো. আবদুল্লাহ, টেকনাফ থানায় পুলিশের দায়ের করা মামলার সাক্ষী টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুরের মারিশবুনিয়া গ্রামের নুরুল আমিন, মো. নেজামুদ্দিন ও আয়াজ উদ্দিন। অভিযোগপত্রে সিনহা হত্যাকাণ্ডকে একটি ‘পরিকল্পিত ঘটনা’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। গত ২৭ জুন ১৫ আসামির বিরুদ্ধে মামলাটির বিচারের জন্য অভিযোগ গঠন করা হয়। এরপর গত ২৩ আগস্ট থেকে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইলের আদালতে সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণ এবং জেরা শুরু হয়ে গত ১ ডিসেম্বর শেষ হয়। যেখানে ৬৫ জন সাক্ষী সাক্ষ্য দিয়েছেন। সর্বশেষ আদালত ৯ জানুয়ারি থেকে ১২ জানুয়ারি চারদিনে উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে ৩১ জানুয়ারি রায়ের তারিখ ঘোষণা করেন। রায় ঘোষণাকালে কারাগারে আটক মামলার ১৫ আসামিকেও আজ আদালতে হাজির করা হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসিনহার হত্যাকারীদের ‘সর্বোচ্চ শাস্তি’ চান শিপ্রা
পরবর্তী নিবন্ধব্যবসায়িক পার্টনারের লোভনীয় অফারে প্রতারণা