মেগা প্রকল্পের বাইরে থাকা খাল নালার তালিকা সংগ্রহের সিদ্ধান্ত

দ্বৈততা এড়াতে চায় চসিক জলাবদ্ধতা নিয়ে মেয়রের জরুরি বৈঠক

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ২৪ ডিসেম্বর, ২০২১ at ৫:৪০ পূর্বাহ্ণ

নগরে ৫৭টি খাল রয়েছে। যার মোট দৈর্ঘ্য ১৬৩ দশমিক ৫০ কিলোমিটার। এর বাইরে ৯৭২ কিলোমিটার নালা রয়েছে। বিপরীতে জলাবদ্ধতা নিরসনে চলমান মেগা প্রকল্পের আওতায় ৩৬টি খাল এবং ৩০২ নালা সংস্কারের কাজ করছে সিডিএ। অর্থাৎ ২১ টি খাল এবং ৬৭০ কিলোমিটার নালা মেগা প্রকল্পের বাইরে রয়ে গেছে। যা দীর্ঘদিন ধরে খনন, পরিষ্কার বা সংস্কার করা হয়নি। ফলে মেগা প্রকল্পের কাজ চলমান থাকার মধ্যেই গত কয়েক বছর তীব্র জলাবদ্ধতার কবলে পড়ে নগরবাসী। এদিকে ৪১ ওয়ার্ডের ৫৯৮ টি খাল-নালার তালিকা করে গত ১১ ডিসেম্বর থেকে খনন কার্যক্রম শুরু করে চসিক। এরি মধ্যে চসিক জানতে পারে, সিডিএ মেগা প্রকল্পের ডিপিপি পুনর্গঠন করছে, যেখানে বাদ থাকা ২১ খালের কয়েকটি এবং আরো কিছু শাখা খালকেও অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। ফলে চসিক যে সব খালে খনন কার্যক্রম শুরু করেছে সেগুলো সিডিএর পুনর্গঠিত ডিপিপি-তে অন্তর্ভুক্ত থাকলে ‘ডুপ্লিকেশন’ (দ্বৈততা) হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়।
এ অবস্থায় করণীয় ঠিক করতে গতকাল দুপুরে টাইগারপাসস্থ নগর ভবনের অস্থায়ী কার্যালয়ে জরুরি বৈঠকে বসেন সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। এতে দ্বৈততা এড়াতে সিডিএর কাছ থেকে মেগা প্রকল্পের বাইরে থাকা খাল-নালার তালিকা সংগ্রহের সিদ্ধান্ত হয়েছে। বৈঠকে চসিকের প্রধান প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলাম মেয়রকে আশ্বস্ত করেন, আগামী রোববার তালিকাটি সংগ্রহ করা হবে। এ বিষয়ে সিডিএর সঙ্গে ইতোমধ্যে মৌখিক আলাপ হয়েছে বলেও জানান তিনি। অনির্ধারিত ওই বৈঠকে চসিকের তত্ত্বাবধায়ক ও নির্বাহী প্রকৌশলীগণের পাশাপাশি পরিচ্ছন্ন বিভাগের কর্মকর্তারা অংশ নেন।
বৈঠকে উপস্থিত একাধিক প্রকৌশলী দৈনিক আজাদী বলেন, মেগা প্রকল্পের আওতায় অনেকগুলো নালার সংস্কার করা হয় এবং ওইসব নালায় স্ল্যাবও বসিয়ে দেয়া হয়েছে। তবে ওইসব নালার বেশিরভাগ ইতোমধ্যে ভরাট হয়ে গেছে। ওসব নালা চসিককে হস্তান্তর করেনি সিডিএ। তাই সেখানে পরিচ্ছন্ন কাজ চালানোর এখতেয়ার নাই চসিকের। ভরাট থাকা এসব নালাও জলাবদ্ধতার কারণ হয়ে উঠেছে। এ অবস্থায় নালাগুলো কোন উপায়ে পরিষ্কার করা হবে সেটা নিয়েও সভায় প্রশ্ন উঠে। এ বিষয়েও সিডিএর সঙ্গে আলোচনার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
কয়েকজন প্রকৌশলী মেয়রকে জানান, আভ্যন্তরীণ খাল-নালা পরিষ্কার করছে চসিক। কিন্তু প্রধান খালগুলোর মুখে সিডিএ বাধ দিয়ে রেখেছে। ফলে আভ্যন্তরীণ খাল থেকে পানি গিয়ে প্রধান খালে বাধাগ্রস্ত হয়। এ বিষয়টির সমাধান না হলে চসিক খাল খনন করলেও জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি মিলবে না। বিষয়গুলো নিয়েও সিডিএর সঙ্গে আলোচনার সিদ্ধান্ত হয়েছে সভায়।
জানতে চাইলে বৈঠকে উপস্থিত চসিকের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) সুদীপ বসাক দৈনিক আজাদীকে বলেন, মেয়র মহোদয়ের নির্দেশে ইতোমধ্যে আমরা খাল-নালা পরিষ্কার ও খনন কাজ শুরু করেছি। মেগা প্রকল্পবহির্ভূত খাল-নালার তালিকা পেলে কাজে আরো গতি বাড়ানো হবে।
বৈঠকে উপস্থিত উপ-প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা মোরশেদুল আলম চৌধুরী আজাদীকে বলেন, চলমান কাজ আরো গতিশীল করার নির্দেশ দিয়েছেন মেয়র মহোদয়। আগামী বর্ষায় নগরবাসী যেন কষ্ট না পায় তার জন্য এখন থেকে কাজে গতি বাড়াতে বলেছেন।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে ব্যাপক আকারে খাল-নালা খনন করেছিল চসিক। বর্ষাকে সামনে রেখে ওই বছরের ৭ জানুয়ারি খনন শুরু হয়েছিল। একই বছরের ৫ মার্চ জলাবদ্ধতা নিরসনে গৃহীত মেগা প্রকল্পের জিও (গভর্নমেন্ট অর্ডার) পায় চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। এরপর খনন কার্যক্রম স্থগিত করে দেয় চসিক। পরবর্তীতে নগরের খালগুলো মেগা প্রকল্পের আওতায় সিডিএ খনন করবে, এমন অজুহাতে খনন কাজ থেকে নিজেদের বিরত রাখে চসিক। দীর্ঘ সাড়ে তিন বছর পর গত ১১ ডিসেম্বর থেকে খনন শুরু করলেও দ্বৈততা নিয়ে জটিলতা শুরু হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ‘হতাশা’ থেকে সিএনজি চালকের আত্মহত্যা
পরবর্তী নিবন্ধওয়াসার স্যুয়ারেজ প্রকল্প ও ফিডার রোড নিয়ে জটিলতার অবসান